উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তীব্র আক্রমণ করে বলেন, 'এই মনোভাবই দেশপ্রেমকেও ভোটব্যাঙ্কের নামে বিভাজন করার সাহস পায়। কিন্তু দেশের মানুষ এই বিকৃত জাতভিত্তিক চিন্তার যোগ্য জবাব দেবেন।'
যোগী আদিত্যনাথ, ব্যোমিকা সিং, এসপি নেতা (ছবি- দ্য ওয়াল)
শেষ আপডেট: 16 May 2025 15:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতীয় সেনা কীভাবে মোকাবিলা করেছে, কীভাবে তাদের ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসবাদ দমনের চেষ্টা করেছে, ৫-৬ দিন ধরে সে বিশ্লেষণ সাংবাদিক বৈঠক করে বিদেশ সচিবের সঙ্গে করেছেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। দেশের বীর সন্তান হয়েও কুরেশিকে কটাক্ষের শিকার হতে হয়। তাঁকে 'জঙ্গিদের বোন' বলেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ। সেই নিয়ে তুমুল বিতর্কের মাঝেই এবার ব্যোমিকা সিং-কে নিয়েও 'কু' মন্তব্য করলেন সমাজবাদি পার্টি নেতা। জাত তুলে বেকায়দায় পড়লেন তিনিও। নেতাকে ছেড়ে কথা বললেন না উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রামগোপাল যাদব বলেন, 'উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী—এই তিনজনই অপারেশন সিঁদুরের প্রেস ব্রিফিংয়ে ছিলেন। ব্যোমিকা সিং আসলে হরিয়ানার জাট, এয়ার মার্শাল ভারতী বিহারের পূর্ণিয়ার যাদব, আর কর্নেল কুরেশি মুসলিম। তিনজনই পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, দলিত এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর, যাকে আমরা পিডিএ বলি। একজনকে অপমান করা হয়েছে কারণ তিনি মুসলিম, আর একজনকে রাজপুত ভেবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর এয়ার মার্শালের পরিচয় তো জানতই না, না হলে তাঁকেও অপমান করতেন।'
যাদবের দাবি, 'বিজেপির নেতারা জানতেন না উইং কমান্ডার সিং এবং ভারতীর জাত কী। তা জানলে তাঁদেরও গালিগালাজ করা হত। যাদের মানসিকতা খারাপ, তারা সেনাবাহিনীর বীরত্ব নিয়ে কথা না বলে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে কথা বলেন।'
রামগোপাল যাদব বিজেপির দেশব্যাপী ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন। মনে করেন, বিজেপি সব কিছুই করে ভোটের জন্য। এখন তিরঙ্গা যাত্রা বের করছে। যার কোনও দরকারই নেই। যদি সত্যিই দেশের গর্বের কথা তুলে ধরতে হয়, তাঁর মতে, তাহলে সব রাজনৈতিক দলকে, গোটা দেশের আস্থা নিয়ে এগোতে হবে।
রামগোপাল যাদবের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এক্স-এ পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম জাত বা ধর্ম দিয়ে বিচার করা যায় না। সেনার প্রতিটি জওয়ান ‘রাষ্ট্রধর্ম’ পালন করেন, তারা কোনও জাত বা ধর্মের প্রতিনিধি নন।' জাতপাত প্রসঙ্গে তাঁর মত, 'দেশের সাহসিনী কন্যাদের জাতপাতে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া শুধু সমাজবাদী পার্টির সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় নয়, বরং ভারতীয় সেনার বীরত্ব ও দেশের গর্বের প্রতি গভীর অপমান।'
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তীব্র আক্রমণ করে বলেন, 'এই মনোভাবই দেশপ্রেমকেও ভোটব্যাঙ্কের নামে বিভাজন করার সাহস পায়। কিন্তু দেশের মানুষ এই বিকৃত জাতভিত্তিক চিন্তার যোগ্য জবাব দেবেন।'
উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যও এক্স-এ প্রতিক্রিয়া জানান। লেখেন, 'সেনাবাহিনী শুধুমাত্র দেশের রক্ষা করে, তাদের কোনও ধর্ম বা জাত হয় না। সেনাবাহিনীর মধ্যে জাতপাত দেখা মানে এক নিম্ন মানসিকতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেনাবাহিনীতে মহিলাদের ক্ষমতায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর ওপর সকলের ভরসা রাখা উচিত।”
বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও রামগোপাল যাদবের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, 'যখন গোটা দেশ পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যে গর্বিত, তখন ধর্ম বা জাতের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীকে বিচার করা অত্যন্ত অন্যায়। যে ভুলটি বিজেপির মন্ত্রী করেছেন, আজ একই ভুল করলেন সমাজবাদী পার্টির সিনিয়র নেতা। এটা লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয়।'
এই নিয়েও রীতিমতো ছিঃ ছিঃ করতে শুরু করেছে সমাজ মাধ্যম থেকে রাজনৈতিক মহল সকলে। এপর্যন্ত পাল্টা কোনও প্রতিক্রিয়া সমাজবাদী পার্টি নেতার পাওয়া যায়নি।