শেষ আপডেট: 11th August 2024 08:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'দেয়া নেয়া' ছবির জন্য গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার একটি অসামান্য গান লিখেছিলেন, 'মাধবীর মধুপে হল মিতালি!' সে গানের মাদকতা যেন আজও ছড়িয়ে রয়েছে বাঙালির মনে।
কিন্তু শনিবার রাত থেকে যে মাধবীকে নিয়ে তোলপাড় পড়ে গেল, তাতে কোনও মাদকতা নেই। বরং আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে এই মাধবীর মিতালি এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে হইহই পড়ে গেছে শিল্পমহল থেকে ঘরোয়া রাজনীতিতে।
ভারতে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হল সেবি (Securities and Exchange Board of India - SEBI)। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীনে এই সংস্থা একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। সাধারণ গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা করে চলার মহা দায়িত্ব রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের উপর। অথচ বর্তমানে এই সেবির চেয়ারম্যান মাধবী বুচের (Madhabi Buch) বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তুলেছে মার্কিন শর্ট সেলিং সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ (Hindenberg research) । তাঁদের দাবি, আদানি গোষ্ঠীর (Gautam Adani – Adani Group) বিরুদ্ধে তদন্তের ব্যাপারে বিষ্ময়কর ভাবে নিষ্ক্রিয় সেবি। এবং খোঁজ করে জানা গেছে, এই মাধবী বুচ ও তাঁর স্বামী ধবল বুচের (madhabi puri buch husband) বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে বিদেশে আদানি গোষ্ঠীর ভুয়ো সংস্থায়। ভারতে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য যে সব ভুয়ো সংস্থায় টাকা পাচার করা হয়েছে বেআইনি লেনদেনের মাধ্যমে।
মাধবী বুচের পড়াশুনা ও পেশাগত ক্যারিয়ার ইর্ষা করার মতই। ৬৬ সালে তাঁর জন্ম হয় মুম্বইতে। অঙ্ক নিয়ে পড়াশুনা করেন। তার পর আইআইএম আমদাবাদ থেকে এমবিএ পাশ করেন। ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। সেই বছর আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে যোগ দেন তিনি।
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করেন মাধবী। পরে ২০০৯ সালে আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজের সিইও হয়ে যান তিনি।
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক ছাড়ার পর সাংহাইয়ের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কে যোগ দেন মাধবী। পরে প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম গ্রেটার পেসিফিক ক্যাপিটালের সিঙ্গাপুর শাখা পরিচালনের দায়িত্ব পান।
পরে ভারতে ফিরে এসে আইডিয়া সেলুলার এবং এনআইআইটি লিমিটেডের নন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে যোগ দেন। এর পর ২০১৭ সালে সেবির পূর্ণ সময়ের সদস্য হিসাবে নিয়োগ করা হয় মাধবী বুচকে। পরে ২০২২ সালে সেবির চেয়ারপার্সন হন মাধবী।
২০২২ সালে সেবির চেয়ারম্যান পদে মাধবীর নিয়োগটাই ছিল ঐতিহাসিক মাইলফলক। কারণ সেই প্রথম কোনও মহিলা সেবির চেয়ারম্যান হলেন। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসাবে মাধবী প্রায় সবটাই দেখতেন। কিন্তু এবার তাঁর ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেল। কারণ, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ।
মাধবীর স্বামী ধবল বুচও প্রতিষ্ঠিত পেশাদার। মাধবীর মতো তাঁর কেরিয়ার উজ্জ্বল না হলেও খুব কম নয়। তবে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাঁর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
শনিবার সকালে হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছিল, ভারতে ফের বিরাট কিছু ঘটতে চলেছে। তার পরই ভারতীয় সময়ের বেশ রাতের দিকে সেই বোমা আছড়ে পড়ে!
গত বছর জানুয়ারি মাসে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টেই দাবি করা হয়েছিল, আদানি কীভাবে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে ভুয়ো কোম্পানি খুলে টাকা সরিয়েছে। সেই অভিযোগের তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছিল সেবির উপর। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ ছিল।
শনিবার হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট ঠারেঠোরে বোঝাতে চেয়েছে যে সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। যাঁর উপর তদন্ত ভার, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর তলে তলে আঁতাত রয়েছে তা নয়, বাণিজ্যিক স্বার্থেও জড়িয়ে রয়েছেন মাধবী।
হিন্ডেনবার্গ এদিন বলেছে, তাদের রিপোর্ট প্রকাশের পর ১৮ মাস কেটে গেছে। অথচ আদানির অসদাচরণ এবং মরিশাস ও বিদেশে অন্যান্য ভুয়ো কোম্পানিতে তাদের লেনদেনের ব্যাপারে সেবি বিষ্ময়কর ভাবেই কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
হিন্ডেনবার্গের দাবি, মাধবী বুচ ও তাঁর স্বামী ধবল বুচ মরিশাস ও বারমুডার এমন সব ভুয়ো বিদেশি সংস্থায় বিনিয়োগ করে রেখেছেন যাদের সঙ্গে গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির প্রত্যক্ষ যোগ ছিল। এই সব বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০১৫ সালে। তার পর ২০১৭ সালে সেবির পূর্ণ সময়ের সদস্য হিসাবে নিয়োগ করা হয় মাধবীকে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে মাধবী সেবির সদস্য হওয়ার ঠিক আগে এই সব বিদেশি কোম্পানিতে স্ত্রীর সমস্ত বিনিয়োগ নিজের নামে করে নেন তাঁর স্বামী। যাতে মাধবীকে নিয়ে কোনও স্ক্রুটিনি হলে প্রশ্ন না ওঠে। হিন্ডেবার্গের দাবি, এই সব বিনিয়োগ এমন ভাবে করা হয়েছিল যাতে বহু স্তর ছিল এবং জটিলতাও ছিল। তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন।
এখানেই থামেনি হিন্ডেনবার্গ। তাদের দাবি, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট সংস্থার ব্যাপারে মাধবীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই সংস্থা ব্ল্যাকস্টোন নামে একটি কোম্পানিকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল, যাতে তাঁর স্বামী ছিলেন পরামর্শদাতা।
হিন্ডেনবার্গের এই রিপোর্ট হাতিয়ার করে রবিবার থেকে হইহই করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। এখন দেখার আদানি গোষ্ঠী বা মাধবী বুচ এ ব্যাপারে কী প্রতিক্রিয়া জানায়।
Here is our statement on the latest Hindenberg revelations
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) August 10, 2024
Quis Custodiet Ipsos
Custodies pic.twitter.com/D1wGN2uJop