শেষ আপডেট: 16th April 2024 17:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভোটে ব্যালট জমানা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদনের শুনানি ছিল মঙ্গলবার। সেই শুনানিতে আবেদনকারীদের একজনের কৌঁসুলি প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, 'আমাদের বয়স ৬০ বছর হয়ে গিয়েছে। ব্যালটে যখন ভোটগ্রহণ হতো তখন কী হতো তা আমাদের জানা আছে। আপনিও হয়তো জানেন। কিন্তু, আমরা ভুলিনি।'
সুপ্রিম কোর্ট আরও বলে, আমরা ব্যালট পেপারের দিনে ফিরে যেতেই পারি। আরেকটি রাস্তা আছে, তা হল ভিভিপ্যাটের কাগজের টুকরোটি ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া। অন্যথায় ভিভিপ্যাটের টুকরো কাগজটি ভোটার হাতে নিয়ে নিজে ব্যালট বাক্সে ফেলে দেবেন। তাতে ভিভিপ্যাট মেশিনের কারিকুরি বদল করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভারতে ইভিএম-এ ভোট নিয়ে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইউরোপীয় এবং উন্নত দেশগুলির অনেক জায়গাতেই এখনও পুরনো ব্যালট প্রথা ভোট হয়ে থাকে। ইভিএম দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও ভারতের নির্বাচন কমিশন পরবর্তীকালে ভিভিপ্যাট সিস্টেম চালু করে।
ভিভিপ্যাট ব্যবস্থায় ভোটার দেখতে পান তাঁর দেওয়া ভোটটি ঠিক জায়গায় পড়েছে কিনা। ভিভিপ্যাটে বেরনো কাগজের টুকরোটি গোপনে রক্ষা করা হয়। ইভিএম কারচুপির কোনও অভিযোগ উঠলে তবেই তা গোনার রীতি চালু আছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) এবং সমাজকর্মী অরুণ আগরওয়ালের আর্জি ভোটপ্রক্রিয়াকে নিশ্চিত করার জন্য ভিভিপ্যাটের সমস্ত স্লিপ গোনার পদ্ধতি চালু হোক।
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রকে জবাব দিতে বলেছিল। তারই শুনানিতে এদিন সুপ্রিম কোর্ট ব্যালট পেপারে ভোটের সমস্যার কথা তুলে ধরে। প্রশান্ত ভূষণ সওয়ালে বলেন যে, অনেক ইউরোপীয় দেশ যারা ইভিএমে ভোট করত, তারা ফের ব্যালট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। ভূষণ দৃষ্টান্ত দিয়ে জার্মানির কথা তুলে ধরেন। তার জবাবে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, জার্মানির জনসংখ্যা কত? উত্তরে ভূষণ বলেন, মোটামুটি ৬ কোটি হবে। তখন বিচারপতি দত্ত বলেন, আমার জন্মভিটে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাও জার্মানির চেয়ে বেশি। বিচারপতি খান্না বলেন, ভারতে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা ৯৭ কোটি। আমরা খুব ভালো করেই জানি, ব্যালটে ভোটের সময় কী হতো।
আবেদনকারীদের আরেক আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে তখন বলেন, তাহলে ইভিএমে ভোট হলে ভিভিপ্যাট ব্যবহার করা হোক। বিচারপতি খান্নার জবাব, আপনার মতে, নিদেনপক্ষে ৬০ কোটি ভিভিপ্যাট স্লিপ গোনা উচিত, তাই তো?
বিচারপতি বলেন, মানুষের হাত ছাড়া মেশিন সাধারণত সঠিক ফল দেয়। একথা ঠিক যে, ইভিএমে ফল পরিবর্তনে মানুষের নেপথ্য হাত আছে কিনা কিংবা এর ভিতরে কলকৌশল-প্রযুক্তি বদল করা হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করা সমস্যার। যদি আপনাদের সেই সমস্যা মেটানোর কোনও পরামর্শ থাকে, তাহলে আমাদের তা জানাবেন।
এরপর আদালত নির্বাচন কমিশনকে ভোটপ্রক্রিয়া, ইভিএম সংরক্ষণ এবং ভোট গণনার কথা বলে। বিচারপতি খান্না বলেন, ইভিএম কারচুপি এবং নষ্ট করার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর শাস্তির বিধান নেই। এটা খুবই গুরুতর। যারা এরকমটা করবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ভয় তৈরি করা জরুরি। বিচারপতি দত্ত আবেদনকারীদের আইনজীবীদের বলেন, আমাদের কাউকে বিশ্বাস করতেই হবে। এইভাবে ব্যবস্থাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করবেন না। এ ধরনের বিদেশের উদাহরণ এখানে টেনে আনবেন না। ইউরোপীয় দৃষ্টান্ত এখানে কাজে আসবে না। প্রসঙ্গত, এই আবেদনের পরবর্তী শুনানি হবে আগামী বৃহস্পতিবার।