শেষ আপডেট: 29th August 2024 16:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মমতা বন্দোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিলেও নিজের রাজ্যে মোটেই স্বস্তিতে নেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সহ ১৪ দলের জোট রাজ্যে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছে থানায়। কোনও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিরল। এমনকী গুজরাত দাঙ্গার সময় সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এমন মামলা হয়নি। অন্য মামলা সূত্রে তদন্তে তাঁর নাম আসে। পুলিশ অভিযোগ-পত্র গ্রহণ করলেও সেটি এফআইআর হিসাবে এখনও নথিভুক্ত করেনি। বিরোধীরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।
মমতা বলেছিলেন, আরজি কর নিয়ে বিজেপি বাংলায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করলে অসমও রক্ষা পাবে না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন হিমন্ত। যদিও জানা যাচ্ছে নিজের রাজ্য চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে নওগাঁ জেলায় নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনায় গোটা রাজ্য তোলপাড়। অন্যদিকে, শিবসাগর-সহ একাধিক জেলা হিন্দিভাষীদের সঙ্গে অসমীয়াদের গোলমালকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি ঘটেছে। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অসমের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লি সন্তুষ্ট নয় বলে দলীয় সুত্রের খবর।
অসমে নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে এ মাসের ২২ তারিখ। তার আগে থেকেই তেঁতে ছিল শিবসাগর জেলা। সেখানে এক মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অসমীয়া ভাষী তরুণ-তরুণীকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করায় ওই তরুণ-তরুণী তার দিকে পাল্টা তেড়ে গেলে হাতাহাতি শুরু হয়। এই ঘটনা ২২ অগাস্টের আগে। তবে ঘটনার রেশ শিবসাগর জেলাতে থেমে থাকেনি। অসমের একাধিক জেলায় অসমীয়া নাগরিকরা দাবি তোলে মারোয়াড়ি সংগঠনের নেতাদের ক্ষমা চাইতে হবে। এই দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন এতদূর ছড়ায় যে পুলিশ-প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেও অসমীয়া ভাষীদের দমাতে পারেনি। বাধ্য হয়ে মারোয়ারি সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষমা চান।
সেই ঘটনায় আবার মারোয়াড়ি সম্প্রদায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা প্রশ্ন তোলে অসমে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। তাই মারোয়াড়ি সমাজকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। এটা তাদের পক্ষে অসম্মানজনক। বেশ কিছু হিন্দিভাষী সংগঠনও এই বিষয়ে সরব হয়। এরই মধ্যে নওগাঁ জেলায় নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হয়। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের একজন মিয়া মুসলিম অর্থাৎ বাংলাভাষী মুসলিম। অসমে যাদের বাংলাদেশি বা বহিরাগত মুসলমানও বলা হয়ে থাকে।
বিরোধীদের অভিযোগ, শিবসাগর জেলায় হিন্দিভাষীদের সঙ্গে অসমীয়াভাষীদের বিবাদ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই হিমন্ত নওগাঁর ঘটনাটি নিয়ে মিয়া মুসলিমদের নিশানা করতে শুরু করেছেন। মিয়া মুসলিমরা মূলত লোয়ার অসমের ধূবরি, গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা। এই এলাকা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। সেখান থেকে মিয়া মুসলিমরা আপার অসমে কাজের সন্ধানে যান। হিমন্ত বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন মিয়া মুসলিমরা আপার অসমে যাচ্ছেন। আরও বলেছেন, অসমে মুসলিমদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এক কারণ অনুসন্ধান করে তাঁর সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে। তিনি আরও বলেন, মিয়া মুসলমানেরা অসমকে দখল করবে এটা কিছুতেই হতে দেব না আমরা।
হিমন্তের খুল্লামখুল্লা মুসলিমদের আক্রমণ করা নিয়ে বিজেপির অন্দরেও আপত্তি আছে। জানা যাচ্ছে, শিব সাগরের ঘটনার মোড় ঘোরাতেই চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক লাইন নিয়েছেন তিনি। অতীতেও একাধিকবার তাঁকে এই কৌশল নিতে দেখা গিয়েছে। যদিও নওগাঁর ঘটনায় হিমন্তের জিহাদ নিয়ে শিবসাগরকে ঠাণ্ডা করা যায়নি। সেখানে হিন্দিভাষীরা অসম সরকারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায় কঙ্গনা রানাউতের ক্ষেত্রে পার্টি তাঁকে সতর্ক করেছে। নায়িকা সাংসদ পাঞ্জাবের আন্দোলনরত কৃষকদের নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছিলেন। হিমন্তের ক্ষেত্রে দল প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না তাঁকে ঝাড়খণ্ড বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়ায়। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মারোয়াড়ি সমাজ জোরালো আপত্তি তুলেছে অসম নিয়ে।
তাদের বক্তব্য, পুলিশ-প্রশাসন থাকতে কীভাবে সমাজের প্রবীণদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হল। অন্যদিকে, মিয়া মুসলমানদের সংগঠন বলেছে, সংবিধানে বলা আছে ভারতবাসী দেশের যে কোনও জায়গায় রুটিরুজির জন্য যেতে পারে। লোয়ার অসমের মানুষের আপার অসম যাওয়া নিয়ে কীভাবে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তোলেন।