শেষ আপডেট: 5th March 2025 17:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মুঘল শাসক ঔরঙ্গজেবের প্রশংসা করায় মহারাষ্ট্র বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করা হল সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আবু আজমিকে। চারবারের বিধায়ক তথা মহারাষ্ট্র সমাজবাদী পার্টির সভাপতি আবু আজমিকে দুদিন ধরে মারাঠা রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ভিকি কৌশল অভিনীত ছাবা সিনেমায় ঔরঙ্গজেবের চরিত্রকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তার সমালোচনা করে মুঘল বংশের প্রায় শেষ সম্রাটের গুণগান করেছিলেন আজমি। তার জেরে বুধবার রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত পাটিল বিধানসভায় একটি বরখাস্তের প্রস্তাব আনলে তা গৃহীত হয়। আবু আজমিকে চলতি বাজেট অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
সাসপেনশনের বিষয়ে আজমি বলেন, তাঁর সঙ্গে অবিচার হয়েছে। সরকারের দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। আজমির কথায়, এই সাসপেনশন শুধু আমার প্রতি অবিচার নয়, আমাকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি করেছেন যাঁরা, তাঁদেরও অপমান। আমি সরকারের কাছে জানতে চাই, রাজ্যে কী দুধরনের আইন রয়েছে? একটি আইন আবু আজমির জন্য ও আরেকটি আইন প্রশান্ত কোরাটকর ও রাহুল শোলাপুরকরের জন্য। বিরোধীরা তো অভিনেতা রাহুল শোলাপুরকর ও প্রাক্তন সাংবাদিক প্রশান্ত কোরাটকরের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। এই দুজনও তো ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে নিয়ে অবমাননাকর কথা বলেছিলেন, দাবি আবু আজমির।
সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আবু আজমি ঔরঙ্গজেবের প্রশংসা করার পর থেকেই তাঁর ওই মন্তব্যকে ঘিরে ব্যাপক জলঘোলা হতে শুরু করেছে মহারাষ্ট্রে। শিবসেনা এই ঘটনায় বিরাট আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। অন্যদিকে, ঠানেতে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আবু আজমির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে। যদিও ঠানেতে লোকসভা সদস্য নরেশ এম হাসকের ওই অভিযোগকে মুম্বই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কারণ মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভ থানায় আরও একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। এত কিছুর মধ্যেও বিধায়ক আজমি বলেছেন, আমি যা বলেছি, তা ঐতিহাসিকরাই বলে থাকেন।
ঔরঙ্গজেব সম্পর্কে প্রশংসা করায় বিজেপি নেত্রী নবনীত রানা মঙ্গলবার বলেন, যে রাজ্যের বিধানসভায় বসার জন্য আপনি পাঁচবছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, ভুলে যাবেন না সেই রাজ্য একসময় শাসন করেছেন ছত্রপতি শিবাজি ও সম্ভাজি মহারাজ। আপনার মতো লোকের উচিত ছাবা সিনেমাটি দেখা। তাহলেই বুঝতে পারতেন ঔরঙ্গজেব কী ধরনের সম্রাট ছিলেন। মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, যেভাবে ঔরঙ্গাবাদের নাম বদল করে সম্ভাজি নগর করা হয়েছে, সেইভাবে ঔরঙ্গজেবের সমাধিকেও ভেঙে দেওয়া উচিত। যারা ঔরঙ্গজেবকে ভালবাসেন, তাঁরা তাঁদের বাড়িতে নিয়ে ঔরঙ্গজেবের সমাধি সাজিয়ে রাখুন।
বিজেপির এমপি সুধাংশু ত্রিবেদী আবু আজমিকে একহাত নিয়ে বলেন, ঔরঙ্গজেব তাঁর সবকটা ভাইকে খুন করিয়েছিলেন এবং বাবাকে নজরবন্দি করেছিলেন। তাঁকে কীভাবে মহিমান্বিত করতে পারে কেউ! ত্রিবেদী আরও বলেন, ১৬৬৯ সালের ৬ এপ্রিল যে ব্যক্তি হিন্দু মন্দির ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁকে কীভাবে প্রশংসা করে কেউ!
প্রসঙ্গত, সোমবার মহারাষ্ট্র সমাজবাদী পার্টির সভাপতি আবু আজমি বলেছিলেন, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব মোটেই নিষ্ঠুর প্রশাসক ছিলেন না। তিনি অনেক মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। অথচ, সেই ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে ভুলভাল ইতিহাস, আজগুবি তথ্য দেখানো হচ্ছে। তাঁর এই মন্তব্যকে ঘিরে চরম বিতর্ক ঘনিয়ে ওঠে মারাঠা রাজনীতিতে। এর জবাবে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে আজমির নিন্দা করে বলেন, তিনি যা বলেছেন তা অসত্য ও গ্রহণযোগ্য নয়।
আজমি তাঁর মন্তব্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েও বলেন, তিনি যা বলেছেন তা ঐতিহাসিকদের বক্তব্য। শিবাজি কিংবা সম্ভাজি মহারাজকে খাটো করার জন্য তিনি বলতে চাননি। তাঁর কথাকে ঘুরিয়ে হাজির করা হয়েছে। তাতেও আমার কথায় কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি। আমি আমার কথাও ফিরিয়ে নিচ্ছি। উল্লেখ্য, ঔরঙ্গজেবকে মহান প্রশাসক বলে দাবি করে সপা বিধায়ক বলেন, ঔরঙ্গজেবের আমলে দেশের সীমান্ত আফগানিস্তান থেকে বর্মা (বর্তমানে মায়ানমার) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাঁর আমলেই ভারতকে বিদেশের লোকজন 'সোনে কি চিড়িয়াঁ' (সোনার পাখি) বলে ডাকত। ঔরঙ্গজেবের আমলে দেশের গড় উৎপাদন ২৪ শতাংশ ছুঁয়েছিল। এই কারণেই ব্রিটিশরা ভারত দখল করতে এসেছিল।