১৯৯০-এর দশকে ছাত্রসংখ্যা ছিল হাজারের বেশি। তখন কাউকে ভর্তি করতে সুপারিশ লাগত। কিন্তু গত এক-দেড় দশকে ছবিটা আমূল বদলেছে।
শেষ আপডেট: 20 June 2025 15:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্কুল আছে, শিক্ষক আছেন, সরকার বেতনও দিচ্ছে কিন্তু সেই স্কুলে একটিও ছাত্রছাত্রী নেই। তেলঙ্গনার খাম্মাম জেলার আসনাগুর্থি (Asnagurthy) গ্রামের এক সরকারি স্কুলের এই চিত্র যেন এক নীরব অথচ গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি।
এক সময়ের প্রাণবন্ত জেলা পরিষদ হাই স্কুল (Zilla Parishad High School) আজ কার্যত অস্তিত্বসংকটে ভুগছে। এই শিক্ষাবর্ষেও নতুন করে একজনও ভর্তি হয়নি- এ নিয়ে টানা তৃতীয় বছর এমনটা ঘটল।
স্কুলে বর্তমানে রয়েছেন তিনজন শিক্ষক, যাঁদের মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষিকা। তাঁরা নিয়মিত স্কুলে আসেন, সই করেন, তারপর খালি হাতে বাড়ি ফিরে যান। কারণ ক্লাসে তাঁদের অপেক্ষায় কোনও ছাত্রছাত্রী বসে নেই। প্রতিদিন শুধু রোল কলের ‘উপস্থিতি’ খাতা পূরণ করে দিন শেষ। আবার পরের দিনের অপেক্ষা।
তাঁদের মাসিক বেতন ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে, অর্থাৎ সরকার মাসে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা, বছরে ৪০ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করছে একেবারে ফাঁকা একটা স্কুল চালাতে। তেলঙ্গনা সরকারের শিক্ষা খাতে বিপুল ব্যয়ের এই বাস্তব চিত্র অনেক প্রশ্ন তুলছে।
স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। আশপাশের ১০–১৫টি গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র ভরসা ছিল এই স্কুল। ১৯৯০-এর দশকে ছাত্রসংখ্যা ছিল হাজারের বেশি। তখন কাউকে ভর্তি করতে সুপারিশ লাগত। কিন্তু গত এক-দেড় দশকে ছবিটা আমূল বদলেছে।
এখন বেসরকারি স্কুলের চাহিদা বেড়েছে। সরকার নিজেই ‘গুরুকুল’ আবাসিক স্কুল প্রচার করেছে। শিক্ষকদের ঘন ঘন বদলি যেমন হয়েছে, তেমনই নতুন কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে অভিভাবকদের ভরসা অনেকাংশেই উঠে গেছে সরকারি স্কুলের ওপর থেকে।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার সমস্ত পরিকাঠামো এই স্কুলে আছে। ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকাঠামোও রয়েছে।
স্কুলের বেশিরভাগ প্রাক্তনীই জীবনে সফল। কেউ এখন সরকারি চাকুরিজীবী, কেউ বা প্রবাসী। শৈশবের স্কুলের স্মৃতিতে ডুবে গিয়ে তাঁরা কেউ কেউ নিজেদের উদ্যোগে স্কুলে ২০টি কম্পিউটার, একটি টিভি ও নানা প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দান করেছেন। সকলের উদ্দেশ্য একটাই, প্রিয় স্কুলকে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু একজন ছাত্রও ফেরেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য একই, গত কয়েক বছরে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকদের ভরসা উঠে গেছে। তাঁদের মতে, একসময় এই স্কুলে যথেষ্ট শিক্ষক থাকতেন, সব ক্লাস ঠিকঠাক চলত। কিন্তু বারবার বদলি এবং নতুন নিয়োগ না হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে সেই ব্যবস্থাটি। এর ফলেই শুরু হয় ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়া এবং অবশেষে আজকের এই পরিণতি।