শেষ আপডেট: 3rd October 2024 20:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিয়ে করেছে মানেই কি স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করা যায়? এই প্রবণতাকে অপরাধ ঘোষণা করার দাবি নিয়ে যখন সর্বোচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে, তখন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার তাদের প্রাথমিক হলফনামায় জানিয়ে দিল, এই দাবি সঙ্গত নয়। বিয়ে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। তার মধ্যে ধর্ষণের বিষয়টি ঢুকিয়ে অপরাধ আখ্যা দিলে ব্যাপারটা অতিশয় রূঢ় হয়ে যাবে।
তবে কেন্দ্রের সরকার পুরো দায় একার ঘাড়ে নিতে চায়নি। বরং কেন্দ্রের বক্তব্য, সব কটি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সামগ্রিক একটা অবস্থান নেওয়া দরকার।
কেন্দ্রের এও বক্তব্য, বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টি যত না আইনি ব্যাপার, তার চেয়েও বেশি সামাজিক। বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলা হবে কিনা তা আইনসভার এক্তিয়ারের মধ্যেও পড়ে।
অনেকের মতে, কেন্দ্রের হলফনামা থেকেই পরিষ্কার যে সরকার দু’দিক রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছে। হলফনামায় বলা হয়েছে, বিয়ে করার মানেই মহিলাদের অনুমতি বা ইচ্ছার কোনও মূল্য রইল না তা নয়। তবে বিবাহ বহির্ভূত কোনও ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে বৈবাহিক ধর্ষণকে পৃথক ভাবে দেখা উচিত।
তা ছাড়া এ প্রতিকারের কথাও আইনে রয়েছে। ঘরোয়া হিংসা থেকে মহিলাদের রক্ষার আইন ও ফৌজদারি আইনের ৩৫৪, ৩৫৪এ, ৩৫৪বি ৪৯৮এ ধারায় কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
কেন্দ্র এই হলফনামা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিত্তি করেছে জাতীয় মহিলা কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টকে। বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়ে ২০২২ সালের রিপোর্টে মহিলা কমিশন জানিয়েছিল, একজন অবিবাহিত মহিলার সঙ্গে একজন বিবাহিত মহিলাকে সমানভাবে বিবেচনা করা যাবে না, দুই, প্রতিকারের বিকল্প ব্যবস্খা রয়েছে এবং তিন, কঠোর ব্যবস্থা নিতে গেলে ওই মহিলা ও তার সন্তানদের উপর নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে।
বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে আইন প্রণয়নের মতো বিতর্কিত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নীরবতা পালন করতে থাকায় সম্প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগে স্বামীকে যে ছাড় দেওয়া হয়, তার আইনি বৈধতা নিয়ে শুনানি চলছে শীর্ষ আদালতে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি এ বিষয়ে কোনও অবস্থান নাও জানায়, তাহলে আদালত আইনি দৃষ্টিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। বৈবাহিক ধর্ষণে স্বামীকে ছাড় দেওয়ার বিরুদ্ধে গুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছিল। তাকে মান্যতা দিয়েই শীর্ষ আদালতে শুনানি চলছে।
সাবালিকা স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে স্বামীরা সচরাচর ছাড় পেয়ে থাকেন বর্তমান আইনি কাঠামোয়। তাকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে অনেক অভিযোগ জমা পড়ে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রের কাছে সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্র এ ব্যাপারে কোনও আইনি পদক্ষেপ না করায় শেষমেশ সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাই আইনি বৈধতা বিচার করবে।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে বিষয়টির দ্রুত মীমাংসা ব্যাপারে গত শুনানিতে আর্জি জানিয়েছিলেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। তাঁর দাবি, এই বিষয়ে অবিলম্বে মীমাংসা হওয়া দরকার। বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার গুরুত্বের উপর জোর দেন তিনি। তাঁর যুক্তির জবাবে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় স্বীকার করেন যে, এর দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।