Date : 17th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
কয়েকমাসের ব্যবধানে আবার ডোমজুরের একটি কারখানায় আগুন লাগল, ঘটনাস্থলে দমকলের দু'টি ইঞ্জিনশক্তির স্বার্থেই রাশিয়ার পাশে ভারত, ন্যাটো প্রধানের হুঁশিয়ারিকে পাত্তাই দিল না নয়াদিল্লিভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হতে পারে সামনের সপ্তাহেই! কম দামে মিলবে হুইস্কি, ওয়াইননিকোপার্কে যুবকের মৃত্যু: পরিবারের অভিযোগ গাফিলতির, ময়নাতদন্তে হৃদরোগে মৃত্যুর ইঙ্গিতকল্যাণী স্টেডিয়ামেই হবে ডার্বি, তবে পিছল দিনমিলিয়ে মিশিয়ে হাজারের উপর নামকরণ করে ফেলেছেন মমতা, এখনও তালিকা অফুরন্ত, জানালেন নিজেইগোপালগঞ্জ: পুলিশ রিপোর্টে আ-লিগ কর্মীদের মৃত্যুর কারণ লেখা নেই, সেনাকে আড়াল করাই লক্ষ্য?আইআইটি সমাবর্তনে 'কালা চশমা' মুহূর্ত, 'কুল' ছাত্র-প্রফেসরের রসায়ন ভাইরালউত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের করিডোরে ভবঘুরের দেহ খুবলে খেল কুকুরমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই হবে এবারের ডুরান্ডের উদ্বোধন
Uncle Of Boy Found Hanging In Kota Hostel:

ছেলেকে পড়তে পাঠালাম কোটায়, ফেরত পেলাম দেহ! এই মৃত্যু সরকারের গালে থাপ্পড়: ছাত্রের কাকা

নিটের প্রস্তুতি নিতে বিহারের নালন্দা থেকে রাজস্থানের পথে পাড়ি দেন বছর সতেরোর হর্ষরাজ শঙ্কর৷ ভর্তি হন কোটার একটি কোচিং ইন্সটিটিউটে। তারপর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই নিজেকে শেষ করে দিলেন বিহারের তরুণ৷

ছেলেকে পড়তে পাঠালাম কোটায়, ফেরত পেলাম দেহ! এই মৃত্যু সরকারের গালে থাপ্পড়: ছাত্রের কাকা

গ্রাফিক্স: শুভ্র শর্ভিন

শেষ আপডেট: 27 March 2025 09:48

দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঘর তল্লাশি করছিল পুলিশ। যদি আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনও কিছুর প্রমাণ মেলে… নিদেনপক্ষে সুইসাইড নোট। ততক্ষণে আত্মহত্যার সুরতহাল শুরু হয়েছে। তদন্ত বসেছে। কিন্তু কোটার জহরনগরের কোচিং সেন্টারের হস্টেল থেকে সেভাবে কিছুই খুঁজে পায়নি পুলিশ… একটি চিরকুট ছাড়া। যেখানে লেখা ছিল একটিমাত্র শব্দ: ‘সরি’।

নিটের প্রস্তুতি নিতে বিহারের নালন্দা থেকে রাজস্থানের পথে পাড়ি দেন বছর সতেরোর হর্ষরাজ শঙ্কর৷ ভর্তি হন কোটার একটি কোচিং ইন্সটিটিউটে। তারপর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই নিজেকে শেষ করে দিলেন বিহারের তরুণ৷ মঙ্গলবার রুমের বাইরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ একটি লোহার রডে তাঁর মৃতদেহ ঝুলতে দেখেন হস্টেলের কেয়ারটেকার। তারপর পুলিশকে জানানো হয়৷ ছেলের মৃত্যুর খবর পায় হর্ষরাজের পরিবার। মৃতদেহ যখন ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন রাজীব৷ রাজীব যাদব৷ সম্পর্কে হর্ষরাজের কাকা৷ কান্নাভেজা গলায় তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাদের ছেলেকে পড়াশোনার জন্য কোটায় পাঠালাম৷ অথচ তার মৃতদেহ নিতে ফিরে এসেছি। এটা সরকারের গালে থাপ্পড়।’

থাপ্পড়টা অবশ্য আজ নয়। দীর্ঘদিন ধরেই খেয়ে চলেছেন রাজস্থানে ভজনলাল শর্মার সরকার। পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি মাসে এই নিয়ে কোটার কোচিং ইন্সটিটিউটগুলিতে ন'নম্বর উচ্চাশীর মৃত্যু হল। তাঁদের মধ্যে ছ'জন জেইই এবং তিনজন নিটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আরেকটু পিছিয়ে দেখলে, গত বছর ১৭ জন পড়ুয়া মরুশহরে আত্মঘাতী হন৷ তেইশে যার সংখ্যা ছিল ২৬।

কেন আত্মঘাতী হচ্ছেন পড়ুয়ারা? কী করলে এমন অকাল-আত্মহনন ঠেকিয়ে রাখা যাবে? এই নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক চলছে। আশ্চর্যের বিষয়, কোটার যে কোচিং হাবের হস্টেলের খবর সামনে এসেছে, সেখানে আত্মহত্যার পথ বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ খুব একটা গা এলিয়ে ছিল—বিষয়টা এমন নয়৷ হস্টেলের প্রতিটি রুমের ফ্যানে লাগানো রয়েছে ‘অ্যান্টি-সুইসাইড ডিভাইস’। এর কারণ সিলিংয়ে ফাঁস লেগে আত্মহননই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চালু রীতি৷ হস্টেলে কেয়ারটেকার লোকেশ শর্মা নজরদারি চালাতেন। সরকারি নিয়ম মেনে ‘গেটকিপার ট্রেনিং’-ও পাস করেছিলেন তিনি। তবু এতকিছুর পরেও নালন্দার হর্ষরাজ আত্মঘাতী হয়েছেন। আর সেটাও অদ্ভুত উপায়ে! অনেক খোঁজাখুঁজির পর শারীরিক কসরতের জন্য তিনি লোহার রড জোগাড় করে আনেন। তারপর রুমের বাইরে তাতে ঝুলে পড়েন।

হর্ষরাজের কাকা ভাইপোর মৃত্যুর পর একহাত নিয়েছেন রাজস্থান সরকারকে। অভিযোগের সুরে বলেছেন, ‘শর্মাজির প্রশাসনকে এই বিষয়টির দিকে নজর রাখা উচিত৷ যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ট্র‍্যাজেডি না ঘটে৷ আমাদের ছেলে পড়শোনায় খুব ভাল ছিল৷ ও কোটায় নিটে সফল হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’

অনেকের মতে, রাজীব যাদব এখানেই ভুল করছেন। হয়তো ভুল করছি আমরাও। ‘পড়াশোনায় ভাল না হওয়া’-টা কোটায় বিপুল মৃত্যুর কারণ নয়, ‘পড়াশোনায় বাকিদের চেয়ে ভাল হওয়া'-র চাপই কেড়ে দিচ্ছে হর্ষরাজদের। দু’বছর আগে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল কোটায়। ২০২৩ সালের ১১ মে, উমেশ ভার্মা নামে বছর ষোলোর পড়ুয়া আত্মহত্যা করে। কুনহারিতে একটি হস্টেলের ঘরে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় উমেশের দেহ। ১০ মে থেকে একাধিকবার ফোন করেও ছেলেকে যোগাযোগ করতে পারেননি বাবা-মা। অবশেষে ছেলের খোঁজে এক আত্মীয়কে তার হস্টেলে পাঠান তাঁরা। সেই আত্মীয় ঘরে ঢুকে উদ্ধার করে মৃত উমেশকে। উমেশের মা-ও রাজীবের মতোই কান্নাভেজা গলায় সেদিন বলছিলেন, 'এরা সকলে মিলে ছেলেকে মেরে ফেলেছে।'

আত্মহত্যা কোটায় কোনও নতুন ঘটনা নয়। তা প্রতিরোধের জন্য কোটা জুড়ে নানান হেল্পলাইন নম্বর লেখা 'বিজ্ঞাপন'-এর ছড়াছড়ি। কোচিং সেন্টারে বিজ্ঞাপনের ভিড়ে এইসব বিজ্ঞাপনগুলোও উঁকি দেয়। সেখানে দাবি করা হয়, পড়ুয়াদের ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়া হবে। কোচিং সেন্টারগুলিও পেশাদার মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করেছে, পুলিশও উদ্যোগ নিয়েছে আলাদাভাবে। তাও কি কমছে আত্মহত্যার সংখ্যা?

অনেকে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে অভিভাবকদেরই কাঠগড়ায় তুলছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা: কোনও বাচ্চা ছোট থেকে স্কুলে টপ করলেই অভিভাবকদের মধ্যে তাকে নিয়ে আলাদা প্রত্যাশা তৈরি হয়। কিন্তু সেই বাচ্চা যখন কোটায় আসে, তখন সে বাস্তবের মাটিতে নেমে আসে। বুঝতে পারে এই প্রতিযোগিতা সহজ নয়। তখন অনেক বাচ্চা বাড়ি ফিরে যায়, অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

২০২৩ সালে বিহারের রোহতাসের নিশান্তও হর্ষরাজের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর একটি সুইসাইড নোট মিলেছিল। তাতে লেখা ছিল: 'মা-বাবা, তোমরা আমার জন্য অনেক কিছু করেছ। আমি পারলাম না। আমাকে ক্ষমা করে দাও।'

নালন্দার হর্ষরাজ শঙ্করও ক্ষমা চেয়েছেন। চিরকুটে লেখা একটিই শব্দ: ‘সরি’।

হর্ষরাজের কাকাও ক্ষমাপ্রার্থনা চেয়েছে…  সরকারের থেকে।

ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করার আবর্তে এভাবেই নিয়ত ক্ষয়ে চলেছে প্রাণ৷ উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতি দেওয়া কোটা ফ্যাক্টরির অন্ধকার গহ্বর কেড়ে নিচ্ছে হর্ষরাজদের মতো তরতাজা ভবিষ্যৎ। 


ভিডিও স্টোরি