শেষ আপডেট: 1st February 2025 10:46
তৎকালীন অর্থমন্ত্রী টি. টি. কৃষ্ণমাচারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বাজেট ঘোষণার ঠিক আগেই, ১২ ফেব্রুয়ারি, তিনি পদত্যাগ করেন। ফলে সেই বছরের বাজেট পেশের গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ওপর। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, 'যাঁর এই বাজেট উপস্থাপন করার কথা ছিল, তিনি এখন আর দায়িত্বে নেই। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে এটি করতে হচ্ছে।'
মোরারজি দেশাই অর্থমন্ত্রী হিসেবে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি, মোট ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে অর্থনৈতিক নীতির প্রশ্নে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে ইন্দিরা তার কাছ থেকে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে নেন এবং ১৯৭০ সালে বাজেট ঘোষণা করেন।
১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি ক্ষমতায় এসে কংগ্রেসকে পরাজিত করে। নানা রাজনৈতিক সমীকরণের পর মোরারজি দেশাই প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু সরকারের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের ফলে অর্থমন্ত্রী সি. সুব্রহ্মণ্যম পদত্যাগ করেন। ফলে ১৯৭৮ সালে বাজেট পেশের দায়িত্ব নিতে হয় প্রধানমন্ত্রী দেশাইকেই।
১৯৮৪ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন রাজীব গান্ধী। তাঁর অর্থমন্ত্রী ছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কও ভাল ছিল, কিন্তু বোফর্স দুর্নীতি কেলেঙ্কারির পর সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। ভিপি সিং যখন নিজস্ব তদন্ত শুরু করেন, তখন রাজীব তাঁকে সরিয়ে দেন। ফলে ১৯৮৭ সালের বাজেটও প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকেই পেশ করতে হয়।
কয়েকজন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থেকেও বাজেট উপস্থাপনের সুযোগ পাননি।
হেমবতী নন্দন বহুগুণা: প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলালেও বাজেটের আগেই সরকার পড়ে যাওয়ায় তিনি বাজেট পেশ করতে পারেননি।
কে. সি. নিয়োগী: ১৯৫০-এর শেষ দিকে মাত্র এক মাস অর্থমন্ত্রী ছিলেন, ফলে বাজেট পেশের সুযোগ পাননি।
এন. ডি. তিওয়ারি: বাজেট পেশের আগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কংগ্রেস ও পরে বিজেপিতেও যোগ দেন এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ভারতের বাজেট ইতিহাস নানা চমক ও ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী। কখনো প্রধানমন্ত্রী নিজেই অর্থমন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, আবার কখনও অর্থমন্ত্রী হয়েও বাজেট পেশের সুযোগ পাননি কেউ কেউ। ইতিহাসের এই অধ্যায় বারবার প্রমাণ করেছে, রাজনীতি এবং অর্থনীতির মেলবন্ধন কতটা জটিল হতে পারে।