শেষ আপডেট: 23rd October 2024 12:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাবা সিদ্দিকি খুনের পর থেকে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের অন্ধকার জগতের জীবন হিন্দি সিনেমার মশলার মতো মাখা চলছে। অ্যাকশন-থ্রিলার বলি-দক্ষিণী ছবির মতোই জেলবন্দি গ্যাংস্টার বিষ্ণোইকে এখন গারদের মধ্যে কোতলের ছক কষছে অন্যরা। অন্তত ৬টি সংগঠন-গোষ্ঠী গুজরাতের সাবরমতী জেলে বন্দি বিষ্ণোইকে নিরাপত্তার জাল ছিঁড়ে খতমের ফন্দি এঁটেছে বলে জানা গিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে আগের তুলনায় বিষ্ণোইয়ের নিরাপত্তা অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
একদিকে যখন লরেন্সকে মারার জন্য একাধিক শত্রু শিবির প্ল্যান আঁটছে, তখন মহারাষ্ট্র বিধানসভায় তাকে প্রার্থী করার আহ্বানও এসেছে। মহারাষ্ট্রের একমাত্র উত্তর ভারতীয় সম্প্রদায়ের সংগঠন উত্তর ভারতীয় বিকাশ সেনা বিষ্ণোইকে আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করতে চেয়ে চিঠি লিখেছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি সুনীল শুক্লা জেলে পাঠানো বিষ্ণোইকে লেখা চিঠিতে জয়ের ব্যাপারে সুনিশ্চিত করেছেন। দলের প্রার্থী ঘোষণার আগে বিষ্ণোইয়ের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছেন শুক্লা। বিষ্ণোই রাজি হলেই তিনি ৫০ জনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন বলে জানান।
সলমন খানকে খুনের চেষ্টা ছাড়াও এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিমের দলের যোগ ছিল বলে তাঁকে খুন করে বিষ্ণোইয়ের গ্যাং। কিন্তু, শুধু দাউদ নয়, আরও পাঁচটি গ্যাং টার্গেট করে আছে লরেন্স বিষ্ণোইকে। ক্ষত্রিয়-বিরোধী বিষ্ণোইকে এনকাউন্টারে খতম করলে করণী সেনা ১ কোটি টাকার বেশি ইনাম ঘোষণা করেছে। তার থেকেও একধাপ এগিয়ে ভীম সেনার প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি নবাব সৎপাল তানওয়ার খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন গ্যাংস্টারকে।
সৎপাল বলেছেন, যদি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুমতি দেন, তাহলে কুখ্যাত বিষ্ণোইকে ২ ঘণ্টা ৪ মিনিটে ধ্বংস করে দেব। ও দেশের পক্ষে এক বিপজ্জনক অপরাধী। সৎপালের এই রাগের প্রধান কারণ হল, এর আগে বিষ্ণোই জেল থেকে তাঁকে মারার হুমকি দিয়েছিল। সৎপাল বলেন, পাকিস্তানের থেকেও লরেন্স বিষ্ণোই দেশের পক্ষে বিপজ্জনক অপরাধী। তাঁর দাবি, ভীম সেনা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকায় যথেষ্ট শক্তিশালী। ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভীম সেনার ২৬ লক্ষ সৈনিক সক্রিয় রয়েছে। সরকার বললে, ওকে এবং কর্মকাণ্ড মুছে ফেলতে ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না।
সুতরাং, করণী সেনা, ভীম সেনা, দাউদ ইব্রাহিমের দল উঠেপড়ে লেগেছে লরেন্স বিষ্ণোইকে খতম করতে। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। খলিস্তানি জঙ্গি শিখস ফর জাস্টিসের বিদেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন। বিষ্ণোইয়ের পাঁচ নম্বর শত্রু হচ্ছে নীরজ বাওয়ানা গ্যাং এবং ছয় নম্বরে রয়েছে কৌশল চৌধুরি গ্যাং।
