শেষ আপডেট: 18th October 2023 11:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিনকয়েক আগেই লেক ভেঙে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছিল সিকিমে। হিমবাহ গলে জলস্তর বেড়েছিল লোনক লেকে, আর জলের চাপে ফেটে গিয়েছিল হ্রদ। সেই বিপুল জলরাশি গিয়ে মিশেছিল তিস্তায়। তারপর তো খরস্রোতা তিস্তা ভাসিয়ে দিয়েছিল বাড়িঘর, পথঘাট। ভেঙে গিয়েছিল জাতীয় সড়কও। সেই বিপর্যয়ের পর অনেকেই পুজোয় সিকিম ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছিলেন। তবে সিকিম সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ পঞ্চমী থেকেই খুলে যাবে সেবক-সিকিম রোড। ফলে যাঁরা এত কিছুর পরেও সিকিমে ঘোরার প্ল্যান বাতিল করেননি, তাঁরা ব্যাগ গুছোতে শুরু করে দিয়েছেন।
তবে সিকিমে ঘুরতে গিয়ে কিন্তু ফের বিপর্যয়ের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটকদের। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লোনকই নয় শুধু, উত্তর সিকিমের হিমবাহ সৃষ্ট অন্তত ১৪টি হ্রদ অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাঙালির প্রিয় গুরুদংমার হ্রদও। এছাড়া কাংচুং চো লেকটি, যেটি তিস্তার উৎপত্তিস্থল খাংসে হিমবাহের কাছেই অবস্থিত, সেটির অবস্থাও অত্যন্ত ভয়ানক। যে কোনও সময় এই হ্রদগুলিতেও গ্লেসিয়াল আউটবার্স্ট হতে পারে, যার ফলে ফের লোনক বিপর্যয়ের মতোই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে পারে বাংলার পড়শি এই ছোট্ট রাজ্যটি।
উত্তর সিকিমে ১৭ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় মোট ৩টি হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ রয়েছে। তার মধ্যে দুটির অবস্থান উপরে, একটি খানিকটা নীচে। উপরের হ্রদদুটির জল নেমে আসে নীচের হ্রদে। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, উপরের এই দুটি হ্রদের বাঁধেই ফাটল ধরেছে। যে কোনও সময় সেগুলি ভেঙে বড়সড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, সিকিম জুড়ে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ তৈরি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শুধু তৈরি হচ্ছে, তাই-ই নয়, সেগুলির আকার এবং গভীরতা বাড়ছে হুহু করে। শুধুমাত্র সিকিমে বর্তমানে হিমবাহ হ্রদের সংখ্যা বেড়ে ২৬৬ থেকে হয়েছে ৩২০টি। হিমবাহগুলির সম্মিলিত আয়তনও গত কয়েক বছরে প্রায় ৭৫ বর্গ কিলোমিটার বেড়ে গেছে।
বিশ্ব উষ্ণয়নের কারণে হিমবাহ থেকে বিপুল পরিমাণে বরফ গলছে। সেই হিমজল নেমে আসছে নীচের হ্রদে। ফলে হিমবাহগুলি আকারে ছোট হলেও আয়তন বাড়ছে হ্রদগুলির। এই হিমবাহ যখন গলে নীচে নামতে থাকে, তখন রাস্তায় থাকা নুড়ি পাথর সেই জলস্রোতের সঙ্গে নামাতে থাকে, যা দিয়ে সৃষ্টি হয় প্রাকৃতিক বাঁধ। কিন্তু লেকের জলস্তর একটা সময় পর সেই জলের চাপ আর ধরে রাখতে পারে না এই প্রাকৃতিক বাঁধ। তখনই হ্রদ ফেটে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।