শেষ আপডেট: 12th November 2024 11:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চিনের প্রতি কট্টর মনোভাব দেখিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লোরিডায় ভোটে জেতা মাইক ওয়াল্টজকে নয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করলেন। মাইকের দ্বিতীয় পরিচয় হল, তিনি মার্কিন কংগ্রেসের ভারত গোষ্ঠীর (ইন্ডিয়া ককাস) প্রধান এবং যারপরনাই চিন বিরোধী রাজনীতিক। নিজে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য গ্রিন বেরেট খেতাব অর্জন করেছিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা বিভিন্ন সেনা অভিযান এবং নীতিগ্রহণের অভিজ্ঞ। বিশেষত চিনের বিদেশনীতি এবং জো বাইডেনের কূটনীতির ঘোরতর সমালোচক। তিনি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার যুদ্ধ কৌশলগত প্রস্তুতির পক্ষে বেশ কয়েকবার জনপ্রতিনিধিসভায় গলা ফাটিয়েছেন। এহেন গোঁড়া চিন-বিরোধী ও ভারতবন্ধু নেতা মাইক ওয়াল্টজকে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করায় নয়াদিল্লি আগামী চার বছরের জন্য দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে কয়েক কদম এগিয়ে থাকল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
চিনের ক্ষেত্রে কী ঘটতে চলেছে
ওয়াল্টজের নিয়োগ চিনা কমিউনিস্ট পার্টির বৃহত্তর আতঙ্ককে কাটাতে হবু ট্রাম্প প্রশাসনের দায়বদ্ধতাকে প্রতিফলিত করেছে। কোভিড-১৯ ছড়ানোর অভিযোগে এবং চিনের মুসলিম অধ্যুষিত উঘুর প্রদেশে কোভিডের সময় যথোপযুক্ত চিকিৎসা না মেলায় ২০২২ সালের বেজিং অলিম্পিক বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন।
ভোটের কিছু আগে একটি আর্থিক নিবন্ধে ওয়াল্টজ এবং প্রাক্তন পেন্টাগন কৌশলী ম্যাথু ক্রোয়েনিগ যৌথভাবে একটি লেখা লেখেন। তাতে দুজনেই লিখেছিলেন, আমেরিকার উচিত ইউরোপ এবং আরব দুনিয়া থেকে বৈদেশিক নীতির দৃষ্টি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সরানো উচিত। তাঁদের মতে, আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্টের উচিত ইউক্রেন এবং আরব দুনিয়ার সংঘর্ষ থামাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। এবং কমিউনিস্ট পার্টির বৃহত্তর আতঙ্ক দমন করতে কৌশলগত নজর সেদিকে ঘোরানো।
চিনা আগ্রাসন ঠেকাতে ওয়াল্টজ বরাবর মার্কিন সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করার পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। বিশেষত তাইওয়ানে যেভাবে চিন ধীর পদক্ষেপে আগ্রাসনের পথে এগোচ্ছে, তা ঠেকানোর পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছেন তিনি। মাইক লিখেছিলেন, তাইওয়ানে চিনা আক্রমণ ঠেকাতে আমেরিকা সেনাবাহিনীকে তৈরি করছে না। প্রতিরক্ষা খরচ কমিয়ে ফেলায় তা চিনের পক্ষে যেতে চলেছে। একইসঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা খরচ বৃদ্ধির পক্ষেও তিনি জোর সওয়াল করেন।
মার্কিন-ভারত সম্পর্কের সুসময়
ট্রাম্প প্রশাসনে ওয়াল্টজের উত্থানে কেবল চিনের পেশিশক্তিতে লাগাম আসবে না, ভারত-মার্কিন সম্পর্কেও উল্লেখযোগ্য গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াল্টজের এই নিয়োগ ভারতের পক্ষে অত্যন্ত সদর্থক হতে চলেছে। কারণ মার্কিন কংগ্রেসের ইন্ডিয়া ককাসের প্রধান তিনি, সেই হিসেবে ভারতবন্ধুর হাতে থাকছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ। সে কারণে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিন-ভারত সম্পর্কের যে ঘোলাজল বইছে, তাতে কিছুটা হলেও চাপে থাকবে বেজিং।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই চিনের মোকাবিলায় আমেরিকার কাছ থেকে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধকৌশলগত সহায়তা চাইছিল। এবার সেই চাহিদা পূরণ হতে পারে বলে ধারণা। ৫০ বছর বয়সি ওয়াল্টজ বেশ কয়েকটি বৈদেশিক যুদ্ধে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে অনেকদিন ধরে আফগানিস্তানে ছিলেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরানোর ঘোরতর বিরোধী ওয়াল্টজ। মোট কথা চিনের প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতি ওয়াল্টজের শ্যেন নজর তাদের পক্ষে বেশ অস্বস্তিকর হতে চলেছে। অন্যদিকে, ভারতের পক্ষে এটাই একটা সদর্থক বার্তা হতে চলেছে।