শেষ আপডেট: 26th September 2024 11:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মায়ানমার থেকে নয়শো কুকি জঙ্গি মণিপুরে ঢুকেছে বলে গত সপ্তাহে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল। তারপর রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। একদিকে, নিরাপত্তা আধিকারিকেরা দফায় দফায় বৈঠক করেন। অতিরিক্ত সেনা ও আধা সেনা মোতায়েন করা হয় স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে।
অন্যদিকে, কুকিদের সংগঠনগুলি অভিযোগ করে মিথ্যা গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ করে অশান্তি বাড়াতে চাইছে সরকার। কুকিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর উদ্দেশে এটা করা হচ্ছে। কুকি জঙ্গিরা তাদের উপর হামলা চালাতে প্রস্তুত হচ্ছে ধরে নিয়ে পাল্টা হুমকি দেয় মৈতেইরা।
এক সপ্তাহ পর মণিপুরের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব সিং যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ওই রিপোর্ট ভুল ছিল। তদন্তে মায়ানমার থেকে কুকি জঙ্গি ঢুকে পড়ার কোনও সূত্র মেলেনি। প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তার এই যৌথ বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের মুখ পুড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের রিপার্ট খারিজের নজির বিরল।
কুকি জঙ্গি অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত ওই গোয়েন্দা রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের দফতর থেকে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হয়েছিল। পরে গোয়েন্দা রিপোর্টের কথা স্বীকার করে বিবৃতি নিরাপত্তা উপদেষ্টাও। যদিও নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং যৌথ বাহিনীর পরিকল্পনা ছিল রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করার পর তা প্রকাশ করা। কারণ, মণিপুর ও মায়ানমারের জঙ্গল ঘেরা পার্বত্য এলাকায় অনেক সময়ই সীমানা নিয়ে বিভ্রান্তি হয়। ড্রোন থেকে তোলা জঙ্গি তৎপরতার ছবি মায়ানমারের ভিতরে যুদ্ধরত কুকিদের হতে পারে।
গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়, সশস্ত্র কুকি জঙ্গিরা মায়ানমান থেকে মণিপুরে ঢুকছে মৈতেইদের উপর হামলা করার জন্য। তারা সংখ্যায় প্রায় নয়শো।
প্রসঙ্গত, মায়ানমারেও কুকি-জো সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস করে। বিগত কয়েক দশক ধরে তারা মায়ানমারের সেনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীন জো রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে। তাদের হাতে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র আছে। তাদের হামলায় পিছু হটেছে মায়ানমার সেনা। মায়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন কুকি-জো জঙ্গিদের দখলে। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয় মায়ানমারের কুকি কমান্ডোরা মণিপুরে কুকিদের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়াতে ঢুকে পড়েছে। মৈতেইদের উপর হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মণিপুরে এমনীতেই কুকি-মৈতেই সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন। কুকিদের অভিযোগ মৈতেই সম্প্রদায়ের মানুষ বীরেন জাতি সংঘাত উসকে দিচ্ছেন। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে রেখে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া গোয়েন্দা রিপোর্ট ঘিরে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নেয় কুকি ও মৈতেইরা। রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পুলিশ প্রধান বুধবার রাতে যৌথ বিবৃতিতে জানান, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে মায়ানমার থেকে কুকি জঙ্গি ঢুকে পড়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি।