শেষ আপডেট: 1st October 2023 00:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক খালিস্তানি জঙ্গিকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র কানাডার সঙ্গে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরাসরি অভিযোগ, দ্বাপাক্ষিক সম্পর্কের শর্ত লঙ্ঘন করে ভারত সরকারের চর কানাডার ওই শিখ নাগরিককে খুন করেছে। পাল্টা অভিযোগে সরব নয়াদিল্লি। ভারতের বক্তব্য, কানাডা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
এই টানাপোড়েন নিয়ে সাউথ ব্লকের উপর আন্তর্জাতিক যেমন রয়েছে তেমনই আবার ঘরোয়া রাজনীতির বিষয়ও মাথায় রাখতে হচ্ছে মোদী সরকারকে। জাতীয়তাবাদের ধ্বজা উড়িয়ে বিজেপি-আরএসএস এবং তাদের অনুগামী কিছু সংগঠন ইতিমধ্যে কানাডা আর পাকিস্তানকে একই পংক্তিতে এনে ফেলেছে। ফলে কানাডার বিরুদ্ধে নিয়মিত বলতে হচ্ছে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করকে। কিন্তু এ সবের মধ্যেই নয়া অশনিসংকেতও দেখছে নয়াদিল্লি।
ভারত ডাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ঘরোয়া চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ লক্ষ মেট্রিক টন মুসুর ডাল কানাডা থেকে আমদানি করে ভারত। এ ব্যাপারে ট্রুডোর দেশের উপর দীর্ঘদিন ধরে ভারতের নির্ভরতা রয়েছে। তা ছাড়া ভারতে কৃষি উৎপাদন নিয়ে সংকটের পরিস্থিতিতে কানাডা বরাবরই সাহায্য করেছে। গত আর্থিক বছরেও কানাডা থেকে ৪.৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন মুসুর ডাল আমদানি হয়েছিল। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত কানাডা থেকে ২.৬৭ লক্ষ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করা হয়েছে।
তবে সংবাদসংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে ডাল রফতানির ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি নিতে শুরু করেছে কানাডা। অর্থাৎ রফতানিতে রাশ টানতে চাইছে। কানাডায় প্রচুর খনিজ সম্পদ রয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষিতে তাদের উন্নতিও ইর্ষা করার মতো। ডাল, ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে সবকিছুই উৎপাদন সেখানে ভাল হয়। মুসুর ডাল, মটর ডাল রফতানিতে তারা অনেকের থেকে এগিয়ে। কানাডা ছাড়া ভারত অস্ট্রেলিয়া থেকেও ডাল আমদানি করে।
কিন্তু এখন সমস্যা হয়েছে দুটো। আমদানিকারকরা জানাচ্ছেন, কানাডায় এবারই মুসুর ডাল উৎপাদন কম হয়েছে। তাই আমদানি করতে গিয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। গত মাস পর্যন্ত ৭৬০ থেকে ৭৭০ ডলারে এক টন মুসুর ডাল আমদানি করা যাচ্ছিল। এ মাসে তা ১০০ ডলার বেড়ে গেছে।
সাত মাস বাদে লোকসভা ভোট। তার আগে মুসুর ডাল নিয়ে এই চিন্তা ভাবাতে শুরু করে দিয়েছে সরকারকে। আমদানিকারকদের অনেকের মতে, কানাডা মুসুর ডাল রফতানি কমিয়ে দিলে অস্ট্রেলিয়ার উপর নির্ভরতা বাড়বে। তাতে বেশি দাম দিতে হতে পারে। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় অত মুসুর ডাল উৎপাদিতও হয় না।
এমনিতে কিছুদিন আগে টমেটোর দাম বাজারে হইচই ফেলে দিয়েছিল। তার পর চিনির দাম নিয়ে চিন্তা শুরু হয়ে যায়। কারণ, এ বছর উল্লেখযোগ্য ভাবেই আখ উৎপাদন কম হয়েছে। এখন ভাবাতে শুরু করেছে মুসুর ডাল।
ভারতের ঘরোয়া বাজারে ডালের চাহিদা প্রচুর। চানা ডাল সবচেয়ে সস্তা। তার পরই রয়েছে মসুর ডাল। মোটামুটি ভাবে খোলাবাজারে মসুর ডাল কেজি প্রতি ১১০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ডাল আমদানি তথা জোগান ঝপ করে কমে গেলে তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কূটনীতিকদের অনেকে তাই মনে করছেন, দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা প্রশমনের রাস্তাও এবার খুঁজতে হবে। নইলে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভেবে রাখতে হবে।