শেষ আপডেট: 31st May 2024 11:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিহারে ভোটের প্রচারে জোরদার চর্চার বিষয় রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ ও রাবড়িদেবীর সন্তান সংখ্যা। এ নিয়ে রীতিমতো ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। নির্বাচনী প্রচার সভায় লালু-রাবড়ির সময়ের বিহারের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে নীতীশ বলে বসেন, ‘এঁরা দু’জনে মিলে শুধু বাচ্চা পয়দা করেছে। নয়টি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। ভাবা যায়!’
এই প্রথম নয়। এর আগে রাজ্যের পরিবার কল্যাণ প্রকল্পের একাধিক অনুষ্ঠানে নীতীশ আক্ষেপের সুরে বলেছেন, ‘কী আর বলব, এই ব্যাপারে যাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করার কথা ছিল তাঁরাই কিনা নয়টি সন্তানের বাবা-মা।’ বিহারের জন্ম নিয়ন্ত্রণের ধীর গতির জন্যও লালু-রাবড়িকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা।
এবার ভোটের প্রচারেও লালু-রাবড়িকে নিশানা করেন নীতীশ। বলেন, ‘ওঁদের সময় বিহারে জঙ্গলরাজ ছিল। দু’জনে কোনও কাজ করেননি। শুধু বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন।’ নীতীশের এই মন্তব্য নিয়ে শুধু আরজেডি নয়, অন্য বিরোধী দল এবং সাধারণ মানুষও সমাজমাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই আবার পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর মানসিক সুস্থতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। নীতীশ ইদানীং ভুলে যাচ্ছেন। অসংলগ্ন কথা বলছেন। বছরের গোড়ায় লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রোগ সারেনি।
ক’দিন আগে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী বলে উল্লেখ করেছেন নীতীশ। নিজের ভুল নিজে ধরতে পারছেন না। ফলে হাতে চিরকূট ধরিয়ে ভুল শুধরে দিতে হচ্ছে। লালু-রাবড়ির সন্তানেরা সকলেই বড় এবং বিবাহিত। তাঁর দুই পুত্র রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং একজন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। বড় মেয়ে মিসা ভারতী রাজ্যসভার সদস্য। স্বভাবতই প্রকাশ্য সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের সন্তান সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করায় নীতীশের রুচি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার অনেকেই মনে করছেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
লালুপ্রসাদ মুখ না খুললেও নীতীশকে কড়া জবাব দিয়েছেন রাবড়ি দেবী। বড় মেয়ে মিসা ভারতীর হয়ে পাটনায় প্রচার সভায় রাবড়ি বলেন, ‘বেশ করেছি নয় সন্তানের জননী হয়ে। আমাদের সন্তানেরা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। নীতীশজির একটি মাত্র সন্তান। তাঁকেও ঠিকঠাক মানুষ করতে পারেননি।’
সূত্রের খবর, নীতীশের ছেলে নিশান্ত বাবার সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর বাংলোয় থাকেন। তবে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। ক্যামেরার সামনেও আসেন না। নীতীশের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তাঁর তুলনায় পুত্র নিশান্তের সম্পত্তির পরিমাণ বেশি। তিনি অবিবাহিত।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও লালু প্রসাদের নয় সন্তান নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। বলেছিলেন, পরিবারবাদীরা পরিবারের হাতে ক্ষমতা ধরে রাখতে গণ্ডায় গণ্ডায় সন্তানের জন্ম দিয়েছে। তখন প্রধানমন্ত্রীকে কড়া জবাব দেন লালু। বলেন, ‘আপনি কেন সন্তানের জন্ম দেননি। কেন স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না?’
আরজেডি সুপ্রিমোর সেই কটাক্ষের জবাবেই ‘মোদী-পরিবার’ প্রচার শুরু করে বিজেপি। জেপি নাড্ডা, অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহরা এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন ‘আমি মোদী পরিবারের গর্বিত সন্তান।’ এবার বিজেপির প্রচারে এই কথা লেখা গেঞ্জি, টুপির ছড়াছড়ি ছিল।
লালুপ্রসাদ অবশ্য একাধিকবার তাঁর নয় সন্তান নিয়ে মুখ খুলেছেন। বলেছেন, আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে। তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার নাশবন্দি চালু করেছিল। জন্ম নিয়ন্ত্রণে জোর করে পুরুষদের তুলে নিয়ে গিয়ে ভ্যাসেক্টমি করে দিত। আমি সেই সরকারি নীতির প্রতিবাদে একাধিক সন্তানের জন্ম দিয়েছি।
যদিও গত শতকের নয়ের দশকের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও লালুপ্রসাদ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। অনেকেই মনে করেন, পুত্র সন্তানের বাসনা পূরণ করতেই এতগুলি বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন লালু-রাবড়ি। ঘটনা হল, দুই পুত্র তেজস্বী এবং তেজপ্রতাপ হলেন অষ্টম ও নবম সন্তান।