শেষ আপডেট: 9th December 2024 17:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের নেহরু স্ট্রিটের কী হবে? বহু বিতর্কিত কাশ্মীরের সমর্থক দেশত্যাগী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সিরিয়া এখন কী ভূমিকা নেবে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে? এরকম হাজারো প্রশ্নের জল ঘুরপাক খাচ্ছে ৪০০০ কিমি দূরের দুই দেশের মধ্যে। প্রায় পাঁচ দশকের আসাদের পরিবারতান্ত্রিক শাসনের অবসানে ভারত-সিরিয়া সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে? ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু যে সম্পর্কের বীজ পুঁতেছিলেন, তাতে একসময় সার-জল দিয়ে এসেছিলেন বিজেপির প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও। এখন কী দাঁড়াবে এই সম্পর্ক?
১৯৫৭ সালে নেহরু একঝলকের জন্য সিরিয়া গিয়েছিলেন। তাঁর গন্তব্য ছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। যাওয়ার পথে গড়ে তোলেন ভারত-সিরিয়া নয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সেই বন্ধুত্বকে চিরকালীন করে রাখতে দামাস্কাসের ঐতিহাসিক উম্মেইদ স্কোয়ারের নামকরণ হয় জওহরলাল নেহরু স্ট্রিট। এরপর কয়েক ধরে দুদেশের সম্পর্কের পারদ অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলে আসছে।
নেহরুর পর ২০০৩ সালে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও সিরিয়া সফরে গিয়েছিলেন। ১৪-১৬ নভেম্বর তিনি সিরিয়া সিরিয়া ভ্রমণ করেন। সেবার বাজপেয়ী তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করেন। বাজপেয়ী আসার সময় আসাদকে ভারতে আসারও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তিনি কথা দিয়েছিলেন আমন্ত্রণ রক্ষা করবেন বলে।
বর্তমান অবস্থায় ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। ভারত সেদেশের ঐক্য, সংহতি, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক সুস্থিতির উপর জোর দিয়েছে। সিরিয়ার আসাদ কেন ভারতের বন্ধু? বাশারের জমানায় সিরিয়া চিরকাল ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। আর সেটা আজ থেকে নয় নেহরু সিরিয়ায় যাওয়ার বছরেই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শুকরি আল কুয়েতলি একই বছরে নয়াদিল্লিতে আসেন। নেহরুর তৈরি নির্জোট আন্দোলনেও সিরিয়া প্রথম থেকে বন্ধুদেশ ছিল।
২০১৭ সালে আসাদ সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের হয়ে মুখ খোলেন। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সিরিয়া বরাবর কাশ্মীর যে ভারতের অংশ সেই দাবি জানিয়ে এসেছে। ইসলামি দেশগুলির সংগঠনে সিরিয়া বলে আসছে, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর কাশ্মীর নিয়ে ভারত যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তাতে সমর্থন আছে সিরিয়ার।
এই অবস্থায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সিরিয়ার শাসন-ক্ষমতায় যারাই বসতে চলুক না কেন, ভারতের সঙ্গে তাদের পৃথক কোনও শত্রুতার কারণ এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। তবে কাশ্মীর নিয়ে গোঁড়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী কী ভূমিকা নেয়, তার উপরেই নির্ভর করছে ভারত-সিরিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। কিন্তু, ক্ষমতায় যেই আসুক, তাদের মনে রাখতে হবে, ভারত কয়েক দশক ধরে সিরিয়ার মাটিতে পরিকাঠামো এবং উন্নয়ন খাতে কোটি কোটি ডলার ঢেলেছে। এছাড়াও ভারতের টাকা খাটছে সিরিয়ার শিক্ষা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। ফলে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পিছনে তুরস্ক থাকলেও তারা দেশ গঠনের বিষয়ে ভারতের সাহায্য হাতছাড়া করতে ছাড়বে বলে মনে হয় না, অন্তত বিশেষজ্ঞদের তাই মত।