সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ব্যতীত কোনও জায়গায় নির্মাণকার্য বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া যাবে না।
শেষ আপডেট: 17th September 2024 15:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কথায় কথায় বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া অন্তর্বর্তীকালের জন্য নিষিদ্ধ করল সুপ্রিম কোর্ট। 'বুলডোজার শাস্তি' নিয়ে গুচ্ছ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত একটি অন্তর্বর্তী রায় দেয়। যাতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ব্যতীত কোনও জায়গায় নির্মাণকার্য বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া যাবে না। তবে আদালত নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছে যে, এই নির্দেশ রাস্তা, ফুটপাত, রেললাইন ও জলাশয় দখলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই এবং কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আগামী ১ অক্টোবর। বিভিন্ন রাজ্য সরকার বিভিন্ন সময়ে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার বাড়ি-সম্পত্তি ভেঙে দিয়ে থাকে। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি দাখিল হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে।
এদিন আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আপত্তি জানান। তাঁর দাবি, এভাবে বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের হাত বেঁধে দেওয়া যাবে না। যদিও বেঞ্চ নির্দেশ প্রত্যাহারে রাজি হয়নি। বেঞ্চ বলে, যদি দুসপ্তাহের জন্য যদি নির্মাণ ভাঙা বন্ধ থাকে তাহলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে না। আপনার হাত গুটিয়ে রাখুন, কী হবে ১৫ দিনে, প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। যদিও বিচারপতি গাভাই স্পষ্ট করে বলেন, যদি একটিও অবৈধ নির্মাণের ঘটনা থেকে থাকে তো আমরা তার মধ্যে ঢুকতে চাই না। কিন্তু, প্রশাসনিক ব্যক্তি কখনই বিচারক হতে পারেন না।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর 'বুলডোজার বিচার'কে তুলোধনা করে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রশ্ন, যদি কেউ ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্তও হয় কিংবা অভিযুক্ত হয়, তাহলে তার বাড়ি ভাঙা হবে কেন? কোন যুক্তিতে? আবেদনকারীর পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে শীর্ষ আদালতের কাছে দেশজুড়ে চলা বুলডোজার বিচারের বিষয়ে নির্দেশিকার আর্জি জানান।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চের সামনে কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা হলফনামায় বলেন, কোনও ব্যক্তি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাঁর স্থাবর সম্পত্তি কোনওভাবেই ধ্বংস করা যায় না। এ ধরনের সম্পত্তি যদি অবৈধভাবে নির্মাণ করা থাকে, কেবল সেক্ষেত্রেই তা ভাঙা যেতে পারে। তাঁর যুক্তি, আদালতের সামনে বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে উপস্থাপিত করা হয়েছে।
তার জবাবে বিচারপতি গাভাই গত ২ সেপ্টেম্বর বলেন, আপনি যদি এটা মেনে নিয়ে থাকেন তাহলে আমরা এর ভিত্তিতে দেশজুড়ে একটি নির্দেশিকা দিচ্ছি। শুধুমাত্র অভিযুক্ত বলে এমনকী দোষী সাব্যস্ত হলেও কারও বাড়ি-সম্পত্তি ভেঙে দেওয়ার পিছনে কী যুক্তি আছে? কেন তা ভাঙা হচ্ছে?
বেঞ্চ আরও বলে, যদি সেই নির্মাণ অবৈধভাবে তৈরি করা থাকে তো তাহলে ঠিক আছে। বিচারপতি বিশ্বনাথন বলেন, প্রথমে নোটিস জারি করুক সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষ। সেই নোটিসের জবাব দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হোক ওই ব্যক্তিকে। আইনি ফয়সালার জন্য সময় দেওয়া হোক এবং তারপরেও কাজ না হলে ভাঙা যেতে পারে বাড়ি, দোকান বা অন্য স্থাবর সম্পত্তি।
বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, তারা অবৈধ নির্মাণকে রক্ষা করার পক্ষপাতী নয়। অবৈধ নির্মাণ কিংবা জনসাধারণের যাতায়াতকারী রাস্তা আটকে যদি কোনও স্থায়ী নির্মাণ গড়ে ওঠে, তা মন্দিরও হতে পারে, তবে সবক্ষেত্রেই ভেঙে ফেলার জন্য একটি নিয়মাবলি মেনে চলা উচিত। দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে এরকম ৫০-৬০ বছরের পুরনো বাড়ি ভাঙা হয়েছে এই যুক্তিতে যে বাড়ির মালিক অথবা ভাড়াটের ছেলে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে। রাজস্থানের উদয়পুরের একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে আবেদনকারীর আইনজীবীরা বলেন, সেখানে এক ছাত্র তাঁর সহপাঠীকে ছুরি মেরেছিল বলে বাবার বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। এসব শুনে আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১৭ সেপ্টেম্বর ধার্য করেছিল।