বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দুর্ঘটনাস্থলে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু।
ছেলে জুনেইদের খোঁজে বাবা
শেষ আপডেট: 13 June 2025 06:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লন্ডন থেকে এ দেশে ফিরেছিলেন ইদের আনন্দ ভাগ করে নিতে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন, হাসি-আনন্দে ভরপুর মুহূর্ত বন্দি করেছিলেন ক্যামেরায়। কেউ জানত না, সেটাই তাঁর জীবনের শেষ ইদ। ৩৮ বছরের জুনেইদ মহম্মদ নানাভালা, তাঁর স্ত্রী আকিল এবং তিন বছরের কন্যা সানা, তিনজনই বৃহস্পতিবার ছিলেন আমদাবাদের ওই বিমানে। আকাশে ওড়ার মিনিট খানেকের মধ্যেই সেই বিমান ভেঙে পড়ে, আগুনে ঝলসে যায় একজন বাদে সকলে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় বিমানের ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন জুনেইদ ও তাঁর পরিবারও।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দেখা যায়, আমদাবাদের বিখ্যাত বি.জে. মেডিক্যাল কলেজে তৈরি হওয়া ডিএনএ সংগ্রহ কেন্দ্রের এক কোণে বসে রয়েছেন জুনেইদের বাবা আবদুল্লাহ মহম্মদ। চোখে-মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। স্তব্ধ, নির্বাক। 'গত শুক্রবার এসেছিল ছেলেটা, ইদে সারপ্রাইজ দিতে,' বলেন তিনি। 'আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম। একসঙ্গে ইদ কাটালাম, অনেক ছবি তুলল, হেসে খেলে গেল কয়েকটা দিন। কে জানত, এইভাবে চলে যাবে...!'
আবদুল্লাহর সঙ্গে এসেছেন সুরতের রামপুরা এলাকার আরও ২০-২৫ জন আত্মীয়। তাঁদের একটাই লক্ষ্য, জুনেইদের দেহ শনাক্ত করতে রক্ত দিয়ে ডিএনএ মিল করানো।
সেই মুহূর্তে হাসপাতালের মর্গের বাইরে ভিড়, হাহাকার আর পুলিশি ঘেরাটোপ। একদিকে আত্মীয়দের কান্না, অন্যদিকে নিথর দেহ। হাসপাতালের ভেতরে চলছে দেহ শনাক্তের প্রক্রিয়া, কিন্তু বেশিরভাগ দেহ এতটাই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে যে, চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। একমাত্র ভরসা ডিএনএ টেস্ট।
লন্ডনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জুনেইদ একটি সংস্থার কর্ণধার ছিলেন। আমদাবাদেও তাঁর সংস্থার একটি শাখা রয়েছে। ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হলেও নিয়মিত ভারতে আসতেন। ইদের সময় এলে কখনওই পরিবারকে ছেড়ে থাকতেন না।
দুর্ঘটনার আগে শেষ কথা হয়েছিল দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে। বাবা আবদুল্লাহর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানিয়েছিলেন, সিকিউরিটি চেক সেরে ফেলেছেন, এখন বোর্ডিং হবে। তারপর... একেবারের মতো ছিন্ন হল সমস্ত যোগাযোগ।
জুনেইদের মতোই একের পর এক পরিবার এখন ভেঙে পড়ছে বি.জে. মেডিক্যাল কলেজে। যেমন ধবল এসেছিলেন নিজের কাকু ও কাকিমার খোঁজে। বা রমণভাই প্যাটেল এসেছেন নাতনি নিরালির খোঁজে। নিরালি পেশায় ডেন্টিস্ট, কানাডার নাগরিক, পড়াশোনা করেছিলেন এই মেডিক্যাল কলেজ থেকেই। তাঁর পরিবারের চোখ এখন আটকে রয়েছে টিভির পর্দায়, সেখানে হাসপাতালের এক বিছানায় শুয়ে থাকা এক মহিলাকে তাঁরা নিরালি বলে ভাবছেন। মনের কোণে এখনও বেঁচে রয়েছে আশা।
দেশ-বিদেশের যাত্রীভর্তি এই বিমানে ছিলেন ভারতের ১৬৯ জন, ব্রিটেনের ৫৩ জন, কানাডার এক জন ও পর্তুগালের সাত জন নাগরিক। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিও ছিলেন এই বিমানে। তিনিও প্রাণ হারান।
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দুর্ঘটনাস্থলে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু। আজ, শুক্রবার দুর্ঘটনাস্থলে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিকে, ডিএনএ সংগ্রহ কেন্দ্রের এক কর্মী বলেন, 'দেহের নমুনার সঙ্গে পরিবারের দেওয়া নমুনা মিলিয়ে রিপোর্ট আসতে ৭২ ঘণ্টা লাগবে। তারপরই দেহ হস্তান্তর করা যাবে।'