শেষ আপডেট: 3rd December 2023 18:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একদা কংগ্রেসেই ছিলেন কলভাকুন্টলা চন্দ্রশেখর রাও। পরে পৃথক তেলঙ্গনা রাজ্যের দাবিতে নিজের দল গড়েছিলেন। সেজন্য জীবন বিপন্ন করে অনশনও করেছিলেন। তার পর অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে আলাদা তেলঙ্গনা রাজ্য তৈরি হওয়ার পর অবিসংবাদী নেতা হয়ে উঠেছিলেন ছোট্ট এই প্রদেশের। যে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া পৃথক রাজ্য গঠন সম্ভব ছিল না, সেই সাবেক দলকেই অপ্রাসঙ্গিক করে ছেড়েছিলেন তেলঙ্গনায়। কিন্তু রবিবার তেলঙ্গনার ফল প্রকাশের পর সেই চন্দ্রশেখরের দলের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। এর পর কি আর ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি টিকিয়ে রাখতে পারবেন চন্দ্রশেখর। নাকি দলটাই ভেঙে যাবে!
তেলঙ্গনায় যে ক্ষমতা দখল করতে পারে দশ মাস আগে ভাবতেও পারেনি কংগ্রেস। কিন্তু রেবন্ত রেড্ডিকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করার পর ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই শুরু করে সাবেক জাতীয় দল। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় ভাল সাড়া পাওয়া যায় এই রাজ্যে। তার পর থেকেই যেন একটা বদলের হাওয়া উঠতে থাকে।
রবিবার ভোট গণনায় দেখা গেল, ১১৯টি আসনের বিধানসভায় কংগ্রেস স্পষ্ট সংখ্যা গরিষ্ঠতার দিকে এগোচ্ছে কংগ্রেস। সন্ধে ৬টা পর্যন্ত যা ট্রেন্ড তাতে অন্তত ৬৩টি আসনে জিততে চলেছে কংগ্রেস পার্টি তুলনায় অনেক পিছিয়ে চন্দ্রশেখরের ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, চন্দ্রশেখর যে তেলঙ্গনায় কিছু ভাল কাজ করেননি তা নয়। সেখানে তাঁর সরকার বেশ কিছু জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছিল। তা ছাড়া তেলঙ্গনা আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধ রাজ্য। তাই গরিব মানুষের জন্য ভাতা, অনুদানেরও কমতি ছিল না। কিন্তু চন্দ্রশেখর ও তাঁর দলের ব্যক্তিগত আচরণ, অহঙ্কার নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজ্য সচিবালয়ে তিনি প্রায় যেতেন না। বাড়ি থেকেই সরকার চালাতেন। সেই সঙ্গে বল্গাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতারই সুফল পেয়েছে কংগ্রেস।
অনেকের ধারণা রবিবারের এই ফলাফলের পর চন্দ্রশেখরের তাঁর দল ধরে রাখাই মুশকিল হবে। এমনিতে ছোট রাজ্যগুলিতে একটা রোগ এখন খুব সংক্রামিত হয়েছে। তেলঙ্গনা গঠনের পর চন্দ্রশেখরের দলও তাতে আক্রান্ত ছিল। তারা কংগ্রেস ভাঙানোর খেলায় নেমে পড়েছিল। বিআরএসের সেক্রেটারি জেনারেল কে কেশব রাও এক সময়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষকও ছিলেন তিনি। এবার উল্টো খেলা শুরু হতে সময় লাগবে না বলেই অনেকে মনে করছেন।
শুধু তা নয়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে তেলঙ্গনা রাষ্ট্রীয় সমিতি তথা অধুনা ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি কোনও মতাদর্শ নির্ভর দল নয়। পৃথক তেলঙ্গনা রাজ্যের দাবিতে এই দল তৈরি হয়েছিল। সেই রাজ্য তৈরিতে কংগ্রেস তথা সনিয়া গান্ধীর অবদানও ছিল প্রচুর। তাই আলাদা কোনও মতাদর্শ না থাকায় চন্দ্রশেখরের পক্ষে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ।
কারও কারও মতে, এতে খুশি বিজেপিও। কারণ, চন্দ্রশেখরের পার্টি দুর্বল হলে বিজেপি সেই শূন্যস্থান দখলের চেষ্টা করবে। এবার বিধানসভা ভোটে তেলঙ্গনায় ৯টি আসনে জিতেছে বিজেপি। তা ছাড়া এর আগে হায়দরাবাদ পুরসভা ভোটেও গেরুয়া বাহিনী জিতেছে। ফলে তেলঙ্গনায় কংগ্রেসের জয় আশায় রাখল কেন্দ্রে শাসক দলকেও। বরং চন্দ্রশেখরের রাজনীতিটাই এখন বিপদের মুখে পড়ে গেল। এতটাই যে লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে তিনি আঁতাতের চেষ্টা করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।