শেষ আপডেট: 13th November 2024 12:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উত্তরপ্রদেশের দাগী অপরাধীদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়ে এক সময়ে খুব হাততালি কুড়িয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। উগ্র ডানপন্থীদের অনেকেই সাবাশ সাবাশ করে উঠেছিলেন। বাংলাতেও সেই স্বর অনুরণিত হয়েছিল।
কিন্তু বুধবার মাইলফলক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, এভাবে বুলডোজার দিয়ে অপরাধীর বাড়ি ভেঙে দেওয়া নৈরাজ্যকে মনে করায়। এটা সংবিধান বিরোধী। এটা কখনওই করা যায় না।
বিচারপতি গাওয়াই ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এদিন রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলে, কেউ কোনও অপরাধ করেছে বলে, যদি কোনও প্রশাসক খেয়ালখুশি মতো তার বাড়ি ভেঙে দেয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি আইনবিরোধী কাজ করছেন। একজন প্রশাসক নিজেই বিচারক হয়ে উঠতে পারেন না। সংবিধান সেই অনুমতি তাঁকে দেয়নি।
এখানেই না থেমে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও প্রশাসক এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তাঁকে সেই কাজে দায়বদ্ধ করতে হবে। এই স্বেচ্ছাচারিতার কোনও স্থান নেই।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এদিন জানিয়েছেন, কারও বাড়ি বা সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে হলে তাঁকে পরিষ্কার পনেরো দিনের নোটিস দিতে হবে। কেন বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা সেই নোটিসে স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। নাগরিক অধিকারকে কোনওভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না।
সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ সরকারের জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ তথা যোগী রাজ্যের এই সংস্কৃতি সংক্রামিত হয়েছিল পড়শি মধ্যপ্রদেশেও। তা এতটাই, যে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে ‘বুলডোজার মামা’ বলেও ডাকা শুরু হয়েছিল।
রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ ছিল, এই বুলডোজার সংস্কৃতি আসলে বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির অস্ত্র। বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়ে সংখ্যাগুরু অংশের হাততালি কুড়োতে চেয়েছিলেন যোগী ও শিবরাজ। সুপ্রিম কোর্ট তাতে জবরদস্ত ধাক্কা দিল বুধবার।
বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার দীর্ঘ শুনানির পর বুধবার রায় ঘোষণা করেছে বিচারপতি বিচারপতি গাওয়াই ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ। আইনজ্ঞদের মতে, বুলডোজার দিয়ে অপরাধীর বাড়ি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল উত্তরপ্রদেশের সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান। তা বাস্তবায়িত করেছিলেন আমলা ও পুলিশ কর্তারা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর এবার আমলামহল ও পুলিশকেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আইন নিজের হাতে তুলে নিলে দায়ী থাকবেন তাঁরাই।