শেষ আপডেট: 28th November 2024 18:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা নাকি সঙ্কটমোচন মহাদেব মন্দির কিংবা জৈন মন্দির! কী ছিল রাজস্থানের আজমিরের ত্রয়োদশ শতকের প্রাচীন দরগার অতীত? যেখানে মুঘল সম্রাট আকবর এসে প্রার্থনা করেছিলেন। ইতিহাসে কথিত যে, আকবর পুত্রকামনায় মক্কা যাওয়ার পথে এই দরগায় প্রার্থনা করেন এবং পুত্রসন্তানের বাবা হন। যা বাবরের আমলে মন্দির ধ্বংস করে দরগায় রূপান্তরিত হয় বলে হিন্দুপক্ষের দাবি।
বিতর্কিত এই সৌধ ঘিরে বুধবার থেকে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তারপর প্রশ্ন উঠেছে রাজস্থানের নিম্ন আদালতে হিন্দু সংগঠনগুলি যে দাবি জানিয়েছে তার সারবত্তা কী? একঝলকে দেখে নেওয়া যাক কোন পক্ষের যুক্তি কী কী?
শিবমন্দিরের সপক্ষে আদালতে পেশ করা আর্জিতে হিন্দু সেনার প্রধান বিষ্ণু গুপ্তা এবং তাঁর আইনজীবী যোগেশ সিরোজা ১৯১১ সালে প্রকাশিত আজমিরের এক বিচারক হরবিলাস সারদার একটি বইয়ের উল্লেখ করেছেন। যে বইতে সারদা লিখেছেন, এই দরগার নীচে একটি হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে।
১৯১১ সালে স্কটিশ মিশন ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক প্রকাশিত 'আজমির: হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড ডেসক্রিপটিভ' শীর্ষক গ্রন্থে সারদা আজমির সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরেছিলেন। এই বইটিকে আজমিরের উপর জ্ঞানকোষ হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। বইতে সারদা লিখেছেন, দরগার নীচে একটি মন্দির ছিল। যা মহাদেবের মন্দির বলে লিখেছেন সারদা।
বইতে লেখা রয়েছে, খাজার ধ্বংসাবশেষ একটি ভূগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠে রয়েছে। যা কিছু ইট দিয়ে ঢাকা এবং দরগার বেশ কয়েক ফুট নীচে। দরগার চত্বর শ্বেতপাথরে মোড়া যাতে রঙিন পাথরের টুকরো খোদাই করা আছে। মধ্যস্থলে একটি রুবির মতো একটি পাথর রয়েছে। যার আকার একটি আটআনার রুপোর কয়েনের মতো। স্থানীয়দের মতে, প্রকোষ্ঠের ভিতরে একটি মহাদেবের মতো একটি আকৃতি রয়েছে যেখানে রোজ এক ব্রাহ্মণ পরিবার চন্দনের সুগন্ধী দিয়ে পুজো করে। দরগা কর্তৃপক্ষ সেই ধারা বজায় রেখে এসেছে একে ঘরেইলি বলা হয় আঞ্চলিক ভাষায়। কিন্তু মন্দির ধ্বংস নিয়ে কোনও কথা লেখা নেই তাঁর বইতে।
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক পিএম কুরি ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত 'দ্য শ্রাইন অ্যান্ড কাল্ট অফ মইনুদ্দিন চিস্তি অফ আজমির' গ্রন্থে আরএইচ আরভিনের ১৮৪১ সালের গবেষণাপত্র 'সাম অ্যাকাউন্ট অফ দি জেনারেল অ্যান্ড মেডিক্যাল টপোগ্রাফি অফ আজমির'-এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি একে প্রাচীন পবিত্র মহাদেবের মন্দির বলে উল্লেখ করেন। সুফি মতের উপাসক খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির আমলেও যার অস্তিত্ব ছিল।
কুরি লিখেছেন, সেখানে মহাদেবের একটি মন্দির ছিল। শিবলিঙ্গটি শুকনো পাতা ও জঞ্জাল দিয়ে ঢাকা ছিল। এই ঝোপঝাড় ঘেরা এলাকায় চিস্তি প্রায় ৪০ দিন বিশ্রামে ছিলেন। হরবিলাস সারদা তাঁর বইতে লিখেছেন, আজমির দরগার উত্তর দিকের ৭৫ ফুট উচ্চতার বুলন্দ দরওয়াজায় হিন্দু মন্দিরের কিছু ছাপ আছে। উল্লেখ্য, ১১৯২ সালের তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের (যেখানে পৃথ্বীরাজ চৌহানের সঙ্গে মহম্মদ ঘোরির লড়াই হয়েছিল) পর উত্তর ভারতের এক বিরাট অংশ ঘোরির পদানত হয়েছিল। ১২০৬ সালে ঘোরির মৃত্যুর পর মামলক বা দাস বংশের কুতুবউদ্দিন আইবক প্রথম সুলতান হন।
ইতিহাস বলে আজমির দরগার নির্মাণ শুরু হয় সুলতান ইলতুৎমিসের আমলে (১২১১-১২৩৬)। তারপর বেশ কয়েকবার সংস্কার হয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুন থেকে শাহজাহানের সময়। এইসব যুক্তি নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ভারতের পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের সমীক্ষার দাবি তোলা হয়েছে। একপক্ষের মতে, হিন্দুদের ছাড়াও এখানে একসময় জৈন মন্দির অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে। সারদার মতে, আজমিরের মহান যোদ্ধা পৃথ্বীরাজ চৌহানের বংশধররা এই মন্দির নির্মাণ শুরু করেছিলেন।