শেষ আপডেট: 6th December 2024 14:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কর্মক্ষেত্রে 'বিষাক্ত পরিবেশ' সৃষ্টি সহ ১০০ দিনের কাজের টাকা থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদের শীত অধিবেশনের গোড়া থেকেই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস শুধুমাত্র আদানি ইস্যুতে রাজ্যসভা ও লোকসভা অচল করে দিচ্ছে। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের অভিযোগকেই শুক্রবার রাজ্যসভায় তুলে ধরলেন সাকেত গোখেল। শীত অধিবেশনের প্রথম থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ও তৃণমূল নেতৃত্ব বলে চলেছে তারা সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরবে। এক এবং একমাত্র ইস্যু আদানি নয়।
এদিন তৃণমূলের রাজ্যসভা সদস্য সাকেত গোখেলও দলের নির্দেশ মতো জিরো আওয়ারে ১০০ দিনের টাকার প্রসঙ্গ তোলেন। একইসঙ্গে তিনি বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের সুব্যবস্থার উন্নতির দাবি জানান। তাঁর অন্যান্য দাবির মধ্যে ছিল বিষাক্ত কর্ম সংস্কৃতি, শ্রম আইন নিয়ন্ত্রণ সহ সাধারণ প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যাগুলি। দেশের সাধারণ জনতার প্রতি অবহেলা ও বঞ্চনার কথা উঠে আসে তৃণমূল এমপি-র কথায়।
.@SaketGokhale’s #ZeroHour mention in #RajyaSabha on the need to improve well-being of employees in the pvt sector: Toxic work culture; pvt sector reform; labour law regulation; #MGNREGS workers in #Bengal not paid - deprivation of people#BengalMeansBusiness pic.twitter.com/Mx0YKzE3Hp
— AITC in Parliament (@AITC_Parliament) December 6, 2024
সাকেত এদিন রাজ্যসভায় বেসরকারি কোম্পানিগুলিতে কাজ করা অসহায় কর্মীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরব হন। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে বেসরকারি কর্মীদের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি তোলেন। তিনি রাজ্যসভায় বলেন, অত্যধিক কাজের চাপ ও মানসিক চাপের দরুন একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মী আন্না সেবাস্তিয়ান পেরাইলের মৃত্যুর পর তাঁর মা অনিতা অগাস্টিনের চিঠি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। একইসঙ্গে তা অত্যন্ত ভয়ানক এক প্রবণতা। কাজের চাপ কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে।
সাকেত বলেন, অনেক কর্মী বলছেন, এটা বেশিরভাগ বেসরকারি কোম্পানি ও কনসালটেন্সিতে প্রচলিত নিয়ম হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই প্রথা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কম মজুরি বা বেতন, অতিরিক্ত সময় খাটানো বা কাজের সময় ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেওয়া, কর্মচারীদের উপর অমানুষিক ব্যবহার রোধে কঠোর ও শাস্তিমূলক আইন প্রণয়নের উপর জোর দেন তিনি।
সাকেত আরও বলেন, এই বিষাক্ত কর্ম সংস্কৃতি দেশে এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সমস্ত কর্মীদের যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন দিতে হবে। এবং কাজের সময় নির্দিষ্ট করতে হবে সরকারকে। তার বেশি সময় কাউকে খাটানো চলবে না। এর আগে সাকেত মহারাষ্ট্র সরকারকে চিঠি লিখে আন্না সেবাস্তিয়ানের কাজের চাপ নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন।
কাজের সময় নিয়ে সম্প্রতি খুবই চলছে। বিশিষ্ট শিল্পপতি নারায়ণ মূর্তি সহ অনেকেই ১৬-১৮ ঘণ্টা কাজের পক্ষে যুক্তি তুলেছিলেন। কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেস চায়, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটুক। কারণ, যে পরিবার প্রতিপালনের জন্য মানুষ কাজ করে, সেই পারিবারিক ও সামাজিক জীবন থেকে মানুষ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। মানসিক ব্যাধির মতো কাজের চাপে ভুগছেন সাধারণ কর্মীরা।
একইসঙ্গে ১০০ দিনের কাজের টাকা না দেওয়া নিয়েও রাজ্যসভায় মুখ খোলেন তিনি। কারণ এতে গ্রামগঞ্জের লক্ষ লক্ষ মানুষ নিশ্চিত আয়ের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি মার খাচ্ছে।
শিল্প, ক্ষুদ্রশিল্প, বাণিজ্য, হস্তশিল্পে বাংলার অগ্রগতির খতিয়ান
পরে সংসদ চত্বরে তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য আরও বলেন, বাংলায় বর্তমানে ১.৪৫ লক্ষ সক্রিয় কোম্পানি রয়েছে, যা দেশে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ২০২১ সালের SKOCH State of Governance Report অনুযায়ী, ব্যবসার সুবিধায় বাংলা জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষে। ফলে এখানে সুস্থ কর্ম সংস্কৃতি গড়ে তুলতে রাজ্য সরকার বদ্ধ পরিকর।
গত দশ বছরে বাংলার রফতানিও দ্বিগুণ বেড়েছে। ৫৫ হাজার কোটি টাকা থেকে তা পৌঁছেছে ১.১ লক্ষ কোটি টাকায়। এই সময়ে যুক্ত হয়েছে ৫৭ লক্ষ নতুন MSME (ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ), যা ১.৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। MSME ক্লাস্টারের সংখ্যা ৪৯ থেকে বেড়ে ৬৫৪-এ দাঁড়িয়েছে।
বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পে ৫.৪ লক্ষ কর্মী কাজ করেন, যা দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত পাঁচ বছরে রাজ্যে চালু হয়েছে ৩,৪০০-রও বেশি স্বীকৃত স্টার্টআপ, যা ৩০,০০০-এরও বেশি সরাসরি কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিয়েছে।
সিমেন্ট শিল্পে দেশের ৯টি বড় সিমেন্ট কোম্পানি বাংলায় কার্যক্রম চালায়। তাই বাংলা পরিচিতি পেয়েছে ‘ভারতের সিমেন্ট হাব’ নামে। বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি (IT) শিল্পের প্রসার হয়েছে খুব কম সময়ের মধ্যে। বাংলায় ১,০০০-এর বেশি সফটওয়্যার কোম্পানি কাজ করছে। নতুন সিলিকন ভ্যালি ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে, যেখানে ২০,০০০ কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে। নিউটাউনের রাজারহাটে ২০০ একর জমিতে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি টেক হাব। এই প্রকল্পে US সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি GlobalFoundries যুক্ত, যা ভারত এবং আমেরিকার যৌথ বিবৃতিতে রয়েছে।