শেষ আপডেট: 3 December 2023 13:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রবিবার চার রাজ্যের ভোটের ফলে ৩-১-এ জিতেছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি পদ্ম শিবির সরকার গড়তে চলেছে রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ে। কংগ্রেস জিতেছে শুধুমাত্র তেলেঙ্গানায়।
চার রাজ্যের ফলের পর দেশে বিজেপির একক শক্তিতে চলা সরকারের সংখ্যা বেড়ে হল ১২। অন্যদিকে, দেশে চার থেকে কংগ্রেসের সরকারের সংখ্যা কমে হল তিন। তবে তাৎপর্যপূর্ণ হল, হাত শিবির পর পর দক্ষিণের দুটি রাজ্য দখল করল। তেলেঙ্গানায় জয় নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের জন্য সুখবর। সেখানে তারা আঞ্চলিক দল বিআরএস-কে পরাজিত করেছে।
কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন দলটির জন্য বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে গেল হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য রাজস্থান, ছত্তীসগড় ও মধ্যপ্রদেশ হাতছাড়া হওয়া। চার রাজ্যেই বিজেপির মুখ ছিলেন নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। মোদীর বিরুদ্ধে ফের হার মেনে নিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল বলেছেন, এই হার মেনে নিচ্ছি। তবে আমাদের নীতির লড়াই চলবে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, এই ফলাফল সাময়িক বিপর্যয়। কংগ্রেসের প্রত্যাশার সঙ্গে জনরায়ের মিল নেই। খাড়্গে বলেছেন, আমরা ঘুরে দাঁড়াবই।
রাহুল, খাড়্গেরা যাই বলুন না কেন, কংগ্রেসের অন্দরে ইতিমধ্যেই দলের প্রচার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আঙুল উঠেছে রাহুলের দিকেও। অনেকেই মনে করছেন, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি লোকসভা ভোটের অঙ্কে কাস্ট সেন্সাস, ওবিসি সংরক্ষণ বৃদ্ধির বিষয়ে বাড়তি সময় ব্যয় করেছেন। তুলনায় রাজ্যের ইস্যু জায়গা পেয়েছে কম। ফলে ঘাম ঝরিয়েও রাহুল ফায়দা তুলতে ব্যর্থ।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানে গেহলত এবং ছত্তীসগড়ে বাঘেল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছেন। মানুষকে বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছেন, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে কংগ্রেস। রাজস্থানে চাকরি কেলেঙ্কারি এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লাল ডায়েরি কেলেঙ্কারির কথা প্রচারে তুলে ধরে গেহলট সরকারের নাগরিক কল্যাণের প্রকল্পগুলি নিয়ে কংগ্রেসের প্রচারকে ঢেকে দিতে সমর্থ হয়েছে বিজেপি। একইভাবে ভোট ঘোষণার পর প্রকাশ্যে আনা মহাদেব অ্যাপ কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে বিজেপি।
কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই একান্তে মানছেন, প্রচারে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। মধ্যপ্রদেশে কমলনাথ একার সিদ্ধান্তে চলতে গিয়ে দলকে ডুবিয়ে ছেড়েছেন। বিজেপি ক্ষমতায় টিকে যাওয়ার কারণ হিসাবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিয়েছেন একেবারে শেষ প্রহরে ঘোষণা করা তাঁর ‘লাডলি বহেনা’ স্কিমকে। এই প্রকল্পে আর্থিকভাবে দুর্বল মহিলাদের মাসে এক হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় গত বিধানসভা ভোটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পও তৃণমূলকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করেছিল।
আবার কর্নাটকে কংগ্রেস গৃহলক্ষ্মী যোজনা দিয়েই বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে এ বছর মে মাসে। তারপরও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের মুখ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ লাডলি বহেনা স্কিম নিয়ে দিনের পর দিন উপহাস করেছেন বিজেপিকে। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিজেও একই ধরনের স্কিম ঘোষণা করলেও ততদিনে ম্যাচ কংগ্রেসের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। মহিলারাই শিবরাজ সরকারকে মধ্যপ্রদেশে রেখে দিল মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।