শেষ আপডেট: 17th December 2023 17:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মহারাষ্ট্রের ঠানেতে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রেমিকার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আমলার ছেলে তথা অভিযুক্ত বিজেপি নেতা অশ্বজিৎ গায়কোয়াড ও তার দুই বন্ধুকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযোগ, প্রভাবশালী তত্ত্বের ভিত্তিতে যে পুলিশ তরুণীর অভিযোগই নিতে চাইছিল না শুরুতে, সেই পুলিশই চাপের মুখে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছে। তবে যে গাড়িটি দিয়ে তরুণীকে চাপা দেওয়া হয়েছিল, সেটির সন্ধান মেলেনি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনায় অভিযুক্ত অশ্বজিৎ এবং তার দুই বন্ধুকে ইতিমধ্যেই আটক করেছে পুলিশ। তবে গ্রেফতার করা হয়নি কাউকেই। ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হলেও এখনও পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়নি বলে জানা গেছে। পুলিশ আপাতত ঘটনার সাক্ষী সহ অন্যান্যদের বয়ান নথিভুক্ত করছে এবং ফরেন্সিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
১১ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে চারটের সময় প্রিয়া সিং নামে ২৬ বছরের ওই তরুণীর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার জন্য চালককে নির্দেশ দিয়েছিল অশ্বজিৎ, এমনটাই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার নির্দেশে প্রিয়ার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয় ড্রাইভার। অন্তত আধ ঘণ্টা রাস্তাতেই পড়ে কাতরানোর পর পথচারীরা তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তাঁর ডান পায়ের হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করে সেখানে রড বসানো হয়েছে। বাঁদিকের কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত অংশে একাধিক গভীর আঘাত রয়েছে। তাঁর অবস্থা এমনই যে বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী তো বটেই, তার সঙ্গে কবে নিজের পায়ে তিনি চলাফেরা করতে পারবেন সে ভরসা এখনও দিতে পারছেন না চিকিৎসকরাও।
অশ্বজিতের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন প্রিয়া। তবে তিনি জানতেনও না, তাঁর প্রেমিক বিবাহিত, স্ত্রীর সঙ্গে তার সুখের সংসার। ১১ ডিসেম্বর সেই সত্যিটাই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। আকস্মিক সেই আঘাত সহ্য করতে পারেননি ২৬ বছরে তরুণী, আমলা পুত্র 'প্রভাবশালী' প্রেমিকের সঙ্গে শুরু হয়েছিল ঝগড়া। অভিযোগ, সেই স্পর্ধার শাস্তি দিতেই প্রেমিকার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার জন্য চালককে নির্দেশ দিয়েছিল অভিযুক্ত অশ্বজিৎ গায়কোয়াড।
অশ্বজিতের বাবা অনিল গায়কোয়াড মহারাষ্ট্র সড়ক উন্নয়ন বিভাগের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এছাড়া অশ্বজিৎ নিজেও ঠানে জেলার বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি। পিতৃপরিচয়ে তো, বটেই নিজের পরিচয়েও তিনি যে কম প্রভাবশালী নন, সেকথা ইতিমধ্যেই টের পেয়েছেন প্রিয়া। গত ১১ ডিসেম্বর ভোর চারটের সময় ফোন করে প্রেমিকাকে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে ডেকে আনে অশ্বজিৎ। সেখানেই তরুণী প্রেমিককে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখতে পান।
যখন বুঝতে পারেন, এতদিন ধরে তাঁকে ঠকানো হয়েছে, তখন সেই নিয়ে প্রেমিককে সোজাসুজি প্রশ্ন করেন প্রিয়া। অভিযোগ, এরপরে তাঁকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে অশ্বজিৎ ও তার বন্ধুরা। থাপ্পড় মারার পাশাপাশি কামড়ে দেওয়া হয় তরুণীকে। তারপর চুলের মুঠি ধরে তাঁকে রাস্তায় টেনে এনে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তরুণী গাড়ির ভিতর থেকে মোবাইল এবং অন্য দরকারি জিনিস বের করতে যেতেই ড্রাইভারকে প্রিয়ার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় অভিযুক্ত।
ড্রাইভার সেই নির্দেশ পালন করে। প্রিয়ার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে যায় সে। সেই ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরুণী।
তাঁর আরও অভিযোগ, বাবা এবং নিজের ক্ষমতার জোরে পুলিশের উপরেও চাপ সৃষ্টি করেছিল অশ্বজিৎ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ তাঁর অভিযোগ নিতেই চাইছিল না। পরে এফআইআর নিলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও রকম পদক্ষেপ করা হয়নি। এর মধ্যেই প্রেমিক তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে দাবি করেছেন প্রিয়া। এমনকী, অভিযুক্তের বন্ধুরা হাসপাতালে এসে তাঁর বোনকে শাসিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তরুণী। প্রিয়ার দাবি, তিনি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। এই পরিস্থিতিতে তিনি ও তাঁর পুরো পরিবার অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
যদিও প্রিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে অশ্বজিৎ। এমনকী, তরুণীকে প্রেমিকা বলেও মানতে চায়নি সে। আমলা পুত্রের দাবি, টাকার জন্য তাকে ফাঁসিয়েছেন তরুণী। ঘটনার দিন ভোরবেলা মদ্যপান করে প্রিয়া ওই অনুষ্ঠান বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছিল বলে দাবি অভিযুক্ত বিজেপি নেতার। সে আরও জানিয়েছে, প্রিয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। সেই সময় গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুরো বিষয়টা একেবারেই ইচ্ছাকৃত নয় বলে দাবি অভিযুক্তের।