বিকানের করনি মাতা মন্দিরে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই অদ্ভুত মন্দিরে হাজারো ইঁদুরকে পূজা করা হয় পূর্বজদের অবতার হিসেবে।
করনি মাতার মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী মোদী।
শেষ আপডেট: 22 May 2025 12:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজস্থানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে ঘিরে সাজোসাজো রব রাজ্যজুড়ে। আজ, বহস্পতিবার, বিকানেরের কাছে দেশনোক শহরে অবস্থিত করনি মাতা মন্দিরে গেলেন তিনি। এই মন্দিরটি যেমন দেবী করনি মাতার দেবালয়, তেমনই এটি বিখ্যাত এর অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের জন্য। হাজার হাজার ইঁদুর কিলবিল করে এখানে, যাদের স্থানীয়রা পুজো করেন।
করনি মাতা মন্দির ট্রাস্টের সহ-সভাপতি সীতাদান ভারথের কথায়, 'এই ইঁদুরেরা কখনও কারও ক্ষতি করে না। এরা অন্যরকম প্রাণী। আমরা নিশ্চিত করি, যেন কোনও ভাবেই এদেরও কোনও ক্ষতি না হয়।'
ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর হিংলাজ মাতা মন্দির (যা এখন পাকিস্তানে অবস্থিত) যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই করনি মাতা মন্দির চারণ সম্প্রদায়ের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি এখন একটি প্রধান তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
মন্দিরটি রাজস্থানি শিল্পরীতিতে নির্মিত, যেখানে রয়েছে সূক্ষ্ম মার্বেল খোদাই ও রুপোর দরজা। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা এই মন্দির দেখতে ও ইঁদুরদের পুজো করতে আসেন। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাও।
প্রধানমন্ত্রী মোদী করনি মাতা মন্দিরে এই প্রথম সফর করলেন, এবং তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি এই মন্দিরে পা রাখলেন। দেশনোক শহরের জন্য এটি একটি গর্বের মুহূর্ত।
সীতাদান ভারথ জানান, 'দেশনোকের পরিচয় এই মন্দির। আজ পর্যন্ত কোনও প্রধানমন্ত্রী এখানে আসেননি। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর আমাদের জন্য গৌরবের।'
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, কারনি মাতা ছিলেন দেবী দুর্গার এক অবতার। ১৩৮৭ সালে রাজস্থানের চারণ সম্প্রদায়ে তাঁর জন্ম। শৈশবে তাঁর নাম ছিল ঋঘুবাই। পরবর্তীতে তাঁর বিয়ে হয় সাথিকা গ্রামের দেশপাজী চারণের সঙ্গে। কিন্তু সংসারজীবন থেকে বিমুখ হয়ে তিনি তাঁর ছোট বোন গুলাবকে স্বামীর সঙ্গে বিবাহ দেন এবং নিজে আধ্যাত্মিক সাধনায় ডুবে যান।
তাঁর জীবন ছিল ত্যাগ ও সমাজসেবায় ভরা। জনসাধারণের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ও সেবার জন্য তাঁকে ‘করনি মাতা’ নামে অভিহিত করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, তিনি ১৫১ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে ভক্তরা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজও সেখানে তাঁকে দেবীরূপে পুজো করা হয়।
তবে করনি মাতার এই মন্দিরকে ঘিরে যে বিষয়টি সবচেয়ে আকর্ষণীয়, তা হল এখানকার ইঁদুরেরা। স্থানীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই ইঁদুরগুলি করনি মাতার সৎপুত্র এবং তার বংশধরদের পুনর্জন্ম। তাঁদের জীবনের পুণ্যের ফলস্বরূপ তাঁরা ইঁদুররূপে জন্ম নিয়েছেন এবং পুজো পাচ্ছেন।
মন্দিরে হাজার হাজার ইঁদুর বাস করে, যাদের স্থানীয়রা ‘কাবা’ বলে ডাকে। এখানে একটি সাদা ইঁদুরও দেখা যায়, যার দেখা পাওয়া অত্যন্ত শুভ লক্ষণ বলে ধরা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে ইঁদুরদের খাওয়ান এবং পূজা করেন। অনেক সময়ে ইঁদুরে মুখ দেওয়া জল অসুস্থ ব্যক্তিদের খাওয়ানো হয়, যাতে তাঁরা সুস্থ হয়ে যান। এটা এক ধরনের অলৌকিক বিশ্বাস।
এই সফরের দিনই প্রধানমন্ত্রী দেশনোক রেলওয়ে স্টেশনের উদ্বোধনও করেন। উল্লেখ্য, বিকানের শহর পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রাজস্থানের মোট ১,০৫০ কিমি সীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে।