সদগুরু
শেষ আপডেট: 1st October 2024 21:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: টিভির পর্দা থেকে ফেসবুক ভিডিও, প্রায়ই জীবনচর্যার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় সদগুরু জাগ্গি বাসুদেবকে। দেশে-বিদেশে লক্ষ লক্ষ ভক্ত তাঁর। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোটি অনুগামী। আর তাঁদের ভক্তিও এতই তীব্র, যে সদগুরুর পায়ের ছবি তাঁদের মধ্যে বিক্রি হয়, ঘরে রাখার জন্য। সে ছবি আবার বিষম দামী, ৩২০০ টাকা!
সভ্যতা যত আধুনিক হচ্ছে, মানুষের একাংশের মধ্যে ধর্মকর্ম নিয়ে উৎসাহও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বলে অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। এই ধরনের নানা বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই ধর্মগুরুদের দাপট এবং প্রভাব, দুইই বাড়তে শুরু করেছে গত কয়েক বছর ধরে। এমনই একজন হলেন এই সদগুরু।
এই ধরনের ধর্মগুরুদের অনেকেই একাধিক বারই এসেছেন পুলিশি তদন্তের স্ক্যানারে। আশারাম বাপুর নাম সেই তালিকার উপরেই রয়েছে। হরিয়ানার রামরহিমের নামও সবাই জানে। সম্প্রতি যোগগুরু রামদেবের বিক্রি করা জিনিস নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকাতেই সর্বশেষ যোগ হয়েছে, সদগুরুর নাম।
অভিযোগ, সদগুরু জাগ্গি বাসুদেবের ইশা ফাউন্ডেশনের আশ্রমে কর্তৃপক্ষ মেয়েদের মগজধোলাই করে এবং সন্ন্যাসিনী হতে বাধ্য করে। এমনকী তাদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না।
উল্লেখ্য, এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ এস কামরাজের এক অভিযোগের ভিত্তিতে কোয়েম্বাতুর গ্রামীণ পুলিশকে মাদ্রাজ হাইকোর্ট সোমবার তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই প্রাক্তন অধ্যাপকের দাবি, তাঁর দুই মেয়ে গীতা কামরাজ, বয়স ৪২ এবং লতা কামরাজ, বয়স ৩৯। তাদের এই আশ্রমে জোর করে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, এই আশ্রম কর্তৃপক্ষ মেয়েদের মাথা মুড়িয়ে খায় এবং সন্ন্যাসিনী হতে বাধ্য করে। এমনকী তাদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না।
এর পরেই স্বঘোষিত 'দেবপুরুষ' সদগুরু জাগ্গি বাসুদেবের আশ্রম ইশা ফাউন্ডেশনে পুলিশ তল্লাশি শুরু করল মঙ্গলবার বিকেলে। মাদ্রাজ হাইকোর্ট সদগুরুর আশ্রমের বিরুদ্ধে যাবতীয় ফৌজদারি অভিযোগের উপর রিপোর্ট চাওয়ার পরই তৎপর তামিলনাড়ু পুলিশ। কোয়েম্বাতুরের তোন্ডামুতুরে বিরাট জমি-জায়গার উপর রয়েছে ইশা ফাউন্ডেশন। এদিন কোয়েম্বাতুর থেকে প্রায় ১৫০ পুলিশ কর্মীর এক বাহিনী এডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে ঢুকে পড়ে আশ্রমে। তারপর সেখানে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়।
এসবের মাঝেই সামনে এসেছে, সদগুরুর পায়ের ছবি। দেখা গেছে, ৩২০০ টাকায় অনলাইনে দিব্যি বিক্রি হচ্ছে সেই ছবি।
মাদ্রাজ হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলে বলেছে, ইশা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদগুরু জাগ্গি বাসুদেবের জীবনাচারণে এরকম বৈপরীত্য কেন। বিচারপতি এস এম সুব্রহ্মণ্যম এবং ভি শিবজ্ঞানম জানতে চান, সদগুরু বা জাগ্গ নামে খ্যাত এই ব্যক্তির নিজের মেয়ে আছে। যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং সুপ্রতিষ্ঠিত আছেন। সেই লোক কী করে অন্য মেয়েদের মুণ্ডিত মস্তক করে যোগ সেন্টারে সন্ন্যাসিনী করে রাখেন!
অভিযোগকারী বাবা তাঁর মেয়েদের আশ্রমে জোর করে আটকে রাখার দাবি করলেও আদালতে উপস্থিত দুই মেয়েই স্বেচ্ছায় আশ্রমবাসী হওয়ার কথা জানান। বাবা আদালতে জানান, তাঁর বড় মেয়ে ব্রিটেনের একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকাট্রনিক্সে স্নাতকোত্তর করেছেন। বিশাল টাকা বেতন পেতেন। বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে তিনি এই আশ্রমে যোগ অধ্যয়নে যোগ দেন। তাঁর ছোট মেয়ে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সেও তার দিদির পথে পা বাড়ায়। বাবার আরও অভিযোগ, এই আশ্রম থেকে খাবার ও ওষুধে এমন কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয় যাতে কারও চিন্তাশক্তি হারিয়ে যায়।