ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ। ভারতীয় আকাশসীমায় তুরস্কের ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এর জেরে ভারতীয় ট্রাভেল সংস্থাগুলি তুরস্ক ও আজারবাইজানে পর্যটন স্থগিত করেছে।
তুরস্ক ভ্রমণ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা।
শেষ আপডেট: 13 May 2025 19:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি গত কয়েক বছর ধরেই দেশের সীমানা পেরিয়ে পা রেখেছে বিদেশ সফরে। বিদেশ সফর বলতেই যে আমেরিকা-ইংল্যান্ডের কথা মাথায় আসে, তার বাইরেও যে বিদেশভ্রমণের বিশাল পরিসর আছে, বলতে গেলে তা যেন ‘আবিষ্কার’ করে ফেলেছে বাঙালি। ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলিও কোমর বেঁধে একের পর এক ট্র্যাভেল প্ল্যানের আয়োজন করে চলেছেন। ব্যাঙ্কক, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের দিকে যেমন অবাধ ভ্রমণ বেড়েছে, তেমনি সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছে তুরস্ক, গ্রিস, আজারবাইজানের মতো দেশগুলিও। একদিকে অনন্যসুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সেই সঙ্গে ইতিহাসের হাতছানি— সবই মেলে তুলনামূলক বেশ কম খরচে।
তথ্য বলছে, প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভারতীয় পর্যটক তুরস্কে যান, যার বড় অংশ বাঙালি। ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। ফুলেফেঁপে উঠেছে সে দেশের পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু এবার সে গুড়ে বালি ছিটিয়ে দিল ভারত-পাক অশান্তি।
পহেলগামের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দু’দেশের চরম পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করেছে তুরস্ক। বিপুল সামরিক সহযোগিতা করেছে তাদের। এতেই উদ্বিগ্ন ভারতের গোয়েন্দা ও সরকারি সংস্থাগুলি। ইতিমধ্যেই প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, পাকিস্তান সীমান্তে ব্যবহৃত ড্রোনগুলোর বেশিরভাগই তুরস্কের তৈরি।
এই অবস্থায় ভারতের বৃহত্তম ট্রাভেল সংস্থাগুলি তুরস্ক ও আজারবাইজানে সমস্ত প্যাকেজ, টিকিট এবং হোটেল বুকিং স্থগিত করেছে। ট্র্যাভেল এজেন্সি ইক্সিগো-র সিইও অলোক বাজপেয়ী ঘোষণা করেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। রক্ত আর ভ্রমণ একসঙ্গে চলতে পারে না। এটা দেশের ব্যাপার, এই নিয়ে আমরা দু’বার ভাবব না। জয় হিন্দ।’
শুধু এজেন্সির তরফেই বুকিং বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে তা নয়, অনেক পর্যটকও এই পরিস্থিতিতে তুরস্ক যেতে চাইছেন না ভারত থেকে। বহু সংস্থার তরফে জানা গেছে, এই বছরে তুরস্ক ভ্রমণের বুকিং ৮০ শতাংশই বাতিল হয়ে গেছে। আজারবাইজানেও চাহিদা মারাত্মকভাবে কমেছে।
এই অবস্থার পরে আবার নড়ে বসেছে তুরস্ক। সে দেশের পর্যটন বিভাগের তরফে একটি খোলা চিঠিতে ভারতীয়দের তুরস্ক সফর বাতিল না করার আবেদন জানায়। চিঠিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, তবে এর সত্যতা এখনও নিশ্চিত নয়। এই চিঠি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীরা।
কারণ শত্রুদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের এই সামরিক ও কূটনৈতিক আঁতাত যা কিনা স্পষ্টতই ভারতের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক অবস্থান, তা নিয়ে যথেষ্ট অসন্তোষ জমেছে সব মহলে। পাশাপাশি, নতুন করে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাও তৈরি হয়েছে। ফলে ভারতের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির কথা ভেবে তুরস্ক সফরে পূর্ণচ্ছেদ বসতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল পহেলগাম হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কাশ্মীর ইস্যুতে ‘কড়া সমর্থন’ প্রকাশ করেন। এর পরে পাকিস্তানে ছ’টি তুর্কি সামরিক বিমানও নামে বলে জানা যায়, যেগুলির মধ্যে অস্ত্র ভর্তি ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। এরপর তুরস্ক তার যুদ্ধজাহাজও পাকিস্তানের করাচি বন্দরে পাঠায়।
এর পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর তুরস্কই একমাত্র দেশ, যারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের অভিযানকে ‘নাগরিক হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করে এবং ‘পাক শহিদদের জন্য প্রার্থনাও’ করে।
এসবের পরে তুরস্কের উপর থেকে ভারতের মন উঠে যাওয়া খুব স্বাভাবিক বলেই মনে করছে সব মহল। এই যুদ্ধের আবহে ঢেউ তোলা জাতীয়তাবোধের কাছে কম পড়ে যাচ্ছে সে দেশের অনন্যসুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও।