মুকেশ অম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ একমাত্র ভারতীয় সংস্থা হিসেবে বিশ্বজুড়ে শীর্ষ ৩০ তালিকায় জায়গা পেয়েছে। নতুন AI রিপোর্টে ভারতীয়দের ChatGPT ব্যবহারও বিশ্বে সর্বাধিক।
মুকেশ আম্বানি।
শেষ আপডেট: 2 June 2025 15:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তিভিত্তিক ৩০টি পাবলিক কোম্পানির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ভারতের মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ—এটাই একমাত্র ভারতীয় সংস্থা, যাকে এই মর্যাদা দিয়েছে সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট ‘Trends - Artificial Intelligence’। বিশাল ৩৪০ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার এবং তার প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এই তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি প্রযুক্তি দৈত্য কোম্পানি যথাক্রমে শীর্ষ ৮টি স্থান দখল করে রেখেছে—মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া, অ্যাপল, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট, মেটা প্ল্যাটফর্মস, টেসলা এবং ব্রডকম। এরপরেই রয়েছে তাইওয়ানের TSMC এবং চীনের টেনসেন্ট।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, যার বাজার মূলধন বর্তমানে ২১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তালিকায় ২৩তম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় রিলায়েন্সের সঙ্গে রয়েছে এনভিডিয়া, অ্যাপল, মেটা, টেসলা, আলিবাবা, সেলসফোর্স ও চায়না মোবাইল-এর মতো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি সংস্থাগুলো।
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে (১৯৯৫-২০২৫) শুধুমাত্র পাঁচটি কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ ৩০-এ ছিল, মাইক্রোসফট, ওরাকল, সিসকো, আইবিএম এবং এটিঅ্যান্ডটি। এই সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৫ সালে তালিকায় ১৬টি কোম্পানি (৫৩%) রাখলেও ২০২৫ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১টি (৭০%)। অন্যদিকে, জাপান ১৯৯৫ সালে যেখানে ছিল ৯টি কোম্পানির (৩০%) প্রতিনিধি, বর্তমানে একটিও নেই।
২০২৫ সালে নতুন ভৌগোলিক প্রবেশকারীদের মধ্যে রয়েছে চিন (৩টি), জার্মানি (২টি), তাইওয়ান (১টি), নেদারল্যান্ডস (১টি), দক্ষিণ কোরিয়া (১টি) এবং ভারত (১টি)। তাইওয়ানের একমাত্র সংস্থা TSMC, যেটি বিশ্বের ৮০-৯০ শতাংশ উন্নতমানের সেমিকন্ডাক্টর এবং ৬২ শতাংশ সাধারণ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন করে।
এই প্রতিবেদনে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে—বিশ্বব্যাপী ChatGPT মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। বিশ্বের ১৩.৫% সক্রিয় ব্যবহারকারী ভারতীয়, যা যুক্তরাষ্ট্র (৮.৯%), ইন্দোনেশিয়া (৫.৭%) এবং ব্রাজিল (৫.৪%)-এর চেয়েও অনেক বেশি। এমনকি প্রতিবেশী পাকিস্তানেরও ৩% ব্যবহারকারী রয়েছে।
চীনা AI অ্যাপ DeepSeek-এর ক্ষেত্রেও ভারত তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী দেশ, বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ব্যবহারকারীর ৬.৯% ভারতীয়। এই তালিকায় চীন রয়েছে শীর্ষে (৩৩.৯%) এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া (৯.২%)।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, AI এখন শুধুমাত্র গবেষণার বিষয় নয়—এটি হয়ে উঠেছে প্রতিটি শিল্পক্ষেত্রের মূল অবকাঠামোর অংশ। গ্রাহক সাপোর্ট থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিক্ষা ও উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে AI গভীরভাবে প্রবেশ করেছে।
এর পেছনে অন্যতম চালিকা শক্তি হলো সহজে ব্যবহারযোগ্য মাল্টিমোডাল AI টুলের বিস্তার, যা এখন মোবাইলের মাধ্যমে সর্বত্র প্রবেশযোগ্য। inference cost হ্রাস এবং মডেলের সহজলভ্যতাও এই বিস্তারে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।
প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো AI-কে নিজেদের পণ্যে একীভূত করছে—উদাহরণস্বরূপ কো-পাইলট, স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট বা AI এজেন্ট। এতে করে ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগের ধরণই পাল্টে যাচ্ছে।
AI প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে তুলতে বড় বড় কোম্পানি এবং ক্লাউড সেবাদাতা সংস্থাগুলি বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করছে। শুধু চিপ নয়—নতুন ডেটা সেন্টার, নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা এবং শক্তি অবকাঠামোতেও জোর দেওয়া হচ্ছে। AI যত ঘনিষ্ঠভাবে গৃহস্থালি, গাড়ি, খামার বা ল্যাবে প্রবেশ করছে, ততই ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল অবকাঠামোর সীমারেখা মুছে যাচ্ছে।