প্রায় ছ’দশক আগে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় প্রাণ হারান গুজরাতের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বলবন্তরাই মেহতা।
বলবন্তরাই মেহতা
শেষ আপডেট: 13 June 2025 18:35
দ্য ওয়াল ডিজিটাল ডেস্ক: গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির (Vijay Rupani) বিমান দুর্ঘটনায় (Plane Crash) মৃত্যু ফের মনে করিয়ে দিল ইতিহাসের এক দুঃখজনক অধ্যায়। পাকিস্তানের গুলিতে বলবন্তরাই মেহতার (Balwantrai Mehta) বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনার কথা। প্রায় ছ’দশক আগে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় প্রাণ হারান গুজরাতের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বলবন্তরাই মেহতা। এবার সেই ইতিহাসের যেন প্রতিধ্বনি হয়ে এল বিজয় রূপানির মৃত্যুর ঘটনায়।
বৃহস্পতিবার লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি আমদাবাদ থেকে উড়ানের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে (Ahmedabad Plane Crash) বিএ জে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসের উপর। ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে কেবলমাত্র একজন বেঁচে যান। নিহতদের তালিকায় ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাই ফের স্মরণ করিয়ে দিল ১৯৬৫-র সেই যুদ্ধকালীন বিপর্যয়।
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তখন টানটান উত্তেজনা। পাকিস্তানের অনুপ্রবেশের জবাবে ভারত প্রতিরোধ শুরু করেছে। স্থল, জল, আকাশ— তিন দিকেই লড়াই চলছে। সেই সময় গুজরাত সরকারের মালিকানাধীন একটি ছোট বিমান, আমেরিকান বিচক্র্যাফ্ট মডেল ১৮, মিঠাপুরের উদ্দেশে উড়েছিল। বিমানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বলবন্তরাই মেহতা, তাঁর স্ত্রী সরোজবেন মেহতা, সরকারি আধিকারিক, গুজরাত সমাচারের এক সাংবাদিক এবং পাইলট বায়ুসেনার প্রাক্তন স্কোয়াড্রন লিডার জাহাঙ্গির ‘জ্যাঙ্গো’ ইঞ্জিনিয়ার ও কো-পাইলট ডিকস্টা।
এই বিমানের উড়ানের কিছু সময়ের মধ্যেই পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের বাদিন রাডারে ধরা পড়ে সেটি। পাকিস্তান এয়ার ফোর্স করাচির মৌরীপুর থেকে দু’টি এফ-৮৬ সাবর জেট পাঠায়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি ফিরে যায়। বলবন্তরাইয়ের বিমান একাই ধাওয়া শুরু করেন তরুণ পাইলট ফ্লাইং অফিসার কাইস হুসেন।
পাক বিমানটিকে দেখে তার বলবন্তরাইয়ের পাইলটরা উইং ওয়াগ করে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তাঁদের বিমানটি সামরিক বিমান নয়। কিন্তু যুদ্ধকালীন নির্দেশ ছিল কঠোর। নির্দেশ আসে গুলি চালানোর। পাক বিমানটি বলবন্তরাইয়ের বিমান ঘিরে দুবার চক্কর খায়। তার পর .৫০ ক্যালিবার গান দিয়ে একবার বাম ডানায় গুলি করে, তার পর ডান ডানায়। দুটি গুলিতে বিমানের দুটি ইঞ্জিনেই আগুন ধরে যায়। কচ্ছের মরুভূমিতে সুতালি গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হয় সেটি। প্রাণ হারান সকলেই।
দেশজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। অল ইন্ডিয়া রেডিও সেই রাতেই নিশ্চিত করে বলবন্তরাই মেহতার মৃত্যুর কথা। ভারত সরকার এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে নিন্দা করে। পাকিস্তান দাবি তোলে, যুদ্ধকালীন সীমানা লঙ্ঘনের কারণেই তারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল।
ঘটনার ৪৬ বছর পরে, ২০১১ সালে অবসরপ্রাপ্ত পাক পাইলট কাইস হুসেন ইমেল করেন নিহত পাইলট জাহাঙ্গির ইঞ্জিনিয়ারের কন্যা ফরিদা সিংহকে। তাঁর সেই চিঠিতে ছিল দুঃখপ্রকাশ ও ঘটনার বিশদ বিবরণ। তিনি লেখেন, "নির্দেশ পালন করছিলাম ঠিকই, তবে প্রাণহানির দুঃখ এখনও আমায় তাড়া করে বেড়ায়।"
ফরিদার জবাব ছিল আশাব্যঞ্জক। "আমরা কখনওই ব্যক্তিগতভাবে আপনার প্রতি ঘৃণা পোষণ করিনি। যুদ্ধের বিভ্রান্তিতেই এই ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে সহমর্মিতা থাকাই উচিত।"
বিজয় রূপানির মৃত্যুর শোক এখনও ভারী করে রেখেছে গোটা দেশকে। এই প্রসঙ্গেই মনে করিয়ে দিল সেই ১৯৬৫-র আরও এক মুখ্যমন্ত্রীর যুদ্ধকালীন মৃত্যুর বেদনা। দুই মুখ্যমন্ত্রীর দুই দুর্ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।