অপারেশন সিঁদুরের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ বার্তা বয়ে নিয়ে যেতে বিদেশে বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে মোদী সরকার।
শশী তারুর, মানস ভুইঞাঁ এবং মুকুল রায়।
শেষ আপডেট: 18 May 2025 14:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অপারেশন সিঁদুরের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ বার্তা বয়ে নিয়ে যেতে বিদেশে বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে মোদী সরকার। তাতে কংগ্রেস মনোনীত চার সাংসদের নাম সরকার মানেনি। কংগ্রেস সময়ের মধ্যে চার জনের নাম পাঠালেও তাঁদের কাউকে বেছে নেয়নি বিদেশ মন্ত্রক। সাউথ ব্লক বেছে নিয়েছে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরকে (Sashi Tharoor), যাঁর নাম কংগ্রেস সুপারিশই করেনি।
কূটনৈতিক দ্যৌত্যের প্রশ্নেও এভাবে রাজনীতি ঢুকে পড়াতেই নয়া বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মোদী সরকারকে অসৎ বলে চাঁচাছোলা সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। তাঁর কথায়, “সরকার নারদ মুনির রাজনীতি করছে”।
নয়াদিল্লিতে এই রাজনৈতিক আকচাআকচির অনেকেই মিল খুঁজে পাচ্ছেন বাংলার রাজনীতির সঙ্গে। বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান (পিএসি) সর্বদাই বিরোধী দল থেকে হয়। ২০১৬ সালে ভোটের পর ফের বিধানসভা গঠন হলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় পিএসি-র চেয়ারম্যান পদের জন্য বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের কাছে জানতে চান, কংগ্রেস কাকে পিএসি চেয়ারম্যান করতে চায়। মান্নান সাহেব জলপাইগুড়ির তৎকালীন বিধায়ক সুখবিলাস বর্মার নাম পাঠান। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুইঞাঁকে পিএসি চেয়ারম্যান করে দেন।
সেই সময়ে কংগ্রেস রাজনীতিকে মান্নান ও মানসের বিবাদ ছিল সুবিদিত। তা এতটাই তীব্র ছিল যে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার ঘরে পর্যন্ত ঢুকতেন না মানস। আরও ঘটনা হল, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের সময়ে মানস ভুইঞাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছিল। মানস পিএসি চেয়ারম্যান হওয়ার পর কাকতালীয়ভাবে সেই মামলা প্রত্যাহার যায়। তার পর ক্রমে মানস তৃণমূলে যোগ দেন।
পরবর্তীকালে একই ভাবে কংগ্রেসের সুপারিশ ছাড়াই শঙ্কর সিংকে পিএসি চেয়ারম্যান করেন স্পিকার। সেই শঙ্কর সিংও এখন তৃণমূলে। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলায় তাঁকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আবার ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর পরই বিজেপি বিধায়ক দলের সুপারিশ না শুনে কৃষ্ণনগর (উত্তর) আসনের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান করা হয়। অথচ বিজেপি আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক অশোক লাহিড়ীর নাম প্রস্তাব করেছিল। মুকুল রায়ও এখন স্রেফ খাতায়কলমে বিজেপিতে।
অপারেশন সিঁদুরের পর বিদেশে বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর ব্যাপারে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ১৬ মে সকালে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে যোগাযোগ করে চারজন সাংসদের নাম চেয়েছিলেন। সেই অনুসারে দুপুর ১২:৩০ নাগাদ রাহুল গান্ধী রিজিজুকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন—আনন্দ শর্মা, গৌরব গগৈ, রাজা ওয়ারিং ও সৈয়দ নাসির হুসেনকে তারা প্রতিনিধিদলে রাখতে চায়।
কিন্তু এরপর কোনও প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে হঠাৎ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, যেখানে শশী থারুরকে অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অথচ থারুর ছিলেন না কংগ্রেস মনোনীত সেই চার নেতার মধ্যে। এই ঘটনাকে ‘অবৈধ, বিভ্রান্তিমূলক ও কূটনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী’ বলেই মনে করছে কংগ্রেস।
পরে শশী থারুরকে নিশানা করে জয়রাম রমেশ বলেন, “কংগ্রেসে থাকা আর কংগ্রেসের হওয়া—এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক।” পাশাপাশি তিনি বলেন, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদকেও সরকারের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল সিদ্ধান্ত না নিলে তিনি কোনও উদ্যোগে থাকবেন না।
জয়রাম বলেন, “সরকার নাম চাইল, আমরা নাম দিলাম, এরপর নিজেদের মতো নাম ঘোষণা করল—এটাই কি সৎ আচরণ? আমরা সোজা ব্যাটে খেলছি, কিন্তু সরকার কীভাবে খেলছে তা বোঝা যাচ্ছে না। যদি অপর দল বডিলাইন বোলিং করে, তাহলে আর কী বলব!”
তবে বল বা ব্যাট আর এখন বিষয় নয়। জাতীয় রাজনীতিতে কৌতূহলের ব্যাপার হল, শশী তারুরও কি মানস ভুইঞাঁর মতো হয়ে যাবেন। কেরল তথা তিরুবনন্তপুরমে থারুরই কি হবে বিজেপির ওপেনিং ব্যাটসম্যান।