শেষ আপডেট: 18th October 2024 14:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সদগুরু জাগ্গি বাসুদেব প্রতিষ্ঠিত ইশা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মামলা খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার এই আশ্রমের দুই সন্ন্যাসিনীর বাবার আনা হেবিয়াস কর্পাস মামলা খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ। অভিযোগকারী বাবা আদালতে আপিল করেছিলেন যে, তাঁদের দুই মেয়েকে মগজ ধোলাই করে আশ্রমে আটকে রাখা হয়েছে।
তার জবাবে তিন সদস্যের বেঞ্চ বলে যে, দুই মহিলাই প্রাপ্তবয়স্ক এবং তাঁরা স্বেচ্ছায় আশ্রমে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আদালত আরও বলে, এই দুই মহিলার মা আট বছর আগে একটি হেবিয়াস কর্পাস মামলা করেছিলেন। এবার বাবা সেই একই আবেদন করেছেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমরা আগের দিনের শুনানিতে দুই মহিলার বক্তব্য শুনেছিলাম এবং নথিভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁরা দুজনেই বলেছিলেন যে, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছায় সেখানে রয়েছেন। তাই আমরা মনে করি হেবিয়াস কর্পাস আর্জি খারিজ করা উচিত।
এদিকে, সদগুরু জাগ্গি বাসুদেবের ইশা যোগ সেন্টার থেকে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই ধর্মীয় আশ্রমে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টে এই মর্মে হলফনামা দিল তামিলনাড়ু পুলিশ। আদালতে পুলিশ এও জানিয়েছে যে, চলতি হেবিয়াস কর্পাস মামলায় আশ্রমে কাউকে আটকে রাখার যে অভিযোগ উঠেছে, তাও তদন্তের কেন্দ্রে থাকলেও তাদের স্বাধীন ইচ্ছার জেরে তাঁরা রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টে তামিলনাড়ু পুলিশ এও জানিয়েছে, আশ্রমে আসা বহু ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন এবং পুলিশ আজ পর্যন্ত তাঁদের হদিশ করতে পারেনি। হলফনামায় পুলিশ জানিয়েছে, ইশা ফাউন্ডেশন আশ্রমের ভিতরে একটি শেষকৃত্যের জায়গা অর্থাৎ শ্মশান রয়েছে। আশ্রমে যে হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয় আশ্রমিকদের।
কোয়েম্বাটুর পুলিশ স্বামী জাগ্গি বাসুদেব প্রতিষ্ঠিত ইশা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি মামলার আর্জি জানিয়েছে শীর্ষ আদালতে। অভিযোগ সহ ২৩ পাতার রিপোর্টে পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু ব্যক্তি এখানে যোগশিক্ষায় এসেছেন এবং তার পর থেকে তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর জেলার পুলিশ সুপার কে কার্তিকেয়ন এই রিপোর্ট দাখিল করেছেন। সেখানে পুলিশ সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে আশ্রম যে থানার অন্তর্গত সেই আলানদুরাই থানায় মোট ৬টি নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। এই ৬টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগের ডায়েরি ক্লোজড করা হয়েছে, কারণ হিসেবে রয়েছে আর কোনও তদন্তের প্রয়োজন নেই বলে। একটি মাত্র অভিযোগ এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তির এখনও হদিশ মেলেনি বলে, আদালতে জানিয়েছে পুলিশ।
এছাড়াও গত ১৫ বছরে ৭টি মামলা হয়েছে ১৭৪ ফৌজদারি দণ্ডবিধির অধীনে অর্থাৎ আত্মহত্যার মামলায়। এর মধ্যে মাত্র ২টি মামলা এখনও জিইয়ে রয়েছে ফরেনসিক ল্যাবের রিপোর্টের অপেক্ষায়। সম্প্রতি দুই সন্ন্যাসিনী বোনকে জোর করে আটকে রাখার অভিযোগের মামলায় আশ্রমের দীক্ষানাম মা মাতি এবং মা মায়ু-র বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা সেখানে স্বেচ্ছায় বাস করছেন। তাঁরা দুজনেই অভিযোগকারী তাঁদের বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। এ বছরেই ১০ বার তাঁরা বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বলে পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে।
পুলিশ হলফনামায় ১ অক্টোবর পর্যন্ত ওই আশ্রমে ২১৭ জন ব্রহ্মচারী, ২৪৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৮৯১ জন বেতনভুক কর্মচারী, ১৪৭ জন মাইনে করা কর্মী, ৩৪২ জন ইশা হোম স্কুল পড়ুয়া, ১৭৫ জন সংস্কৃতি পড়ুয়া, ৭০৪ জন বিদেশি অতিথি এবং ৯১২ জন দেশি অতিথি যোগ সেন্টারের কটেজগুলিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে।