শেষ আপডেট: 21 March 2025 13:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'এই আদালত আবর্জনার ঝুড়ি নয়।' দিল্লি হাইকোর্টের (Delhi High Court) বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর তাঁর বদলির নির্দেশ দেওয়া হয় এলাহাবাদ হাইকোর্টে। নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। যা কানে পৌঁছনোর পরই রে রে করে উঠল সেখানকার বার অ্যাসোসিয়েশন। প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিদের উদ্দেশে চিঠি লিখে বিচারপতি বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাঠানোর (patriation) সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে তারা। সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে হতবাক তারা, এমনও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে লেখা হয়ে, 'এই সিদ্ধান্ত বিচার ব্যবস্থা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে – এলাহাবাদ হাইকোর্ট কি তবে আবর্জনার ঝুড়ি? যেখানে দীর্ঘদিন ধরে বিচারপতির ঘাটতি রয়েছে, সেখানে এই পরিস্থিতি বাড়তি চিন্তার বিষয়। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বার অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ নেওয়া হয় না, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। যোগ্যতার মানদণ্ড ঠিকমতো দেখা হচ্ছে না, ফলে বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এবং জনসাধারণের বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে।'
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কপিল সিব্বল ও ইন্দিয়া জয়সিঙের মতো আইনজীবীরাও। রাজ্যসভায় এই প্রসঙ্গ উঠলে সাংসদ ও প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল দেশের বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগকে গুরুতর সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, 'এটি নতুন কোনও বিষয় নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। সুপ্রিম কোর্টকে বিচারপতিদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে ভাবতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া উচিত।'
বিচার ব্যবস্থার জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ। তিনি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন, 'আপনি দয়া করে এই বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ করুন এবং সরকারকে বিচার ব্যবস্থার জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিন।' পরিপ্রক্ষিতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় জানান, তাঁকেও বিষয়টি ভাবাচ্ছে। তিনি চিন্তিত এই ভেবে যে, এই ঘটনা ঘটেছে অথচ সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসেনি। ধনকড় বলেন, 'যদি এমন টাকা কোনও রাজনীতিবিদ, আমলা বা শিল্পপতির ঘর থেকে উদ্ধার হত, তবে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে টার্গেট করা হত। তাই আমি নিশ্চিত যে, স্বচ্ছ, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এনিয়ে কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বিরাট প্রশ্ন তোলেন। মনে করিয়ে দেন তাঁর নেতৃত্বে হওয়া মামলাগুলি। 'এটা ভয়ঙ্কর ঘটনা। এই টাকাগুলো কার? এই বিচারপতির এজলাসেই উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডের মতো ঘটনার মামলার বিচার হয়েছে। খতিয়ে দেখা হোক তাঁকে কারা কী কারণে টাকা দিয়েছিল' বলেন তিনি।
এদিকে এই ঘটনায় এবার দিল্লি হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। দিল তদন্তের নির্দেশ।
বিচারপতির দিল্লির বাংলোয় মঙ্গলবার সকালে আগুন লাগে। দমকল (fire brigade) আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভিতরে ঢুকে অনুসন্ধানে নামে কোথাও আর পকেট ফায়ার আছে কিনা। তাঁরা সেসময় বাড়িতে ছিলেন না। দেখা যায়, বাড়ির ভিতরের একটি ঘর বন্ধ। সেই ঘরেও আগুন লেগেছে কিনা বুঝতে সেটি ভাঙা হয়। ঘরের মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত থরে থরে টাকার বান্ডিল সাজানো অবস্থায় পাওয়া যায়। যা দেখে চোখ কপালে ওঠে তাঁদের। জানানো হয় পুলিশে।
তারা বিষয়টি দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নজরে আনে। খবর যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার (Chief Justice of India Sanjib Khanna) কানে। তিনি সময় নষ্ট না করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কলেজিয়ামের (Supreme court collegium) বৈঠক ডাকেন। এই কলেজিয়াম হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ, বদলি এবং চাকরি জীবনের সব কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কলেজিয়াম সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচারপতি বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে (Allahabad High court) বদলির আদেশ দেয়।
কিন্তু বিচার বিভাগের লোকজন বদলিকে সাজা বলে মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, বিচারপতি বর্মাকে পদত্যাগ করতে বলা হোক। তিনি রাজি না হলে তাঁর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস রুজু করে সাসপেন্ড করা হোক। তারপর সংসদে ইম্পিচ করে তাঁকে চাকরি থেকে সরানো হোক। সংশ্লিষ্ট সব মহল নিশ্চিত, বিচারপতি বর্মা ঘুঁষের টাকা বাড়িতে রেখেছেন। দাবি উঠেছে, তাঁর দেওয়া রায়গুলি পর্যালোচনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ বেঞ্চ গঠন করুক। সিবিআই তদন্তেরও দাবি উঠেছে।
তারপরই শুক্রবার দুপুরে তদন্তের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়।