বম্বে হাই কোর্টে দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, ভারতীয় কারিগরদের যথাযথ স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে প্রাডাকে।
ছবি - গুগল
শেষ আপডেট: 4 July 2025 10:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিতর্ক সহজে পিছু ছাড়ছে না প্রাডার (Prada)। জল গড়াল আদালতের দোরগোড়া পর্যন্ত। মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী কোলাপুরি চপ্পলের (Kolhapuri) ডিজাইন কোনও স্বীকৃতি ছাড়াই অনুকরণ করে বিক্রির অভিযোগে ইতালীয় ফ্যাশন হাউস প্রাডা (Prada)-কে আদালতের দ্বারস্থ করা হল।
বম্বে হাই কোর্টে দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL), যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, ভারতীয় কারিগরদের যথাযথ স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে প্রাডাকে।
এই মামলা দায়ের করেছেন ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির আইনজীবী গণেশ হিংমিরে (Ganesh Hingmire)। তাঁর অভিযোগ, তাদের ডিজাইন ‘ভারতীয় অনুপ্রেরণায়’ তৈরি, প্রাডার এই স্বীকারোক্তি সামনে এলেও তা এসেছে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার তীব্র সমালোচনার পর। এছাড়া, এই স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়েছে এক ব্যক্তিগত সংস্থাকে, ভারত সরকারের GI রেজিস্ট্রি বিভাগ অথবা কোনও জনসাধারণের প্রতিনিধিকে নয়।
গণেশ হিংমিরের বক্তব্য, ‘প্রাডা এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনও দুঃখপ্রকাশ সংক্রান্ত বিবৃতি বা ক্ষতিপূরণ দেয়নি। শুধু হালকা চালে একটি বিবৃতি দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে।’ তিনি চান, আদালতের তত্ত্বাবধানে প্রাডা ও কারিগর সংগঠনগুলির মধ্যে সহযোগিতা, কো-ব্র্যান্ডিং, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং আয়ের অংশীদারিত্ব গড়ে উঠুক।
এই মামলার যুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি এই ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্যাশন হাউসদের আইনি বাধ্যবাধকতায় আনা না যায়, তাহলে তারা নিয়মিত ভারতের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন ট্যাগপ্রাপ্ত পণ্যের ডিজাইন ও সংস্কৃতি অনুকরণ করতে থাকবে।
আইনজীবীর বক্তব্য, ‘বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা কারিগরদের পক্ষে আলাদাভাবে কোনও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে মামলা চালানো অবাস্তব।’
সম্প্রতি, প্রাডার মিলান ফ্যাশন শো-তে ১.২ লক্ষ টাকা দামের একটি লেদার স্যান্ডাল প্রদর্শিত হয়, যা প্রায় হুবহু ভারতের কোলাপুরি চপ্পলের মতো দেখতে। ২০১৯ সালে এই জুতো GI (Geographical Indication) স্বীকৃতি পেয়েছে, ফলে এটি শুধু সাংস্কৃতিক নয়, আইনি সুরক্ষার অধীনেও রয়েছে।
কর্ণাটকের মন্ত্রী প্রিয়ঙ্ক খাড়গে এই বিতর্কে সরব হয়ে বলেন, যেসব কারিগররা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কোলাপুরি চপ্পল তৈরি করে আসছেন, তাঁদের পরিচয়, দক্ষতা ও অবদান স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।
তাঁর কথায়, ‘এই চপ্পলগুলি মূলত কর্ণাটকের আথানি, নিপ্পানি, চিক্কোদি, রাইবাগ, বেলগাভি, বাগলকোট ও ধারওয়াড় জেলার কারিগররা তৈরি করেন। আমরা যদি আন্তর্জাতিক বাজারে তাঁদের ডিজাইনের প্রসার ঘটাতে পারি, তবে ওঁরা শুধু কৃতিত্ব নয়, আরও ভাল দাম ও স্থায়ী কোনও জীবিকা অর্জন করতে পারবেন।’
পিটিশনে শুধু কোলাপুরি চপ্পল নয়, আরও অনেক ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প যেমন ব্রোকেড, ব্লক প্রিন্ট, বান্ধনী, শারারা, শাড়ি ইত্যাদির নকশা অনুকরণ করার জন্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডদের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।
সম্প্রতি ডি’ওর (Dior)-ও সমালোচনার মুখে পড়ে। প্যারিসে তাদের শো-তে একটি জ্যাকেট প্রদর্শিত হয়, যাতে ভারতের লখনউর মুখোশ কাজ ব্যবহৃত হয়েছে, অথচ ভারতীয় কারিগরদের কোনও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।