শেষ আপডেট: 14th March 2024 15:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লোকসভা ভোটের আগে ইতিমধ্যেই সিএএ নিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত সোমবার থেকেই তা কার্যকর হয়েছে। এবার ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগোল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে এই নিয়ে রিপোর্ট জমা দিল কেন্দ্রীয় কমিটি। ৮ ভাগে ১৮ হাজারের বেশি পাতার রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
মোদী সরকারের তৈরি করা এই কমিটির প্রধান দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তিনিই রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্য়ম সূত্রে খবর, ১৮, ৬২৬ পাতার রিপোর্ট দিয়ে গোটা দেশে একসঙ্গে ভোট করার পক্ষেই সওয়াল করেছে কোবিন্দ কমিটি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরেই মোদী ‘এক দেশ এক ভোট’ তত্ত্বের কথা বলেছিলেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ইস্তাহারেও এর উল্লেখ ছিল। শেষমেষ গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নেতৃত্বে এই কমিটি গড়েছিল মোদী সরকার। সেই কমিটিই বৃহস্পতিবার রিপোর্ট জমা দিল।
ঠিক কী বলা হয়েছে এই রিপোর্টে? কোবিন্দ কমিটির সুপারিশ, প্রথম ধাপে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। পরবর্তী ১০০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে পুরসভা-পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক। কমিটির এও সুপারিশ, লোকসভা ভোট পর্যন্ত রাজ্যের বিধানসভাগুলির মেয়াদ করা হোক। এছাড়াও কক্ষ যদি ত্রিশঙ্কু হয়, বা যদি বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে, তাহলে নতুন করে নির্বাচন হোক। তবে এই নির্বাচন ওই ৫ বছরের বাকি মেয়াদকালের জন্য হবে।
কমিটি তার রিপোর্টে এও দাবি করেছে, ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করা হলে বিপুল অর্থের সাশ্রয় হবে। যা পরে রাজনৈতিক দলগুলিই উন্নয়নের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারবে। পাশাপাশি, আলাদা নির্বাচন মানে প্রতি ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যায় জনবল অর্থাৎ কর্মী-অফিসারদের কাজে লাগাতে হয়। ফলে সরকারি কাজ ব্যহত হয়। এছাড়াও আদর্শ আচরণবিধি প্রয়োগের ফলেও সরকারি কাজ থমতে থাকে। এক সঙ্গে ভোট হলে পাঁচ বছরে একবার মাস দেড়েকের জন্য আদর্শ আচরণ বিধি চালু থাকবে।
এই নীতির কথা সামনে আসার পর থেকেই দেশের বিরোধী দলগুলি সমালোচনায় মুখর হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী। এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশের নির্বাচনে আর কোনও বৈচিত্র থাকবে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে পার্থক্য থাকে সেটা এই নীতি কার্যকর হলে আর থাকবে না। দুই নির্বাচনের ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার লাভবান হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এও মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার আসলে ‘এক দেশ এক দল’ শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যেই ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করতে চাইছে। কারণ, তারা মনে করছে, যৌথভাবে ভোট হলে জাতীয় ইস্যুকে সামনে রেখে বিধানসভা ভোটেও বাজিমাৎ করতে পারবে পদ্ম শিবির। সর্বভারতীয় দল হিসাবে কংগ্রেস বা অন্য কোনও দলকে তারা উঠতেই দেবে না। সেই সুযোগে আঞ্চলিক দলগুলিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে ক্ষমতা দখল সম্ভব। আসলে, আঞ্চলিক দলগুলি রাজ্য ভোটের জন্য যে পৃথক নির্বাচনী ইস্যু প্রকাশ করত, তা লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলে জাতীয় ইস্যুর চাদরে ঢাকা পড়ে যাবে। ফলে প্রচারেও বিরাট ধাক্কা খাবে আঞ্চলিক দলগুলি।
উল্লেখ্য, রামনাথ কোবিন্দ ছাড়াও এই কমিটিতে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যসভায় বিরোধী দলের প্রাক্তন নেতা গুলাম নবি আজাদ, প্রাক্তন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং, লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব সুভাষ কাশ্যপ এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট হরিশ সালভে। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও প্যানেলের সদস্য করা হয়েছিল, যদিও এই নীতির বিরোধিতা করে কমিটির সদস্য হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।