তাহিরা কাশ্যপ।
শেষ আপডেট: 8th April 2025 12:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখিকা তাহিরা কাশ্যপ ফের লড়ছেন ব্রেস্ট ক্যানসারের সঙ্গে। সোমবার ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ক্যানসার আবার ফিরে এসেছে। তবে তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং মজার ভঙ্গিতে লিখেছেন, 'জীবন আপনাকে লেবু দিলে, লেবু দিয়ে লেমোনেড বানান। আর যদি বারবার লেবু ছুড়ে দেয়, তখন শান্তভাবে নিজের প্রিয় পানীয়তে তা মিশিয়ে ফেলুন। রাউন্ড টু শুরু, আমি এখনও প্রস্তুত।'
তাহিরা আরও জোর দিয়ে লিখেছেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর কথায়, 'সেরে যাওয়ার সাত বছর পরেও ইচ্ছেমতো থাকিনি, বরং নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ে আছি বলেই এটা ধরা পড়েছে। সবাইকে অনুরোধ করব, নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করান।'
স্তনের দুগ্ধ উৎপাদক গ্রন্থি বা লোবিউলস-এ কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসার হয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে এই কোষ আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে গিয়ে টিউমারের মতো অংশ তৈরি করে।
এ বিষয়ে যশোদা মেডিসিটির ভাইস চেয়ারম্যান, রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট ডা. গগন সাইনি বলেন, 'অনেক সময় কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন বা হরমোন থেরাপির পরেও ক্যানসার কোষ শরীরে থেকে যায়। এই কোষগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ফেলে। সে কারণেই ক্যানসার ফিরে আসে। আর এজন্যই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসার সাফল্যের হার অনেক বেশি।
সিকে বিড়লা হাসপাতালের সিনিয়র অঙ্কোলজিস্ট ডা. মনদীপ সিং মালহোত্রা জানান, ক্যানসারের ধরন, হরমোন রিসেপটিভিটি, ক্যানসারের স্টেজ এবং প্রাথমিক অবস্থায় কতটা ছড়িয়ে পড়েছিল তার উপর নির্ভর করে ক্যানসারের রিল্যাপস বা পুনরাবৃত্তি। হরমোন-পজিটিভ, HER2-পজিটিভ বা ট্রিপল নেগেটিভ ক্যানসারের আচরণ একেবারে আলাদা। যদি প্রথমবার ক্যানসার কোষ লিম্ফ নোডেও ছড়ায়, তাহলে রিল্যাপসের আশঙ্কা আরও বেশি। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস, ধূমপান, মদ্যপান, জেনেটিক মিউটেশন বা অপরিপূর্ণ চিকিৎসাও রিল্যাপসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
তাই চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরেও নিয়মিত ফলোআপ খুব জরুরি। সাধারণত প্রথম দু'বছরে তিন মাস অন্তর ম্যামোগ্রাম বা পেট সিটি স্ক্যান করাতে হয়। তারপর ছ'মাস অন্তর এবং তৃতীয় বছর থেকে বছরে একবার করে স্ক্যান করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, 'রোগীদের প্রতি মাসে নিজে নিজে স্তনের পরীক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা উচিত।'
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
চিনি, সিগারেট, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
মানসিক চাপ কমানো
উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের ক্ষেত্রে এখন লিকুইড বায়োপসি ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা রক্ত থেকে ক্যানসারের ডিএনএ শনাক্ত করতে পারে। যদিও এটি এখনও স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকলের অংশ নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রেস্ট ক্যানসার শনাক্ত করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হল, ম্যামোগ্রাম। ভারতে, ৪৫ বছর বয়সের পরে প্রতি বছর একবার করে ম্যামোগ্রাম করানো সুপারিশ করা হয়। ৬০-৬৫ বছরের পর সেটা ২-৩ বছরে একবার হতে পারে, স্বাস্থ্য অনুযায়ী।
যাঁদের স্তনের টিস্যু ঘন বা যাঁদের রিপোর্টে কিছু সন্দেহজনক দেখা যায়, তাঁদের ক্ষেত্রে ম্যামোগ্রামের সঙ্গে আল্ট্রাসোনোগ্রাফিও করতে বলা হয়।
২০-৩০ বছরের মহিলাদের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকি থাকলে নিয়মিত সেল্ফ-এক্সাম আর প্রয়োজনে আল্ট্রাসাউন্ড করা যেতে পারে।
ডা. সাইনি বলেন, 'একবার ক্যানসার হলে, প্রয়োজনীয় স্ক্যান প্রতিনিয়ত করতেই হবে। স্ক্যানের ধরন ও ফ্রিকোয়েন্সি নির্ভর করে রোগ কতটা ছড়িয়েছিল তার উপর।'
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ২০ জন মহিলার মধ্যে একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন জীবদ্দশায়। এই হারে চললে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২ লক্ষের বেশি। এঁদের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে বছরে ১১ লক্ষেরও বেশি।
ভারতে স্তন ক্যানসার এখন মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হওয়া ক্যানসার। বিশ্বে ক্যানসারের ক্ষেত্রে ভারত রয়েছে তৃতীয় স্থানে, চিন ও আমেরিকার পরেই। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রায় ১০ শতাংশই ভারতে।
ICMR-এর রিপোর্ট বলছে, ভারতে স্তন ক্যানসার রোগীদের পাঁচ বছর বাঁচার হার ৬৬.৪ শতাংশ, যা অনেক দেশের তুলনায় কম। এর অন্যতম কারণ হল দেরিতে রোগ ধরা পড়া এবং সময়মতো চিকিৎসার অভাব।
এই সব রকম সমস্যা ও জটিলতা সঙ্গে নিয়ে, যথেষ্ট সচেতন থাকার পরেও তাহিরা কাশ্যপের মতো একজন সাহসিনী আবারও জীবনযুদ্ধে নেমেছেন। তিনি বলছেন, নিয়মিত স্ক্রিনিংই জীবনের রক্ষাকবচ হতে পারে। কারণ, ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় অস্ত্র সময়মতো রোগ নির্ণয়।