Date : 15th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
ভারতে 'এন্ট্রি' নিল টেসলা, মুম্বইয়ে প্রথম শোরুম খুলল ইলন মাস্কের কোম্পানিক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় 'মানুষের চামড়ার' টেডি বিয়ার! তদন্তে যা জানা গেলইউনুসের ১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ, বলছে বাংলাদেশ পুলিশ, উল্টো সুর প্রধান উপদেষ্টারবাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ার অভিযোগ, আটক কাকদ্বীপের ৩৪ জন মৎস্যজীবী, বাজেয়াপ্ত দু'টি ট্রলারগালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথমবার চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর৭২ ঘণ্টায় পাঁচজন গ্রেফতার, ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা খুনের ষড়যন্ত্রকারীকে হাসনাবাদ থেকে ধরল পুলিশআবারও আকাশ কালো, রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির দাপট! দক্ষিণবঙ্গের ছয় জেলায় সতর্কতা, জল ছাড়ছে ডিভিসিভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে চিন্তায় বিহার বিজেপিও, নাম বাদ গেছে বহু দলীয় সমর্থকেরএয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার আগে জ্বালানি সুইচ নিয়ে সতর্ক করেছিল ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাবাক্ স্বাধীনতা সীমাহীন নয়, কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলায় কেন বলল সুপ্রিম কোর্ট
Rajiv Gandhi Assassination

নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনায় রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড: ‘ওয়ান আইড জ্যাক’-এর রক্তাক্ত ইতিহাস

ঘটনাটি কোনও নিছক সন্ত্রাসবাদী হামলা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা এক চিত্রনাট্য, ঠান্ডা মাথায় হত্যাছক।

নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনায় রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড: ‘ওয়ান আইড জ্যাক’-এর রক্তাক্ত ইতিহাস

গ্রাফিক্স : দিব্যেন্দু দাস

শেষ আপডেট: 4 July 2025 06:56

দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১৯৯১ সালের ২১ মে। ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় দিন। তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুম্বুদূরে এক জনসভায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ঘটনাটি কোনও নিছক সন্ত্রাসবাদী হামলা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা এক চিত্রনাট্য, ঠান্ডা মাথায় হত্যাছক। যার নেপথ্যে ছিল এলটিটিই। আর সম্পূর্ণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মূল কারিগর, শ্রীলঙ্কার এক চোখের ভয়ঙ্কর আততায়ী: শিবরাসান।

'বিয়ে'-র দিন

এই হত্যাকাণ্ডের কভারনেম ছিল ‘বিয়ে’। প্রায় এক বছর ধরে ‘বিয়ে’র আয়োজন করছিলেন শিবরাসান। যাঁর ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির শক্তপোক্ত চেহারায় একটাই গলদ, এক চোখ অন্ধ। ১ মে, ১৯৯১-এ এলটিটিই-র ‘হিট স্কোয়াড’ নিয়ে এই ব্যক্তি তামিলনাড়ুতে পা রাখেন। কুড়ি দিন পর, ইতিহাসের রক্তাক্ত পাতা লিখে ফেলেন তিনি।

Centre shuts down MDMA formed to probe Rajiv Gandhi assassination case -  The Hindu

যেভাবে তৈরি হল ভয়ঙ্কর খুনের ছক

উদুপিড্ডির বাসিন্দা শিবরাসান ছিলেন এলটিটিই-র অন্যতম কুখ্যাত ঘাতক। তামিল, তেলুগু, মালয়ালম ও হিন্দিতে সাবলীল, ভারতীয় উপমহাদেশের ভূগোল তাঁর নখদর্পণে। ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কার সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে একটি চোখ হারিয়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘ওত্তরাইকন্নান’ বা ‘ওয়ান আইড জ্যাক’ নামে।

১৯৯০ সালে চেন্নাইয়ে এক দিনে ১৪ জন ইপিআরএলএফ নেতাকে হত্যা করে এলটিটিই-র নজরে আসেন শিবরাসান। এরপরই রাজীব গান্ধী হত্যার মতো দুঃসাহসিক মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁর কাঁধে।

কেন টার্গেট রাজীব?

১৯৮৭ সালের ইন্দো-শ্রীলঙ্কা চুক্তির মাধ্যমে এলটিটিই-কে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করেছিলেন রাজীব গান্ধী। সেই চুক্তির বাস্তবায়নে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়েছিল ভারতীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী (IPKF)। কিন্তু এলটিটিই একে বিশ্বাসঘাতকতা বলে দেখেছিল। পরে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে জড়ায় তারা। এই বিরোধ থেকেই রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার আগুনে ফুঁসছিল এলটিটিই।

On the road with Rajiv Gandhi (who often drove his car himself): A  journalist remembers

২১ মে, শ্রীপেরুম্বুদূরের বিস্ফোরণ

এলটিটিই সদস্য ধানু, সবুজ-কমলা সালোয়ার কামিজ পরে মিশে যান ভিড়ে। শিবরাসান সাংবাদিক সেজে ভিতরে ঢোকেন। পরনে সাদা কুর্তা-পায়জামা, গলায় ব্যাগ, হাতে নোটবুক। নিরাপত্তা ছিল ঢিলেঢালা। রাত ১০টা ২০ নাগাদ ধানু রাজীব গান্ধীকে মালা পরিয়ে পা ছোঁয়ার ভান করেন। মুহূর্তে বিস্ফোরণ। ১৭ জনের মৃত্যু। রাজীব গান্ধীও শেষ।

ধরা পড়ে গেল এলটিটিই চক্র

আততায়ীরা পালিয়ে গেলেও জায়গায় পড়ে রইল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। হরিবাবু নামের এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরা। এই ক্যামেরার ছবিতেই ধরা পড়ে গেল হত্যাকারীদের মুখ, শিবরাসানের প্রোফাইল-সহ। এলটিটিই-র নিজস্ব নথিবদ্ধ করার নেশা ছিল, যা-ই করুক, তা ক্যামেরায় ধরতে চাইত তারা। এই এক অভ্যাসই তাদের সর্বনাশ ডেকে আনে।

শিবরাসানের পালানোর কাহিনি

তামিলনাড়ুতে একের পর এক ছদ্মবেশে আত্মগোপন করেন শিবরাসান। কখনও হিন্দু পুরোহিত, কখনও মুসলিম মৌলবি, কখনও শিখ গুরু। পরে জলের ট্যাঙ্কারে করে চেন্নাই থেকে বেঙ্গালুরু। কোণানাকুন্তে অঞ্চলে একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। সিআইডি-র টিম যখন সেই বাড়ি ঘিরে ফেলে, শিবরাসান অপেক্ষা করেন ৩৬ ঘণ্টা। তারপর গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। অন্য ছ’জন এলটিটিই সদস্য সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

কোড, ডায়েরি, এবং এক চোখ

চেন্নাইয়ের কোডুঙ্গাইয়ুরের এলটিটিই ঘাঁটি থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল, দু'টি পকেট ডায়েরি, এক নকল চোখ এবং শিবরাসানের নোটবই উদ্ধার হয়। তাতে ছিল ফোন নম্বর, ঠিকানা, আর্থিক লেনদেন ও ছদ্মনামের তালিকা। ১ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত যাবতীয় তথ্য।

এই নথিই বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)-কে সাহায্য করে রাজীব গান্ধী হত্যারহস্য ভেদ করতে।


ভিডিও স্টোরি