সুপ্রিম কোর্ট
শেষ আপডেট: 9th April 2025 11:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোশ্যাল মিডিয়ায় জৈন সন্ন্যাসী তরুণ সাগর সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য বিশাল দাদলানি ও তেহসিন পুনাওয়ালার উপর ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা চাপিয়েছিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। সেই রায় বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট, জানাল—আদালতের কাজ নীতিপুলিশি করা নয়।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানায়, 'আদালতের দায়িত্ব ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, কারও ওপর কোনও নৈতিক মূল্যবোধ চাপানো নয়।' একই সঙ্গে দেশের শীর্ষ আদালত বাতিল করে দিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত। বিশাল দাদলানি ও তেহসিন পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের উপর ১০ লক্ষ টাকা করে জরিমানা চাপিয়েছিল ওই আদালত।
এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, যখন কোনও 'অপরাধ' হয়নি বলে হাইকোর্ট মেনে নিয়েছে, তখন জরিমানা ধার্য করার কোনও যুক্তিই থাকতে পারে না।
এই বিতর্কের সূচনা ২০১৬ সালের আগস্টে। হরিয়ানা বিধানসভায় দিগম্বর জৈন সন্ন্যাসী মুনি তরুণ সাগরকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই ঘটনায় সঙ্গীত পরিচালক বিশাল দাদলানি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক তেহসিন পুনাওয়ালা টুইটারে কিছু মন্তব্য করেন, যা অনেকের মতে ব্যঙ্গাত্মক, আবার অনেকের মতে অবমাননাকর।
এই পোস্টগুলি ঘিরে আইপিসি-র একাধিক ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয় অম্বালা ক্যান্টনমেন্ট থানায়। পরে দাদলানি ও পুনাওয়ালা মামলাটি খারিজের আবেদন নিয়ে যান হাইকোর্টে।
২০১৯ সালের মে মাসে, হাইকোর্ট স্বীকার করে নেয়, এই মামলায় কোনও অপরাধ হয়নি, এবং এফআইআর-ও খারিজ করে দেয়। তবু আদালত অভিযুক্ত দু'জনকে ১০ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দিতে নির্দেশ দেয়। জানায়, 'জৈন সমাজের প্রতি ন্যায়বিচারের' স্বার্থে এই জরিমানা।
হাইকোর্ট ওই মামলায় আরও মন্তব্য করে, 'যদি আবেদনকারীদের সামাজিক অবদান তরুণ সাগরের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে তাঁদের মন্তব্য খানিকটা জনসমর্থন পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উস্কানি ও উত্তেজনা ছড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে, এবং এই জরিমানা একটা বার্তা হিসেবে কাজ করবে।'
তবে সুপ্রিম কোর্ট মোটেই হাইকোর্টের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। তাদের মতে, অপরাধ খুঁজে না পাওয়ার পরেও আদালত এমন জ্ঞানের ভাষায় মন্তব্য করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের বক্তব্য, 'যখন আদালত সেকশন এফআইআর খারিজ করছে, তখন এসব উপদেশ দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই, যে অভিযুক্তের অবদান সন্ন্যাসীর চেয়ে কম।'
এই মন্তব্যের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সেই জরিমানার নির্দেশ বাতিল করে দেয়। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, 'কোনও অপরাধ প্রমাণিত না হলে জরিমানা চাপানো অনুচিত। আদালতকে তার সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। নৈতিকতা চাপানোর দায় আদালতের নয়।'