শেষ আপডেট: 31st July 2024 11:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অতিভারী বৃষ্টির করাল গ্রাসে ছবির মতো সুন্দর কেরলের পাহাড়ি উপত্যকা ওয়ানাড় জেলা। প্রতি মিনিটে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। কোথায় এর শেষ কেউ জানে না। মঙ্গলবার ভোররাতে হু-হু করে পাহাড় ফাটিয়ে নেমে আসা জলের তোড়ে ২২ হাজার মানুষের কলরবে মুখর ৪টি গ্রাম মাত্র ৪ ঘণ্টায় উবে গিয়েছে। কেরলের এই জলোচ্ছ্বাসের ফলে ভূমিধসের ছবি মনে করিয়ে দেয় ১১ বছর আগের কেদারনাথের প্রাকৃতিক তাণ্ডবলীলার কথা।
কিন্তু, কেরলের ওয়ানাড়ে এই পরিস্থিতির কারণ কী? কেন এমনভাবে প্রতিশোধ নিল প্রকৃতি? আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা তার উত্তর খুঁজেছেন। তাঁদের খুব সময়ের মধ্যে ভয়ঙ্কর বৃষ্টি ধারণ করতে পারেনি পার্বত্য এলাকা। আর এই আকাশভাঙা বৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে আরব সাগরের উষ্ণতা।
কোচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অ্যাডভান্সড সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক রাডার রিসার্চের ডিরেক্টর এস অভিলাষ ব্যাখ্যা করে বলেন, গত দু সপ্তাহ ধরে কোঙ্কন উপকূলে মৌসুমি বায়ু অতি সক্রিয় রয়েছে। যার ফলে কাসারগোড়, কান্নুর, ওয়ানাড়, কালিকট এবং মালাপ্পুরম জেলার মাটি ধীরে ধীরে নরম হয়ে কাদায় পরিণত হতে শুরু করেছিল।
তিনি বলেন, গত সোমবার একটি গভীর বজ্রগর্ভ মেঘ দীর্ঘকায় হয়ে বিস্তৃত এলাকায় ছেয়েছিল। যার জেরে আরব সাগর উপকূলে সুগভীর মেঘ জমা হয়েছিল। এই কারণেই ওয়ানাড়সহ কালিকট, মালাপ্পুরম এবং কান্নুর জেলায় অতিভারী বৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালের কেরলের ভয়াবহ বন্যার মতো মেঘ সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা অভিলাষ।
ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ৩৭৮২টি ভূমিধসের মধ্যে ২২৩৯টি ধসের মুখোমুখি হয়েছে কেরল। যা দেশে সর্বোচ্চ। এবারেও ওয়ানাড়ের মুন্ডাক্কাই, চুরুমালা, আট্টামালা এবং নুলপুঝা নামে চারটি গ্রামের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। আবহাওয়া দফতর আরও বৃষ্টির সতর্কতা জারি করায় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারকেও সর্বত্র পৌঁছতে বেগ পেতে হচ্ছে।
আজকের ওয়ানাড় দেখে ২০১৩ সালের মধ্য জুনে কেদারনাথ বিপর্যয়ের কথা অনেকেই মনে করছেন। ১৬-১৭ জুনের রাতে সেবারেও অতিবৃষ্টির জেরে হড়পা বান নেমে এসেছিল গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে। উত্তরাখণ্ডের চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ এবং উত্তরকাশী ভেসে গিয়েছিল। অলকানন্দা, ভাগীরথী ও মন্দাকিনীর সেই রুদ্রমূর্তির কথা আজও অনেকের স্মরণে আছে। মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি জনপদ।