বিচারপতি যশবন্ত বর্মা।
শেষ আপডেট: 24 March 2025 12:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: টাকার পাহাড় কাণ্ডে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে শেষমেশ তাঁর কর্মজীবনের পাঠশালা এলাহাবাদ হাইকোর্টেই বদলির সিদ্ধান্ত বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। সোমবার কলেজিয়ামের বৈঠকে এই ঘটনায় বদলির এই সিদ্ধান্ত সুপারিশ করা হয়। বাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ায় অগ্নিনির্বাপক বাহিনী অথবা পুলিশ তাঁর ঘরের স্টোররুম থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকার পাহাড় উদ্ধার করে বলে বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর থেকে এনিয়ে দেশে তোলপাড় চলছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে তোলা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০ এবং ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের বৈঠক বসে। কলেজিয়ামের সুপারিশ বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে দিল্লি থেকে এলাহাবাদে স্থানান্তরিত করা হোক। প্রসঙ্গত, গত ১৪ মার্চ রাত ১১টা ৩৫ মিনিট নাগাদ বিচারপতি বর্মার তুঘলক রোডের সরকারি বাসভবনে আগুন লাগে। তারপরেই এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। যদিও আগুন লাগার সময় সস্ত্রীক বর্মা ভোপালে ছিলেন। তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছেন।
এর আগে এলাহাবাদ বার অ্যাসোসিয়েশন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারপতিদের উদ্দেশে চিঠি লিখে বিচারপতি বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাঠানোর (patriation) সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে হতবাক তারা, এমনও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে লেখা হয়ে, এই সিদ্ধান্ত বিচার ব্যবস্থা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে – এলাহাবাদ হাইকোর্ট কি তবে আবর্জনার ঝুড়ি? যেখানে দীর্ঘদিন ধরে বিচারপতির ঘাটতি রয়েছে, সেখানে এই পরিস্থিতি বাড়তি চিন্তার বিষয়। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বার অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ নেওয়া হয় না, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। যোগ্যতার মানদণ্ড ঠিকমতো দেখা হচ্ছে না, ফলে বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এবং জনসাধারণের বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কপিল সিবাল ও ইন্দিয়া জয়সিংয়ের মতো আইনজীবীরাও। রাজ্যসভায় এই প্রসঙ্গ উঠলে সাংসদ ও প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল দেশের বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগকে গুরুতর সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, এটি নতুন কোনও বিষয় নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। সুপ্রিম কোর্টকে বিচারপতিদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে ভাবতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া উচিত।
বিচার ব্যবস্থার জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ। তিনি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন, আপনি দয়া করে এই বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ করুন এবং সরকারকে বিচার ব্যবস্থার জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিন। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় জানান, তাঁকেও বিষয়টি ভাবাচ্ছে। তিনি চিন্তিত এই ভেবে যে, এই ঘটনা ঘটেছে অথচ সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসেনি। ধনখড় বলেন, যদি এমন টাকা কোনও রাজনীতিবিদ, আমলা বা শিল্পপতির ঘর থেকে উদ্ধার হত, তবে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে টার্গেট করা হত। তাই আমি নিশ্চিত যে, স্বচ্ছ, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।