শেষ আপডেট: 4th February 2025 12:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কারও ঘর পুড়ে যায়, কেউ আগুন পোহায়- প্রাচীন এই প্রবাদটি একটি নীতিশিক্ষার মতো। অর্থাৎ পড়শির ক্ষতি দেখে আহ্লাদ না করাই উচিত। যেমন- আমেরিকার গদিতে দ্বিতীয়বার বসেই চিনের উপর কঠোর শুল্কনীতি চাপানোয় আপাতভাবে দেশবাসীর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর গদগদ ভাব জেগে উঠলেও আখেরে ক্ষতি ছাড়া ভারতের লাভ কিছু হবে না, একথা হলফ করেই বলা যায়। ট্রাম্প শুল্কনীতির আড়াল-যুদ্ধ চালিয়ে আপাতত মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে সীমান্ত অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান বন্ধের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর এক চাপে আমেরিকার সীমান্তবর্তী দুই দেশই পরোক্ষে নতিস্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু, পুঁজিবাদী দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বর্তমানে তাঁর সবথেকে নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট চিনের ক্ষেত্রে এখনও তা করেননি। যদিও আলোচনার দরজা খুলে রেখেছেন।
এই অবস্থায় ভারতের উপর প্রত্যক্ষভাবে কঠিন শুল্কশর্ত আগামিদিনেও চাপাতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর যাঁরা ভাবছেন, এই ধাক্কায় ভারত বেঁচে গেল এবং ভারতেরও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চিন বেজায় চাপে রইল। যদিও অর্থনীতিবিদদের বিশ্বাস, আপাত ভারতবাসীর এই ধারণা অত্যন্ত ভুল। কারণ ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতিতে কেউ হারার পাত্র নয় মনোভাবে ভারত সহ সব দেশেরই কমবেশি আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।
এক্সিস ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ তথা ভারতীয় অর্থনীতি ও বাজার বিশেষজ্ঞ নীলকান্ত মিশ্র মানি কন্ট্রোল.কম নামের একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুল্ক-যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কুফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, যদি কারও মধ্যে এই বিভ্রম থাকে যে, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতিতে ভারত উপকৃত হবে, তাহলে তাঁরা ভুল করছেন। মিশ্রর দাবি, চিরাচরিত যুদ্ধে, যেখানে ব্যাপক ধ্বংস-ক্ষতির মুখে পড়তে হয়, সেখানেও উৎপাদন, বাণিজ্য ও বাজার বৃদ্ধির সুযোগ ঘটে। কিন্তু, হাতে না মেরে ভাতে মারার এই কূটকৌশল একেকটি দেশের পাঁজর ভেঙে দিতে পারে। অর্থনীতিকে কুঁজো করে দিতে পারে।
ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিন-চার বছর ধরে মার্কিন অর্থনীতিতে জোয়ার এসেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও ঠিক তাই। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেশিরভাগ ক্ষতি হয়েছিল ইউরোপের। যাতে আমেরিকার বৈদেশিক বাণিজ্য লাভের গুড় ঘরে তুলেছিল। কিন্তু, এবার যে যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে, তাতে ভিতর থেকে নির্দিষ্ট কিছু দেশের অর্থনীতিকে ফোঁপরা করে দেওয়ার অদৃশ্য রণনীতি নিয়েছেন ট্রাম্প।
মিশ্রর মতে, আমেরিকা যে শুল্কনীতি মেক্সিকো ও কানাডার উপর চাপাতে চাইছে, তার পাল্টা হিসেবে তারাও যদি মার্কিন সামগ্রীতে তা প্রয়োগ করে তাতে আমেরিকাকেও তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ এতে জড়িয়ে পড়বে সমগ্র ইউরোপ, ফলে লড়াই খারাপ দিকে এগোবে। স্পষ্টতই বিশ্বের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে, জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। যার অন্যতম ফল হবে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাওয়া। এই অবস্থায় ভারতের অনেকের ধারণা চিন সহ অন্যান্য দেশের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর আমাদের কী লাভ হবে! কিন্তু, এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। যেভাবে এদেশে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে তাতে বেসরকারি বিনিয়োগে আরও শ্লথগতি চলে আসবে। যার ফলে ভারতের মতো দেশের পক্ষে বৃদ্ধির ধার ধরে রাখা খুবই সংকটে পড়ে যাবে।