শেষ আপডেট: 2nd November 2024 12:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু, তামিলনাড়ুর একরত্তি গ্রাম তুলাসেন্দ্রাপুরমে যেন উৎসাহটা একটু বেশি। সবুজ শস্যক্ষেত্রে মোড়া কৃষিজীবী এই গ্রামীণ তামিলনাড়ুর কয়েকশো মানুষ 'গ্রামের মেয়ে' কমলা হ্যারিসের জয়ের প্রার্থনায় ঠাকুর জপে চলেছেন। তাঁদের কাছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভারসাম্য, বৈষম্য, দাঁওপ্যাঁচের চেয়েও বড় প্রাপ্তি হবে, যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গী মহিলা প্রেসিডেন্ট হন তো! কারণ এই গ্রামের মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে তাঁর ধমনীর রক্ত।
এই ছোট্ট গ্রামেই রয়েছে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মায়ের বাপেরবাড়ির স্মৃতি। তাঁর দাদু পিভি গোপালনের বাড়ি। গোপালনের মেয়ে শ্যামলা স্কলারশিপ পেয়ে ১৯ বছর বয়সে আমেরিকা চলে যান ডাক্তারি পড়তে। তারপর সেখানেই পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন। জন্ম নেয় প্রথমে কমলা এবং মায়া নামে দুই মেয়ে। ওই পরিবার এই গ্রামে আর কখনও থাকেননি। তবে কমলা ছোটবেলায় গ্রামে এসেছিলেন।
সেই কমলাকে আজও ভোলেনি গ্রাম। সেখানে ইতিমধ্যেই পোস্টার-ব্যানার পড়েছে কমলার সমর্থনে। লোকের বাড়ি-দোকানে টাঙানো হয়েছে, সাঁটা হয়েছে কমলা হ্যারিসের ছবিসহ ব্যানার। শ্রীধর্মশাস্ত্র মন্দির যেখানে গ্রামের লোক দিনের মধ্যে একটিবার অন্তত আসেন, সেখানে একটি বিশাল বড় ব্যানার টাঙানো হয়েছে। যেখানে তামিল ভাষায় লেখা রয়েছে, গ্রামের আদরের মেয়ে কমলা হ্যারিস জয়ী হন। কমলা হ্যারিসের পরিবার এই মন্দিরে প্রচুর টাকা দান করেছেন। কমলার নামে একটি দরজা নির্মাণে এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া ডঃ সরলা গোপালন ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষকে।
গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অশীতিপর এন কৃষ্ণমূর্তি স্কাই নিউজকে বলেন, উনি এই গ্রামকে গৌরবান্বিত করেছেন। এ গ্রামের কেউ এরকম কাজ করতে পারেননি। আরও কয়েক দশক কিংবা শতকের মধ্যে এই গ্রামকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরতে আর কেউ পারবেও না। অবিশ্বাস্য সাফল্য! আজ আমাদের গ্রাম বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে তাঁর জন্য। আমরা তাঁকে এর জন্য ধন্যবাদ জানাই এবং জয় প্রার্থনা করি। গ্রামের আরেক বাসিন্দা বালাম্বিকা বলেন, কমলা আমাদের গ্রামের মেয়েদের মাথা উঁচুতে তুলে ধরেছেন। ১৯ বছরের সদ্য কলেজছাত্রী মধুমিতা বলেন, তাঁকে দেখে অনুপ্রেরণা পাই।
মন্দিরের গায়ে থাকা এক মুদি দোকানের মালিক মণি জানান, উনি জিতলে গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করা হবে। গ্রামের সব লোকের মুখেই এক কথা, এই গ্রাম কমলার দাদুর গ্রাম। ২০২৩ সালে কমলা নিজেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলেছিলেন, আমার কাছে ভারতের গুরুত্ব খুবই বেশি। আমার মা আমাকে আর ছোট বোন মায়াকে নিয়ে একবছর অন্তর বাপেরবাড়ি যেতেন। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন, তাঁর কোথায়, কোন বাড়িতে জন্ম হয়েছে, গ্রাম কীরকম দেখতে। সেখানে আমরা দাদু-দিদা এবং মামা-মাসিদের সঙ্গে সময় কাটাতাম।
কমলা হ্যারিস তাঁর ছেলেবেলার মামার বাড়ির গল্প করতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, আমি দাদুর হাত ধরে সমুদ্রের কিনার ধরে লম্বা পথ হাঁটতাম। দাদুর সঙ্গে তাঁর অবসর নেওয়া বন্ধুবান্ধবরা নানান বিষয়ে গল্প করতেন। আমার দাদুর কাছেই আমি মানুষের জন্য কাজ করার প্রথম পাঠ পেয়েছিলাম। তাই আজ কমলা হ্যারিসের জয় বা পরাজয় নিয়ে বিশ্বের তাবড় দেশে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, তখন তামিলনাড়ুর ছোট্ট এই গ্রাম কোলের মেয়ের শুধুমাত্র জয়ের জন্য প্রার্থনা করেই চলেছে।