শেষ আপডেট: 19th July 2024 19:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাঁওয়ার যাত্রা নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে উত্তর প্রদেশে। যোগী আদিত্যনাথের সরকার ঘোষণা করেছে যে পথ ধরে তীর্থযাত্রীরা যাবেন তার দু’পাশের রাস্তায় সমস্ত খাবার দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের নাম বড় হরফে লিখে টাঙিয়ে রাখতে হবে। সোমবার থেকে শুরু হবে হিন্দুদের ওই তীর্থযাত্রা।
প্রথমে মুজফফরনগর পুলিশ এমন নির্দেশ জারি করে। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী যোগীর অফিস থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, গোটার রাজ্যেই এই সিদ্ধান্ত বলবৎ হবে। প্রশাসনের ব্যাখ্যা, যাত্রা পথে হিন্দু তীর্থযাত্রীরা যাতে অহিন্দুদের খাবারের দোকানে ঢুকে না পড়েন, নিরামিষভোজীরা যাতে আমিষ খাবারের দোকান এড়িয়ে চলতে পারেন তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
যোগী সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দল তো বটেই, এমনকী এনডিএ-র একাধিক শরিক এবং বিজেপির বেশ কিছু নেতা আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ধর্মীয় প্রবিত্রতা রক্ষার নামে আসলে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করা হচ্ছে।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এদিন এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, 'জাতি-ধর্মের ভিত্তিতে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে, এই অপরাধ সংবিধানের পরিপন্থী। এই আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত এবং যারা এটি জারি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'
हमारा संविधान हर नागरिक को गारंटी देता है कि उसके साथ जाति, धर्म, भाषा या किसी अन्य आधार पर भेदभाव नहीं होगा।
— Priyanka Gandhi Vadra (@priyankagandhi) July 19, 2024
उत्तर प्रदेश में ठेलों, खोमचों और दुकानों पर उनके मालिकों के नाम का बोर्ड लगाने का विभाजनकारी आदेश हमारे संविधान, हमारे लोकतंत्र और हमारी साझी विरासत पर हमला है।
समाज…
বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। সংবিধানে সকলের অধিকার সমান। যোগী সরকার কিছু মানুষের রুটিরুজিতে থাবা বসাচ্ছে।
মুখ খুলেছেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নকভিও। তিনিও মায়াবতীর সুরেই বলেছেন, এরফলে ধর্মীয় বিভাজন বাড়বে। যোগী প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কঠোর নিন্দা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা লোকজন শক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাশোয়ান। আপত্তি তুলেছে বিজেপির আর এক শরিক নীতীশ কুমারের দল জনতা দল ইউনাইটেড। দলের সর্ব ভারতীয় মুখপাত্র কেসি ত্যাগি এবং চিরাগ এক সুরে বলেছেন, কাঁওয়ার যাত্রা বিহারেও মহা ধূমধাম করে হয়। দেশের একাধিক রাজ্যে এই সময় শিব ভক্রেরা বাবার মাথায় জল ঢালে। কোথাও কখনও এইভাবে খাবারের দোকানদের ভাগাভাগি করা হয়নি। এরফলে সম্প্রীতি নষ্ট হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপির শরিক চরণ সিংহের নাতি জয়ন্ত চৌধুরীর দল আরএলডি-ও যোগী সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে।
আইমিম-প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির বক্তব্য, আসলে হিন্দু-মুসলিম চিহ্নিত করা নয়, যোগী প্রশাসন নিশ্চিত করতে চাইছে, কোনও তীর্থযাত্রী যাতে মুসলিমদের কাছ থেকে কিছু না কেনেন। মুসলিমদের একঘরে করাই এই নির্দেশের লক্ষ্য।
যোগী প্রশাসন অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে সঠিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছে। তাদের বক্তব্য, এর ফলে ভুল বোঝাবুঝি বন্ধ হবে। এই ধরনের ধর্মীয় উৎসবের সময় অনেকেই ধর্ম পরিচয় গোপন করে ব্যবসা করে। সেটা এবার হবে না।
কাঁওয়ার যাত্রা হল শিবের মাথায় জল ঢালার তীর্থযাত্রা। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, গঙ্গোত্রী, গোমুখ এবং বিহারের সুরতানগঞ্জ এলাকা থেকে গঙ্গার জল নিয়ে তীর্থযাত্রীরা নিজেদের এলাকায় ফিরে গিয়ে স্থানীয় শিব মন্দিরে মহাদেবের মূর্তির মাথায় ঢালেন। বাংলায় যেটা বাঁক, হিন্দি বলয়ে সেটাই বাঁশের তৈরি কুঁওয়ার। প্রাচীন এই ধর্মীয় পার্বণ জনপ্রিয় হয় গত শতকের আটের দশকে বিশ্বহিন্দু পরিষদের উদ্যোগে। বাংলাতেও শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার তারকেশ্বরে হাজার হাজার মানুষ যাবেন শিবের মাথায় জল ঢালতে।