শেষ আপডেট: 21st September 2024 13:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেরলের ওয়ানাড় থেকে ইজরায়েলের চর সংস্থার মোসাদের ছকে লেবাননের পেজার বিস্ফোরণে অন্যতম চর্চিত নাম রিনসেন জোসে। কে তিনি? কী তাঁর পরিচয়? ভারতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই বা কতটুকু? এখন তা নিয়েই নানান রূপকথার গল্প ভেসে বেড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। জোসের পরিবার থাকে কেরলের ওয়ানাড় জেলার মনন্তাভেড়ির কাছে ওনদয়াঙ্গাড়ি গ্রামে।
জোসের কাকা থাঙ্কাচান টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানান, রোজ আমাদের ফোনে কথা হয়। গত তিনদিন ধরে আমরা জোসের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারিনি। ও খুবই সোজাসাপটা মানুষ। ওর উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ও কোনও খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ওকে ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে।
জোসের বাবা মুথেডাথ জোসে এবং মা গ্রেসি এখনও ওয়ানাড়েই থাকেন। দর্জির কাজ করেন তাঁরা। পরিবারের সদস্যরা জানান, জোসে শেষবার বাড়িতে এসেছিলেন ২০২৩ সালে নভেম্বরে। এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি আবার নরওয়েতে ফিরে যান। জোসে সেদেশেরই নাগরিক।
রিনসন জোসে নরওয়ের অনাবাসী ভারতীয়। লেবাননে হিজবুল্লা জঙ্গিগোষ্ঠীর পেজার বিস্ফোরণে নাম জড়িয়েছে জোসের। বিভিন্ন খবরে প্রকাশ পেজার সরবরাহের পিছনে জড়িত ছিল বুলগেরিয়াস্থিত কোম্পানি নোর্টা গ্লোবাল, যার মালিক হলেন রিনসন।
রিনসনের জন্ম ভারতেই। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কয়েক বছর আগে নরওয়ে চলে যান। অসলোয় ফিরে আসার আগে কিছুদিন লন্ডনে ছোটখাট কাজ করতেন। বর্তমানে ৩৭ বছর বয়সি জোসে অসলোতেই স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। তাঁর যমজ ভাই লন্ডনে থাকেন। তাঁর বোন আয়ারল্যান্ডে নার্সের কাজ করেন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রিনসনের পড়াশোনা গ্রামের স্কুলে। তারপর ওয়ানাড় এবং বেঙ্গালুরুতে পড়ার পর নরওয়েতে উচ্চশিক্ষার জন্য রওনা দেন। জোসে কখনও কোনও বেআইনি কাজ করতে পারে না বলে বিশ্বাস তাঁর কাকার। ওর সম্পর্কে যা খবর বেরচ্ছে তা অবিশ্বাস করে তাঁর পরিবার।
পেশাদার হিসেবে জোসে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ফিল্ডে কাজ করেছেন। ২০২২ সালে বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় নিজে নোর্টা গ্লোবাল লিমিটেড নামে কোম্পানি খোলেন। তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলিতে। উল্লেখ্য, পেজার বিস্ফোরণের পর থেকে তাঁর কোম্পানির ওয়েবসাইট বন্ধ রয়েছে। রয়টার্স তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জড়িত থাকার বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
যদিও বুলগেরিয়া সরকার এই বিস্ফোরণে নোর্টা গ্লোবাল কোম্পানিকে ক্লিনচিট দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু দেশ যেমন বুলগেরিয়া গোয়েন্দা সংস্থা, নরওয়ে পুলিশ এবং লেবাননের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লা জঙ্গিদের কাছে পাঠানো পেজার-ওয়াকিটকির সঙ্গে কার বা কাদের হাত রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
ওয়ানাড় পুলিশ কর্তা জানান, তাঁরাও একটি রুটিন তদন্ত চালাচ্ছেন এবং জোসের পরিবারের নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তাতেও জোসের কাকা দাবি করে বলেন, আমাদের গির্জায় আসা যে কাউকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন কেউ ওর বিরুদ্ধে কোনও খারাপ অভিযোগ করবে না। ছাত্র বয়স থেকে ও কঠিন পরিশ্রম করে বড় হয়েছে। এমনকী নরওয়েতে পড়ার সময় খবরের কাগজ বিলি করত এবং বৃদ্ধাশ্রমে কাজ করত খরচ চালাতে। একজন ভালো ছেলে এই পরিস্থিতিতে ফাঁসানো হচ্ছে অভিযোগ করেন তিনি।