ভারতে অভিন্ন দুই সন্তান নীতি চায় বিশ্বহিন্দু পরিষদ, জানালেন কার্যকর্তা। (প্রতীকী চিত্র)
শেষ আপডেট: 13th July 2024 15:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হাম দো, হামারে দো। ভারতের পুরনো দুই সন্তান নীতিতেই এবার জোর দিতে চাইল বিশ্ব-হিন্দু পরিষদ। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বিশ্বহিন্দু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্রকুমার জৈন জানিয়েছেন, ভারতে জনসংখ্যা প্রায় জনবিস্ফোরণের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এখনই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কিছু করা দরকার। অবশ্য সুরেন্দ্র এও বলেছেন, কতজন সন্তান থাকবে, সেই সিদ্ধান্তটা অতি অবশ্যই মহিলাদের নেওয়া উচিত।
পাশাপাশি, সুরেন্দ্র জোর দিলেন জন-ভারসাম্যের দিকে। সাফ জানালেন, 'শুধু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করলেই হবে না। জনসংখ্যার ভারসাম্যের দিকটাও খেয়াল করতে হবে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট অবধি এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এই যে জনসংখ্যার ভারসাম্য না থাকা, এটাই আমাদের ক্ষতি করে দিচ্ছে। এগুলো ঠিক করতে একটা সুষ্ঠ জনসংখ্যা নীতি থাকা দরকার। হিন্দু হোক বা মুসলিম, যে কোনও ধর্ম কেউ পালন করতে পারেন, কিন্তু জনসংখ্যা নীতি তাঁদের সকলের জন্য সমান হতে হবে। অভিন্ন জনসংখ্যা নীতি আমাদের সংবিধানের সঙ্গেও সাযুজ্যপূর্ণ।
২০২২ সালে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতও একই কথা বলেছেন। আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, জনসংখ্যার ভারসাম্য না থাকার ব্যাপারটাকে আর উপেক্ষা কয়া যায় না। গত দুই দশকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিক নীতি পাশ করিয়েছে আরএসএস। সুরেন্দ্র বললেন, জনসংখ্যার স্থিতাবস্থার জন্যও দুই সন্তান নীতি দরকার। তিনি বলেন, 'আমরা দুই সন্তান নীতি চাই। ওটা সারা দেশের জন্যই অভিন্ন হওয়া দরকার। গবেষণায় ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে, জনসংখ্যা বাড়লে কী কী হতে পারে। কিন্তু আমরা আবার এক সন্তান নীতিও চাই না। চিন এটা করে বিপাকে পড়েছে। আমাদের এটা থেকে সাবধান হওয়া উচিত। তাই আমরা দুই সন্তান নীতিই চাইছি।'
গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজস্থানের বনসওয়াড়ায় প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী নাম না করে দুই সন্তান নীতি নিয়ে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের দিকে তোপ দেগেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের একটি বিবৃতিকে নিশানা করে মোদী বলেছিলেন, কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহার বলছে, কংগ্রেস নাকি মা-বোনেদের সোনা ও সম্পত্তির হিসেব করে সেসব ভাগ বাঁটোয়ারা করে দেবে। কাদের করবে? যাদের বেশি সন্তান আছে। যারা বহিরাগত। আপনারা কি চান, আপনাদের কষ্টের টাকা বহিরাগতদের দিকে যাক? বলা বাহুল্য, মোদীর এই বক্তব্য ধোপে টেকেনি। বনসওয়াড়ায় জয়ী হয়েছেন ভারত আদিবাসী দলের প্রার্থী, ইন্ডিয়া জোটসঙ্গী রাজকুমার রোয়াত। সুরেন্দ্র অবশ্য শুরুতে সরাসরি দুই সন্তান নীতি নিয়ে কোনও সম্প্রদায়ের দিকে আঙুল তুলতে চাননি। তবে মুসলিম মহিলাদের অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে সুরেন্দ্র বলেন, 'যারা এসব উদ্যোগে বাধা দেন, তাঁদের একটু চিন্তাভাবনা করা দরকার। আর কতদিন মুসলিম মহিলারা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? যারা আপত্তি করেন, তাঁরা আর কতদিন মুসলিম মহিলাদের নারকীয় জীবন যাপন করতে বাধ্য করবেন?'
কিন্তু পরে সরাসরি মুসলিমদের নিশানা করে সুরেন্দ্র বলেন, 'আমরা দেখেছি, শাহ বানোর সঙ্গে কী হয়েছে। ওঁরা এটাকে ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। এটা কী করে সত্যি হয়? কেউ কি ওঁদের প্রার্থনা করতে বারণ করেছে? কেউ কি বলেছে, মাথায় ফেজটুপি পরা যাবে না বা দাড়ি রাখা যাবে না? শরিয়ার নাম করে ওঁরা আসলে দেশের গণতন্ত্র নিয়েই খেলতে চাইছেন। এটা সহ্য করা হবে না।'
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বিজেপি ও সংঘের দাবি দীর্ঘদিনের। সুরেন্দ্র আরও একবার বললেন, 'অভিন্ন জনসংখ্যার নিয়ম সমস্ত সভ্য দেশে পালন করা হয়। ভারতে হবে না কেন? আমাদের এখনই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা উচিত। যাতে জনসংখ্যা নিয়েও অভিন্ন নীতি থাকবে। অসম বা উত্তরাখণ্ডে তো ইতিমধ্যেই রয়েছে।' কীরকম নীতি হবে? তারও টুকিটাকি বলেছেন তিনি। 'যেমন ধরুন, কেউ যদি পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে চান, তাহলে যার দুয়ের বেশি সন্তান থাকবে, তিনি মনোনয়ন দিতে পারবেন না। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও দুয়ের বেশি সন্তান্ত থাকলে চলবে না। আমাদের জনসংখ্যার ভারসাম্যের দিকে অবিলম্বে নজর দিতে হবে।'