রবার্ট বঢ়রা।
শেষ আপডেট: 18 April 2025 10:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজস্থানের রুক্ষ বালিয়াড়ি শহর বিকানীর। দেশের এই 'ভুজিয়া রাজধানী' গ্রীষ্মকালে রীতিমতো নরকের রূপ নেয়, আগুনজ্বলা গরমে। শীতেও অবস্থা তথৈবচ, ঠান্ডায় সিঁটিয়ে যায় গোটা এলাকা। নির্জন মরুজমিতে না কোনও ফসল হয়, না মাটির নীচে আছে কোনও তেল বা খনিজ। চারপাশে শুধুই ধুলো, লাল পিঁপড়ে, ধুতুরা গাছ আর মরুভূমির পোকামাকড়।
তবুও ২০১১ সালে, হঠাৎ করেই এই অনুৎপাদনশীল জমির দাম বাড়তে শুরু করে। শোনা যাচ্ছিল, দিল্লি থেকে কেউ এখানে জমি কিনছে, অনেক জমি, তাও আবার প্রচুর টাকায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী বিনীত অসোপা তেমনই এক প্রস্তাব পেয়ে রীতিমতো চমকে যান। বাজারদর যেখানে প্রতি হেক্টর জমির জন্য ২৫ হাজার টাকার নীচে, সেখানে তাঁকে ৬৫ হাজার টাকা অফার করা হয়। তিনি জমি বিক্রি করে দেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন, চেকটি এসেছে রবার্ট বঢরা নামে, যিনি সনিয়া গান্ধীর জামাই এবং তৎকালীন ইউপিএ যুগে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য।
২০১১ সালে এভাবেই বিকানেরে ২৭৫ একর জমি কেনে বঢরার কোম্পানি স্কাইলাইট রিয়েলটি। সেখানেই ছিল একাধিক সোলার গ্রিড স্টেশন। সে সময়ে অনেকেই সোলার গ্রিডের বিষয়ে কিছু জানতেন না, কোথায় কী তৈরি হবে, তাও জানতেন না। তবে রবার্ট বঢরা জানতেন, ঠিক কোথায় সরকারি প্রকল্প হবে।
২০০৯-২০১১ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ন্যাশনাল সোলার মিশন’ ঘোষণা করে। সেই অনুযায়ী রাজস্থানে দু'ধাপে সোলার প্রকল্পের টেন্ডার ডাকা হয়। বালির শহর বিকানীর এমনিতেই সূর্যালোক সমৃদ্ধ এলাকা, আর সেখানে প্রকল্প সফল করতে গেলে দরকার ছিল গ্রিড স্টেশনের কাছাকাছি জমি।
তাই মিশন ঘোষণার পরে যখন টেন্ডারপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো জমি খুঁজছিল, তখন অনেক জায়গায় রবার্ট বঢরাই হয়ে যান একমাত্র বিক্রেতা। এভাবেই, স্কাইলাইট রিয়েলটি মাত্র ৪.৪৫ লাখ টাকায় ৩০ হেক্টর জমি কিনে, পরে এক সংস্থাকে প্রায় ২ কোটি টাকায় তা বিক্রি করে। ৪৫ গুণ মুনাফা!
এই প্রশ্নের উত্তর খুব জটিল নয়, কারণ সেই সময়ে রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার ছিল। আর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ অশোক গেহলট।
পরবর্তীকালে বঢরার এই জমি কেনাবেচার বিষয় নিয়েই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) রাজস্থানে মামলা রুজু করে।
২০১১ সালের আগেও ২০০৮-০৯ সালে হরিয়ানার মানেরসরে স্কাইলাইট হসপিটালিটি নামে ৩.৫ একর জমি কেনে বঢরার কোম্পানি। তখন কোম্পানির শেয়ার ক্যাপিটাল ছিল মাত্র ১ লক্ষ টাকা। তবুও কর্পোরেশন ব্যাংক থেকে ৭.৯৪ কোটি টাকার ওভারড্রাফট নেয় কোম্পানিটি।
এই জমি ১৫.৩৮ কোটি টাকা দিয়ে কিনে, পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যতম বড় রিয়েল এস্টেট সংস্থা ডিএলএফ-কে (DLF) তা বেচে দেওয়া হয় ৫৮ কোটি টাকায়! আগাম হিসেবে ডিএলএফ-এর তরফে দেওয়া হয় ৫০ কোটি টাকা। সঙ্গে আরও ৫ কোটি টাকার সুদবিহীন ঋণও দেয় ডিএলএফ, যা বঢরার অন্যান্য প্রকল্পে কাজে লাগে।
এই ডিএলএফ-বঢরা চুক্তি, এটিও বর্তমানে ইডির নজরদারিতে রয়েছে।
তবে ইডি-র তদন্তে যে তথ্যই উঠে আসুক না কেন, একথা সত্য, রবার্ট বঢরা প্রায় কোনও মূলধন ছাড়াই, আগাম খবর, রাজনৈতিক সংযোগ এবং কর্পোরেট সংস্থার সহায়তায় কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। শুধু ভাগ্য নয়, ছিল সুপরিকল্পিত চিত্রনাট্যও। পরিবার, সরকার, কর্পোরেট, সবকিছুকেই পাশে পেয়ে যান তিনি।
তাই এমন একটা সময় আসে, যখন কারও দরকার ছিল জমি, কারও দরকার ছিল তথ্য। আর রবার্ট বঢরার সংযোগ এবং সময়জ্ঞান ছিল বলে, তাঁর কাছে আগে থেকেই সবটা ছিল।
অনেকেই মনে করছেন, বঢরার কাহিনি যেন রবার্ট কিয়োসাকির লেখা ‘ধনী বাবা, দরিদ্র বাবা’ বইয়ের বতোই আরও একটি বইয়ের রসদ। 'ধনী জামাই, গরিব জামাই।'