শেষ আপডেট: 21 March 2025 12:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিল্লি হাইকোর্টের (Delhi High Court) বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার হয় মঙ্গলবার। ঘর ভর্তি নোটের বান্ডিল মেলে। এই ঘটনায় দিল্লি হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের তরফে তাঁকে বদলি করা হয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্টে। সেখানকার বার অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য বিচারপতি হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করতে চাননি। রাতারাতি শিরোনামে উঠে আসা এই বিচারপতির কেরিয়ারের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল এই এলাহাবাদ হাইকোর্ট দিয়েই। কীভাবে দিল্লি হাইকোর্টে পা রাখেন তিনি? এখন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কীভাবে এগোবে? এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিচারপতি হিসেবে তাঁকে গ্রহণে অস্বীকার করার পর গোটা ঘটনা কোন দিকে মোড় নেবে। সেই নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে।
কে এই যশবন্ত বর্মা?
বিচারপতি যশবন্ত বর্মার জন্ম ৬ জানুয়ারি, ১৯৬৯ সালে এলাহাবাদে (বর্তমানে প্রয়াগরাজ)। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হান্সরাজ কলেজ থেকে বি.কম (অনার্স)করেন এবং পরে মধ্যপ্রদেশের রেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন (এলএলবি) পাশ করেন।
১৯৯২ সালের ৮ আগস্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর সংবিধান, শ্রম আইন, শিল্প ও কর সংক্রান্ত আইনি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ২০১৪ সালে তাঁকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরে ২০১৬ সালে স্থায়ী বিচারপতি হন। এরপর ২০২১-এর অক্টোবর মাসে তিনি বদলি হয়ে দিল্লি হাইকোর্টে যান।
নগদ টাকা উদ্ধারের পর কী পদক্ষেপ হল?
এই ঘটনার খবর পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না দ্রুত কলেজিয়ামের বৈঠক ডাকেন। বিচারব্যবস্থার ভাবমূর্তি রক্ষায় বিচারপতি বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রতিবাদে জানানো হয়েছে, এই হাইকোর্ট আঁস্তকুড় নয়। বিচারপতি বর্মাকে ফেরানো হবে না। এই জায়গা 'আবর্জনা ফেলার ঝুড়ি' নয়।
তবে কয়েকজন বিচারপতি আবার মনে করেন, শুধু বদলি যথেষ্ট নয়, বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি রক্ষা হবে না তাতে। উল্টে জনসাধারণের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। নিজের সম্মান বজায় রাখতে বিচারপতি বর্মার পদত্যাগ করা উচিত। তাঁদের দাবি, যশবন্ত বর্মাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। যদি তিনি ইস্তফা না দেন, তবে সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ করা হতে পারে।
দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায় এদিকে জানিয়ে দেন, এই ঘটনা পুরো বিচার ব্যবস্থা ও আদালতের কর্মীদের ‘মানসিকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।’ প্রবীণ আইনজীবী অরুণ ভরদ্বাজ আদালতের প্রশাসনিক দিক থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আইন বিশেষজ্ঞরা গোটা ঘটনা বিভিন্ন দিক থেকে পর্যবেক্ষণ করে জানান, কোনও হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে রিপোর্ট জমা দিতে হয়। আর যদি কোনও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তবে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি ইন-হাউস কমিটি গঠন করা হয়। এর আগেও এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর যাদব ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সি এস কারনানের বিরুদ্ধে একই নিয়মে তদন্ত চালানো হয়েছিল।