দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ও শহরে ছড়িয়ে থাকা এই কেলেঙ্কারি চক্রে রয়েছেন একাধিক শীর্ষস্থানীয় সরকারি অফিসার, দালাল, শীর্ষ শিক্ষাবিদ এবং একজন স্বঘোষিত গুরুও।
স্বঘোষিত গুরু রাওয়াতপুরা সরকার ওরফে রবিশঙ্কর মহারাজ। ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 5 July 2025 10:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেশের মেডিক্যাল কলেজ কেলেঙ্কারির মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম কেলেঙ্কারির হদিশ বের করল সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI)। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ও শহরে ছড়িয়ে থাকা এই কেলেঙ্কারি চক্রে রয়েছেন একাধিক শীর্ষস্থানীয় সরকারি অফিসার, দালাল, শীর্ষ শিক্ষাবিদ এবং একজন স্বঘোষিত গুরুও।
সিবিআইয়ের এই চোখ কপালে তুলে দেওয়া তদন্ত দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থার শিকড় ধরে নাড়া দিয়েছে। দেশজুড়ে এই ঘুষচক্রে অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন, ডিপি সিং (প্রাক্তন ইউজিসি চেয়ারম্যান তথা বর্তমানে TISS-এর আচার্য), স্বঘোষিত ‘দেবপুরুষ’ রাওয়াতপুরা সরকার, ইন্দোরের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজের সুরেশ সিং ভাদোরিয়া সহ অসংখ্য দালাল এবং সরকারি কর্তা।
এফআইআরে সিবিআই ৩৫ জনের নাম নথিভুক্ত করেছে। তার মধ্যে রয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত আইএফএস অফিসার সঞ্জয় শুক্লা। তিনি রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটির (RERA) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তার আগে ছত্তীসগড় বন বিভাগ ও পিসিসিএফ-এর প্রধান ছিলেন। গুরু রাওয়াতপুরার দলের একজন ট্রাস্টি ছিলেন শুক্লা। যদিও এই কেলেঙ্কারিতে এখনও পর্যন্ত মাত্র একজন অতুল তিওয়ারি গ্রেফতার হয়েছেন।
রাজস্থান, গুরুগ্রাম, ইন্দোর, ওয়ারাঙ্গল ও বিশাখাপত্তনমে বিস্তৃত এই চক্রের বিরুদ্ধে ভুয়ো শিক্ষক তালিকা, ভুয়ো পরিদর্শন এবং ফাইল ফাঁস করার অভিযোগ রয়েছে। যার সঙ্গে জড়িত কয়েক কোটি টাকার লেনদেন ও ঘুষ। এই অর্থ বিনিময় হয়েছে হাওয়ালা ও ব্যাঙ্ক মারফত। সিবিআই জানতে পেরেছে, এই চক্র কাজের সুবিধায় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কয়েকজন অফিসারকেও সঙ্গী করেছিল।
তদন্তের সূত্রপাত হয়েছিল, রায়পুরের শ্রী রাওয়াতপুরা সরকার ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চের পরিদর্শন থেকে। হাসপাতালের পরিকাঠামো পরিদর্শন করে মিথ্যা শংসাপত্র দেওয়ার জন্য তিন ডাক্তার সহ ৬ জনকে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। ওই শংসাপত্র জোগাড়ের জন্য ৫৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ডাক্তারদের সিবিআই বমাল গ্রেফতার করেছিল। পরিদর্শক দলের এক সদস্যের কাছ থেকে ৩৮.৩৮ লক্ষ টাকা এবং অন্য এক অফিসারের বাড়ি থেকে ১৬.৬২ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। সিবিআই জানায়, গোটা বিষয়টি একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত ছিল। টাকার বিনিময় হয়েছে হাওয়ালার মাধ্যমে এবং পরিদর্শক দলের মধ্যে বিলি করা হয়েছিল।
রায়পুর দিয়ে শুরু হলেও তদন্তের গতিপ্রকৃতি তা দেশজোড়া কেলেঙ্কারির খনিমুখ খুলে দেয়। এর মধ্যেই আতসকাচের তলায় চলে আসেন রাওয়াতপুরা সরকার ওরফে রবিশঙ্কর মহারাজ। দেশের বড় বড় আমলা, রাজনীতিক ও মন্ত্রীদের সঙ্গে মহারাজের দহরম-মহরম সিবিআই কর্তাদের সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। বাবা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু এই শিরোনামে বেশ কিছু আইএএস, আইপিএস এবং জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি ভাইরাল ছিল সেই সময়েই।
মহারাজের এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্প, রাস্তা তৈরি ও বিদ্যুৎ ভরতুকি গ্রহণের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধ জোর করে জমি অধিগ্রহণ, অননুমোদিত কলেজ চালানো, পড়ুয়াদের জোর করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া এমনকী আশ্রমের ভিতরে মহিলাঘটিত হেনস্তারও অভিযোগ রয়েছে।