করণী সেনার সঙ্গে বিষ্ণোইয়ের শত্রুতার কারণ, লরেন্স বিষ্ণোই সুখদেব সিং গোগামেদি-র ঘাতক। যিনি করণী সেনার প্রধান ছিলেন। গত ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জয়পুরে অজ্ঞাতপরিচয় খুনিরা তাঁকে গুলি করে খুন করে। খুনের কয়েক ঘণ্টা পরে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের শাগরেদরা এর দায় স্বীকার করে। একটি ভিডিও বার্তায় ক্ষত্রিয় করণী সেনার জাতীয় সভাপতি রাজ শেখাওয়াত বলেন, যে পুলিশ অফিসার লরেন্স বিষ্ণোইকে এনকাউন্টারে মারতে পারবেন তাঁকে ১,১১,১১,১১১ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। রাজ শেখাওয়াতের দাবি এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা জরুরি। সে কারণে পদক্ষেপ করতে হবে।
শেখাওয়াত কেন্দ্র ও গুজরাত সরকারের নিন্দা করে বার্তায় বলেছেন, তারা লরেন্সের মতো সাংঘাতিক খুনেকে সামলাতে ব্যর্থ। তাই যে পুলিশ অফিসার তাকে খতম করবে তিনিই ওই পুরস্কার পাবেন।
লরেন্সের তৃতীয় শত্রু হল আন্তর্জাতিক জঙ্গি দাউদ ইব্রাহিম। বিষ্ণোইয়ের উত্থানের আগে নয়ের দশকে কুখ্যাত ছিল ডি কোম্পানি। যা নিয়ে হিন্দি ছবিও তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েকটি ছবিতে দাউদের ছায়া অবলম্বন করে চরিত্র সৃষ্টিও হয়েছিল। সেই ডি কোম্পানিকে দেশে এবং বিদেশের মাটিতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় বিষ্ণোইয়ের বি কোম্পানি। এই মুহূর্তে দেশের ৮টি রাজ্যে ৭০০ জন নিশানাবাজ নিয়ে সাম্রাজ্য চালাচ্ছে বি কোম্পানি। তাই দাউদের মূল টার্গেট লরেন্স বিষ্ণোই।
কানাডায় খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরকে একটি গুরুদ্বারের বাইরে খুনের পর তাদের বিষনজরে পড়ে বিষ্ণোই। এছাড়াও আরেকটি খলিস্তানি জঙ্গি সুখা দুনিকে-কেও খুন করে লরেন্সের গোষ্ঠী। তাই খলিস্তানপন্থীদের চোখে একনম্বর শত্রু হয়ে পড়ে সে।
এরপরেই রয়েছে নীরজ বাওয়ানার গ্যাং। নীরজ নিজেকে দিল্লির দাউদ বলে ডাকে। বর্তমানে সে তিহার জেলে বন্দি। ১৮ বছর বয়সে অন্ধকার দুনিয়া হাতেখড়ি নীরজের। তার বিরুদ্ধে ১০০-র বেশি খুনের, খুনের চেষ্টা এবং তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তাই উত্তর ভারতে এলাকা দখলের লড়াইয়ে বেশ কয়েকবার নীরজ ও লরেন্সের গ্যাং ফাইট হয়েছে। সিধু মুসেওয়ালাকে খুনের পর থেকে তাদের শত্রুতার বেগ আরও বেড়ে যায়।
আরও একজন লরেন্সকে খুনের জন্য ঘাপটি মেরে আছে। তার নাম কৌশল চৌধুরি। বর্তমানে গুরুগ্রাম জেলে বন্দি। তার সঙ্গেও বিষ্ণোইয়ের দীর্ঘকালের শত্রুতা। বেশ কয়েকবার একে অন্যের শাগরেদ খতম করেছে এবং এলাকা দখল করেছে। কিন্তু, বিষ্ণোইয়ের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধিতে হিংসায় জ্বলে খাক হচ্ছে কৌশল। শোনা যাচ্ছে সেও বিষ্ণোইকে খতমের চেষ্টা করতে পারে।