শেষ আপডেট: 8th April 2025 13:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একসময় ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেণ্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট অর্থাত্ নারেগা (National Rural Employment Guarantee Act) প্রকল্পে কাজ করে টেনেটুনে সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন সে সব অতীত। আজ তিনি নিজের সৌরশক্তি কোম্পানি খুলে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। গোটা দেশে দুর্গা সোলার কোম্পানি (solar energy), যা ডুঙ্গারপুর রিনিউয়েবল এনার্জি টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেড নামে পরিচিত, খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছে। এই সাফল্যের অন্যতম দাবিদার যিনি, তাঁর নাম রুক্মিণী কাটারা (Rukmini Katara)। তিনিই কোম্পানিটির সিইও (CEO)।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
দুঙ্গারপুর জেলার মাদোয়া খাপড়দা নামে রাজস্থানের (Rajasthan) একটি ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা রুক্মিণী। আদিবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের সাধারণ মহিলাদের জন্য রুক্মিণীর প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের গল্প রীতিমতো অনুপ্রেরণা জোগায়। জানা যায়, নবম শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করা রুক্মিণী দৈনিক মজুরি শ্রমিক থেকে একলাফে ৩.৫ কোটি টাকারও বেশি টার্নওভারের একটি কোম্পানির সিইও হয়েছেন।
কীভাবে পথ চলা শুরু?
একাধিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী নারেগা শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় একদিন রাজীবিকা নামে একটি সংস্থার খবর কানে আসে রুক্মিণীর। সেখান থেকেই তাঁর জীবনে উত্থানের শুরু। এরপর সেই গোষ্ঠীতে যোগ দেন। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সৌর প্যানেল তৈরি থেকে শুরু করে সমস্ত খুঁটিনাটি কাজ তিনি রপ্ত করে ফেলেন। এরপর তিনি দুর্গা সোলার কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করেন বলে খবর।
রুক্মিণীর সিইও হয়ে ওঠার গল্প
দুর্গা সোলার কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি রুক্মিণীকে। তাঁর সততা ও কাজের প্রতি আগ্রহের কারণেই তিনি কোম্পানির সিইও হন। বর্তমানে তিনি শুধু কোম্পানি পরিচালনাই করেন না বরং এলাকার সমস্ত মহিলাদের জীবিকা নির্বাহের পথ বাতলে দিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে ইতিমধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকারই ৫০ জন মহিলাকে নিজের কোম্পানিতে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন রুক্মিণী।
কী তৈরি করে এত সাফল্য?
কোম্পানিটি মূলত সৌর প্লেট, বাল্ব এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে। গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটি ৩.৫ কোটি টাকারও বেশি টার্নওভার করেছে বলে খবর।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
দিল্লিতে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন রুক্মিণীকে সংবর্ধনা দেন, তখনই রাজস্থানের ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা মহিলার গল্প দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "নারীদের কখনই নিজেকে থামানো উচিত নয় কারণ তাঁদের শিক্ষার অভাব রয়েছে। কম শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও যে কোনও মহিলাই ইচ্ছে থাকলে উন্নতি করতে পারেন। শিক্ষা সাফল্যের পথে কখনই বাধা হতে পারে না।"
রুক্মিণীর পরিবার
জানা গিয়েছে চার সন্তানের মা রুক্মিণীর পরিবারে এখন আর আর্থিক অনটন নেই। স্বামী কমলেশ এবং তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে রাকেশ এবং মেয়ে আশা বি.এড করছেন। ছোট ছেলে প্রবীণ এবং যুবরাজ এখনও কলেজে পড়েন।
মহিলাদের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা
উপজাতি মহিলাদের অগ্রগতির জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রুক্মিণী। তিনি শুধুমাত্র একটি কোম্পানির সিইও নন, অনেক মহিলাদের কাছে তিনি অনুপ্রেরনা। তাঁর কথায়, "আমি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। কিন্তু আজ আমি একটি কোম্পানির মালিক। তাহলে অন্য মহিলারা কেন পারবেন না?"