শেষ আপডেট: 21st September 2024 15:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কথায় আছে 'ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ' কারণ প্রচলিত ছড়ায় বলে, ঘিতে বুদ্ধি বৃদ্ধি ঘটে। ফলে ডাক্তারের পরামর্শমতো যতই হৃদয় শক্ত রাখতে ঘি নিয়ে নাক কোঁচকান না কেন, মা যশোদার হাতে তৈরি ঘি-র পুষ্টিগুণ অনেক। কিন্তু, তা খাঁটি-নির্ভেজাল হওয়া চাই। কারণ, ভেজাল ঘি উপকারের পরিবর্তে ডেকে আনতে পারে অনর্থ। জাত খোয়াতেও হতে পারে।
সমস্যা হচ্ছে, ভেজাল ঘি চিনবেন কী করে! বাজারে বিক্রি হওয়া সব কোম্পানিই যখন বিশুদ্ধ দেশী ঘিয়ের বিজ্ঞাপন করে, তখন আপনার পাতে পড়া ঘি-তে কী কী আছে তা কি জানেন? বিশেষ করে তিরুপতি মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডু তৈরির মূল উপাদান ঘিতে যখন গোরু-শুয়োরের চর্বি ও মাছের তেল মেশানো নিয়ে বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছে! এমনকী শুদ্ধতার বড়াই করা পতঞ্জলির ঘি নিয়েও রয়েছে নানান প্রশ্ন। পতঞ্জলির বিভিন্ন উৎপাদনে পশুর হাড়ের গুঁড়ো ব্যবহারের অভিযোগ তো বহু পুরনো।
ফুড অ্যান্ড ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গুজরাতের নওসারিতে একবার ৩০০০ কেজি ভেজাল ঘি আটক করেছিল। তারও আগে দিল্লির মালব্য নগরে ৪৫০ কেজি ভেজাল ঘি উদ্ধার হয়। ফলে আপনি বা আমরা ঘি বলে যা খাচ্ছি, তা আদৌ ভেজালে ভরা সুগন্ধী মেশানো পৃথক কিছু কিনা চেনাটা বিরাট জরুরি। ফলে পাড়ার দোকান থেকে বাজারচলতি ঘি কেনার আগে জেনে নিন ঘি চিনবেন কী করে।
'গলানো সোনা' ঘিয়ের জন্ম ভারতে
রাখালরাজা গোপালের নানান পুরাগল্প থেকে অনেকেই জানেন কীভাবে মা যশোদা মাখন থেকে ঘি তৈরি করতেন। আর দুধ থেকে তোলা ননী কীভাবে গোপাল চুরি করতেন। কিন্তু, সেই ঘিয়ের বদলে এখন পুরোটাই জুয়োচুরি চলছে ঘি প্রস্তুতে। ভারতের আবহাওয়ায় মাখন মজুত করে সম্ভব নয়। তাই লবণ না মেশানো তোলা মাখন ফুটিয়ে গলানো সোনা ঘি তৈরি করা হয়। ভারতের গো-প্রধান অঞ্চল থেকে এই পুষ্টিকর খাদ্য উপকরণ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশীয় ও আরব দেশগুলিতে বিস্তৃত হয়।
ঘিয়ের আবিষ্কর্তা 'প্রজাপতি'
সৃষ্টিকর্তা প্রজাপতি নিজের দুহাত ঘষে ঘি আবিষ্কার করেন এবং সেই আগুনে ঢেলে সৃষ্টি করেন। পুরাণের সেই কাহিনি থেকে এ পর্যন্ত ভারতের হেঁসেলে অন্যতম উপকরণ হল ঘি। শুধু খাবারেই নয় বেশ কিছু অসুখেও ঘি ধন্বন্তরির কাজ করে। কিন্তু, তা খাঁটি হওয়াই হল জরুরি, তা না হলে বিপরীত ফল।
ঘিয়ে রয়েছে উপকারী ফ্যাট বা বুট্রাইরেট অন্য ভাষায় ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হজমে সাহায্য করে। ঘিতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রসদ। ইদানীংকার গবেষণায় প্রমাণিত যে, ঘিতে থাকা আবশ্যিক ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের পক্ষে ভালো। আয়ুর্বেদিকে ঘি দিয়ে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়ার কথাও আছে।
খাঁটি-ভেজালের তফাত বুঝবেন কীসে?
খাঁটি বা বিশুদ্ধ ঘি হল সোনালি রঙের, ঘন এবং তেলতেলে। আলোর বিপরীতে রাখলে স্বচ্ছ দেখা যাবে। ফ্যাকাশে রঙের ঘি মানেই তাতে ভেজাল রয়েছে। আসল চেনার এটাই সহজতম উপায়। এরপরে ঘিয়ের প্যাকেজিং এবং লেবেলের দিকে নজর রাখতে হবে। সত্যিকারের ঘি কোম্পানির প্যাকেট বা বোতলে সব সরকারি স্বীকৃতির শংসা থাকবে। এরপরে ধাপে হল, ঘিয়ের গন্ধ। ঘিয়ে যেন কখনও পোড়া পোড়া গন্ধ না বেরয়।
এছাড়াও খাঁটি ঘি চেনার নানান উপায় আছে। যেমন আপনার হাতের তালুতে একটুখানি ঘি ঢালুন। যদি সেই ঘি সঙ্গে সঙ্গে গলতে শুরু করে, তাহলে বুঝবেন বিশুদ্ধ। একগ্লাস জল নিন। সেখানে একটু ঘি দিন। যদি ঘি ভাসতে থাকে তাহলে বুঝবেন আসল। ডুবে গেলে মনে করবেন ভেজাল রয়েছে। ঘিয়ে দুই ফোঁটা আয়োডিন দিন। যদি ঘিয়ের রং বেগুনি হয়ে যায়, তাহলে বোঝা যাবে এতে স্টার্চ আছে।
সর্বশেষ উপায়টি হল, একটি পাত্রে ঘি নিয়ে ফোটান। যদি পোড়া গন্ধ বেরয়, তাহলে বুঝবেন এটা বিশুদ্ধ নয়। বুদবুদ বেরতে থাকলেও বুঝবেন এতে অন্য কিছু মেশানো আছে। ফোটানো ঘি একটি পাত্রে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। যদি ওই জারে একটি বা একাধিক স্তর পড়েছে বলে দেখতে পান তাহলে বুঝবেন ওতে অন্য তেল মেশানো আছে।
তিরুপতির লাড্ডু কাণ্ডের আগে পতঞ্জলির বিশুদ্ধ গব্য ঘৃত বলে যা বিক্রি হয়, তাতেও ভেজাল মেশানোর অভিযোগ উঠেছিল। এমনকী উত্তরাখণ্ডের একটি দোকান থেকে কিনে নমুনা পরীক্ষাতেও তাতে খাদ্য নিরাপত্তা বিধি না মানার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।