শেষ আপডেট: 16th September 2024 16:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে দিচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২০১৫ থেকে দু-দফায় টানা মুখ্যমন্ত্রী তিনি। মদকাণ্ডে প্রায় ছয়মাস মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জেলে কাটিয়ে আসা কেজরিওয়ালের কারামুক্তির পর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে নানা জল্পনা আছে।
বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সোমবার তিনি আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের আরও জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। হিসাব মতো দিল্লি বিধানসভার ভোট হওয়ার কথা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। কেজরিওয়াল চান, আগামী নভেম্বরে মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড বিধানসভার সঙ্গেই দিল্লিতেও ভোট হোক। কমিশন এই দাবি মেনে নিলে সেক্ষেত্রে নতুন মুখ্যমন্ত্রী আড়াই মাসের জন্য দায়িত্ব নেবেন। আপ ফের ক্ষমতায় এলে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই পরিস্থিতিতে আম আদমি পার্টির মধ্যে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে কেজরিওয়াল কাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করতে চান। দল ও প্রশাসনে ভূমিকার মানদণ্ডে বাকি সকলের থেকে এগিয়ে মন্ত্রী আতিশী। তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী। একই সঙ্গে দল ও প্রশাসনিক বিষয়ে তিনিই সংবাদমহলে আপের মুখ। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে দিল্লি সরকারের অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দায়িত্ব জেলবন্দি কেজরিওয়াল দিয়েছিলেন মন্ত্রিসভার একমাত্র মহিলা সদস্যকেই।
কেজরিওয়ালের স্বল্পকালীন উত্তরসূরি হিসাবে নাম আছে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা গোপাল রাইয়ের। তিনি আপের জন্মলগ্ন থেকে দলের সামনের সারির নেতা। বলা হয় রাই হলেন কেজরিওয়ালের দ্বিতীয় মনীশ সিসোদিয়া। আলোচনায় আছে আর এক মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজের নামও। বিবেচনায় আছে কৈলাশ গেহলট, ইমরান হোসেনের নামও।এছাড়া বিধায়ক রাখি বিড়লার নাম বিবেচনায় আছে। তিনি একজন দলিত বিধায়ক। মহিলা এবং দলিত অঙ্কে তাঁর নাম বিবেচনায় আছে।
আপ সূত্রে খবর দলের বেশিরভাগ নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদ এই তিনজনের কারও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করলেও কেজরিওয়াল পত্নী সুনিতাকেও তাঁরা ফেন্সিংয়ের বাইরে রাখছেন না। কেজরিওয়াল জেলে যাওয়ার পর তিনিও দলের মুখ হয়ে উঠেছেন। নভেম্বরে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আনা হলে সুনিতার মুখ্যমন্ত্রী হতে বিধায়ক হওয়ার দরকার হবে না। কারণ, বিধানসভার সদস্যপদ ছাড়াও ছয়মাস মন্ত্রী থাকা যায়। তিনি এখন হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরে প্রচার চালাচ্ছেন। লোকসভা ভোটেও সুনিতাকে সামনে রেখে লড়াই করে আপ। এমনকী ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ জনসভাগুলিতেও দলের তরফে ভাষণ দেন সুনিতা। স্বভাবতই তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
কেজরিওয়াল ও সুনিতা বিয়ের আগে থেকে সহকর্মী ছিলেন। দু’জনেই ভারতীয় রাজস্ব সার্ভিসের প্রাক্তন অফিসার। দু’জনেই দীর্ঘ সময় আয়কর বিভাগের উঁচু পদে চাকরি করেছেন। কেজরিওয়াল ২০১০-এ চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন। সুনিতা স্বেচ্ছা অবসর নেন ২০১৬-তে। কেজরিওয়াল গ্রেফতারের আগে তিনি রাজনীতির প্রকাশ্য অঙ্গনে সেভাবে না থাকলেও দলের দৈনন্দিন কাজে যুক্ত ছিলেন।
এখন জল্পনার বিষয় হল লালুপ্রসাদের মতো কেজরিওয়ালও স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি এগিয়ে দেবেন কিনা। আড়াই দশক আগে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালুপ্রসাদ যাদব গ্রেফতার হওয়ার আগে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী করে দেন। তার আগে বিহারের নেতাও কেজরিওয়ালের মতো নানাভাবে গ্রেফতারি এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী করেন।
যদিও রাবড়ি দেবীর সঙ্গে কেজরিওয়াল পত্নী সুনিতার বিস্তর ফারাক আছে। লালুপত্নী ছিলেন ছাপোষা গৃহবধূ। ভোজপুরি ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানতেন না। নতুন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে সরকারি প্রেস রিলিজে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় লেখা ছিল ‘শি ইজ এডুকেটেড’।
স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী করে পরদিন পাটনার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লালুপ্রসাদ। সেখানে কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জেলে কাটিয়ে এখন দলের হাল ধরতে মুখ্যমন্ত্রিত্বে সাময়িক ইতি টানার কথা জানিয়েছেন।